খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে মাছ

বেকারত্ব ঘুচিয়ে আনবে প্রবৃদ্ধি

প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ প্রবাদটি দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশের মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। এক সময় মাছ ছাড়া ভাত খাওয়ার কথা মানুষ কল্পনাও করতে পারত না। বর্তমানে মাছের প্রতি মানুষের আকর্ষণ কমে না গেলেও প্রাপ্তিতে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ তার চাহিদা অনুসারে খালে-বিলে মিঠা পানির মাছ পাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে চাষের মাছে প্রতিদিন ঝুঁকছে। মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে মৎস্য খাতের অবদান সর্বজন স্বীকৃত। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীরা উৎপাদন বাড়াতে মাছের খাবারের সঙ্গে খারাপ জিনিস মেশায়। এতে মাছের পুষ্টিগুণ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে। এ জন্যই নিরাপদ মাছ উৎপাদনের দিকে নজর দিয়েছে সরকার। মাছের খাবারের সঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানোর সঙ্গে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে জনগণ ও খামারিদের সচেতন করা হচ্ছে। জানা গেছে, ২০৪১ সালে বাংলাদেশে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫ লাখ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২৪ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ’ চলবে আগামী ৩০ জুলাই পর্যন্ত। উৎপাদিত মাছ যাতে মানব স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ রয়েছে। সে কারণে ২০২০ সালে মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ আইন করা হয়েছে।

স্মার্ট মৎস্য খাতে উৎপাদন, বিপণন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানির প্রক্রিয়ায় স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। পরীক্ষার মাধ্যমে বিদেশিদের চাহিদা অনুযায়ী মাছ রপ্তানি করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে মাছের জন্য যেসