ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পর্যালোচনা

শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিশ্চিত হোক

রায়হান আহমেদ তপাদার, গবেষক ও কলামিস্ট, [email protected]
শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিশ্চিত হোক

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক কোনো ক্ষেত্রেই মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমাদের দেশের শ্রমিক-কর্মচারীরা এখনো বাঁচার মতো মজুরি, আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ অনুযায়ী অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারসহ অন্যান্য ন্যায়সংগত অধিকার, সামাজিক মর্যাদা ও সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত। গত কয়েক বছর ধরে মুক্তবাজার অর্থনীতির দাপট এবং মুনাফাখোর ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কারসাজিতে দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি বর্তমানে এমন অবস্থায় এসে পৌঁছেছে যে শ্রমিক-কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ এক অসহায় মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। বর্তমানে শ্রমজীবী সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব প্রকৃত শ্রমজীবী মানুষের হাতে নেই। ফলে কত অসহায় শ্রমিক শোষক সমাজের নিষ্ঠুর পীড়নে নিঃশেষিত হচ্ছে। আরো চিন্তার বিষয় হলো, বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার বড় অংশ শ্রমজীবী মানুষ, যাদের বেশির ভাগই আজও অধিকার বঞ্চিত। শ্রমিকরাই হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে খাদ্য-বস্ত্র উৎপাদন করেন, বাসস্থান নির্মাণ করেন। এই শ্রেণীর লোকদের কঠোর শারীরিক শ্রম ছাড়া নিজেদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করাই মুশকিল হয়ে পড়ে। পৃথিবীর অনেক দেশেই শ্রমিকদের অধিকার-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সনদ আজও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। যেসব দেশে কার্যকর হয়েছে, সেসব দেশে প্রায়ই তা লঙ্ঘিত হতে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের শ্রমিকের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত নয়, নানা ক্ষেত্রে নানাভাবে উপেক্ষিত। দেশের প্রচলিত আইনে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও অনেক শিশুকে কাজ করতে দেখা যায়। এখনো শ্রমিক শ্রেণি সামাজিকভাবে মর্যাদা অর্জন করতে পারেনি। অথচ কাজ কাজই, তা যে প্রকৃতিরই হোক না কেন। মর্যাদা ও অধিকারের প্রশ্নে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ ও দৈহিক কাজের মধ্যে পার্থক্য করা সভ্যতার পরিপন্থি। দরকার শ্রম ও শ্রমিকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। দেশে শ্রমিকদের জন্য যেসব আইন প্রণীত আছে, তা শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থরক্ষায় যথেষ্ট নয়। এসব আইনকে আরো যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। প্রতি বছর ১৮ লাখ শ্রমিক যুক্ত হচ্ছে শ্রমশক্তিতে। সে অনুযায়ী চাকরির সংস্থান না হওয়ায় অধিকাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। আনুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা কিছু সুযোগ-সুবিধা পেলেও অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা বঞ্চিত। সরকার শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সফল হয়নি এখনো। শ্রমিকের শ্রমে উৎপাদিত হয় ব্যবহার উপযোগী দ্রব্যসামগ্রী কিন্তু তা ভোগ করার অধিকার শ্রমিকের কতটুকু? অর্থনীতির প্রতিটি সূচকের উন্নতি ঘটানোর পেছনেই থাকে শ্রমিকের ঘাম। কিন্তু সবচেয়ে কম পুষ্টি, কম শিক্ষা, কম স্বাস্থ্য সুবিধা, কম বিশ্রাম, কম নিরাপত্তা যেন শ্রমিকদের জন্যই বরাদ্দ। অথচ সারা বিশ্বেই খাদ্য উৎপাদনসহ ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন বাড়ছে। বাংলাদেশেও জিডিপি বৃদ্ধির হার, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পরিমাণ, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ উন্নয়ন যতই বাড়ছে, তার সঙ্গে এ কথাটাও যুক্ত হয়ে থাকছে যে বাংলাদেশ সস্তা শ্রমিকের দেশ। শ্রমিকের মজুরি কম তার কারণ নাকি বাংলাদেশের শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা কম! কিন্তু উৎপাদনশীলতা শুধু শ্রমিকের শ্রমশক্তির ওপর নির্ভর করে না। মেশিন, ম্যানেজমেন্ট এবং ম্যানপাওয়ার এই তিনটিই আছে উৎপাদনশীলতার সঙ্গে। সবচেয়ে যা জরুরি তা হলো শ্রমের মর্যাদা নিশ্চিত করা। শ্রমিক শ্রেণি সামাজিকভাবে মর্যাদা অর্জন করতে পারেনি এখনো। ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের (আইটিইউসি) বৈশ্বিক অধিকার সূচক ২০২৩-এ বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের নাজুক চিত্রই উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, শ্রমজীবী মানুষের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বাজে ১০টি দেশের একটি বাংলাদেশ। বাকি ৯টি দেশ হলো- বেলারুশ, ইকুয়েডর, মিসর, এসওয়াতিনি, গুয়াতেমালা, মিয়ানমার, তিউনিসিয়া, ফিলিপাইন ও তুরস্ক। সম্প্রতি ১৪৯টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করে আইটিইউসি এবারের প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে যে বিষয়টির ওপর জোর দিয়েছে, সেটি হলো বাংলাদেশে শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের নিশ্চয়তা নেই। শ্রমিকদের অনিশ্চয়তার কারণ হিসেবে পশ্চাৎমুখী আইন, ইউনিয়ন গঠনে বাধা এবং শ্রমিকদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহিংসতার কথা বলা হয়েছে। ঔপনিবেশিক আমল থেকে শ্রমিকদের সংগঠন ও দরকষাকষি করার অধিকার ছিল, সেটাও অনেকটা সীমিত। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য গঠিত আটটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) এ শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার নেই। দেশের সবচেয়ে বড় শিল্প খাত তৈরি পোশাক কারখানায় ৪৫ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। এখানে ন্যূনতম মজুরির নিশ্চয়তা দেওয়া হলেও সেটি একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য অপ্রতুল। অনেক কারখানায় শ্রমিকদের নিয়মিত মজুরিও দেওয়া হয় না। এ নিয়ে তৈরি পোশাক শিল্পে মাঝেমধ্যেই অসন্তোষ দেখা যায়। এই তো গত কোরবানির ঈদের আগে ২৫ জুন মজুরি-ভাতা বকেয়া থাকায় গাজীপুরে প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড নামের একটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর শ্রমিকদের সঙ্গে তুলনা করলেও বাংলাদেশের শ্রমিকদের বেতন কম। রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ কিছুটা উন্নত হলেও বেশির ভাগ খাতের অবস্থা শোচনীয় বর্তমানে বাংলাদেশের শ্রমিকরা যে মজুরি পান, তা দিয়ে মানবিক জীবনযাপন করে শ্রমশক্তি পুনরুৎপাদন করা কঠিন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ মৌলিক চাহিদা পূরণে যতটা আয় প্রয়োজন, তার তুলনায় অর্ধেক আয় করেন দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা। বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ শ্রমিক কাজ করেন অনানুষ্ঠানিক খাতে। সেখানে ন্যূনতম মজুরি ও কর্মঘণ্টার বালাই নেই। কর্মপরিবেশ অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। যেখানে সরকারের নীতিনির্ধারকরা উন্নত ও সমৃদ্ধ অর্থনীতির স্বপ্ন দেখছেন, সেখানে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের বিকল্প নেই। যেসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হয়েছে, সেসব দেশে শ্রমিকদের জীবনমানও অনেক উন্নত। বাংলাদেশে ২০০৬ সালে যে শ্রম আইন প্রণীত হয়েছে, সেই আইনে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়। তদুপরি সরকার ও মালিক পক্ষ আইনকে উপেক্ষা করে শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করছে। আন্তর্জাতিক অনেক সূচকেই আমরা পেছনে আছি। তাই বলে সবচেয়ে বাজে ১০টি দেশের তালিকায় থাকা কোনোভাবে মানা যায় না। আমরা যদি প্রকৃতই দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যেতে চাই, শ্রমিকদের জীবনমানেরও উন্নয়ন জরুরি। শ্রমিকদের অর্ধাহারে কিংবা মানবেতর পরিবেশে রেখে তাঁদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত শ্রম বা সেবা পাওয়ার আশা করা যায় না। তাঁদের ন্যূনতম মজুরি, উপযুক্ত কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতেই হবে। তাছাড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের বেশির ভাগ শ্রমিকের চাকরির নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা নেই। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করা হয় না। তাদের ছুটি দেওয়া হয় না। একজন শ্রমিক হিসেবে নারী শ্রমিক শ্রম আইন অনুযায়ী সব অধিকারের সমান অংশীদার হলেও বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। নারী শ্রমিক অধ্যুষিত গার্মেন্ট ও অন্যান্য ক্ষুদ্র শিল্প ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে স্বল্প মজুরি, কর্মক্ষেত্রে নিম্ন পদমর্যাদা, খণ্ডকালীন নিয়োগ, যখন-তখন ছাঁটাই, অধিক শ্রমঘণ্টা, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নারী শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র থেকে সাপ্তাহিক ছুটি, মাতৃত্বকালীন ভাতা, ছুটি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। এ ছাড়া অস্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ, সুপেয় পানির অভাব, যৌন হয়রানিসহ অনেক সমস্যার মুখে তাদের পড়তে হয়। সমকাজে সমমজুরি না থাকা এবং নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য তো রয়েছে। এছাড়াও কৃষি ও গৃহস্থালির কাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকলেও তাঁদের কাজের কোনো স্বীকৃতি নেই। গৃহকর্মে নিয়োজিত নারীরা সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত। অথচ কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকা একটা মানুষের মৌলিক ও আইনগত অধিকার। করোনা মহামারি বিশ্বের মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ মানুষের জন্য কতটা প্রয়োজন। অথচ কর্মপরিবেশের দিকে আমরা নজর খুব কমই দিয়ে থাকি। নিরাপদ ও সুরক্ষিত কর্মপরিবেশ কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। মালিক ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর একযোগে কাজ করলে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এমন কঠিন কিছু নয়। একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ প্রদান এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশের অনুশীলন করা প্রত্যেক মালিকের নৈতিক ও আইনগত কর্তব্য। শ্রম আইনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশের নিশ্চয়তা বিধান করা। শ্রম আইন ও অন্যান্য বিষয়ে মালিকদেরই সচেতন হতে হবে। শিল্পে কর্মরত শ্রমিক সুস্থ ও নিরাপদ থাকলে শিল্পে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যয় কোনো খরচ নয় বরং বিনিয়োগ, এই উপলব্ধি বাংলা দেশের শিল্প মালিকদের মধ্যে এখনো গড়ে ওঠেনি। ফলে শ্রমিকরা এখনো কর্মক্ষেত্রে এবং কর্মক্ষেত্রের বাইরে উভয় অবস্থায়ই বিপদগ্রস্ত। আমাদের দেশের বার্ষিক গড় আয়ের বড় অংশ আসে শিল্প খাত থেকে। তাই এসব শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ জন্য শ্রমঘন এলাকায় শ্রমিকদের নিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ এবং স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর নয় এমন কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব। এ বিষয়ে যদি সঠিক ও যথাযথভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাহলে অব্যাহত ভাবে উৎপাদন বাড়বে, আয় বাড়বে এবং এগুলো প্রতিষ্ঠিত হলে কাজের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে। পৃথিবীতে সভ্যতার রূপায়ণ ঘটেছে শ্রমের বিনিময়ে। শ্রম করলেই শ্রমিক- এটা যেমন ঠিক, আবার শ্রমিক বলতে প্রথমে শিল্প শ্রমিকের ধারণা এলেও শ্রমজীবী মানুষের বিস্তৃতি আরো অনেক বেশি। কারণ, পৃথিবীর সব মানুষই কোনো না কোনো কাজ করে আর যেকোনো কাজ করতে গেলেই প্রয়োজন হয় শ্রমের। এই হিসাবে পৃথিবীর সব মানুষকেই শ্রমিক হিসেবে অভিহিত করা যায়। কায়িক শ্রম এবং মেধাশ্রম প্রদানকারী উভয়ই শ্রমিক। উভয় শ্রমের বিনিময়ে জীবনধারণ যারা করে তারাই শ্রমজীবী। এক্ষেত্রে উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত যেকোনো ব্যক্তি, সে কৃষি বা শিল্প যে ক্ষেত্রই হোক না কেন, তিনিই শ্রমিক। মানুষের শ্রম ও চেতনা এই দুই হলো সব সামাজিক সম্পদের উৎস। সুতরাং তাদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত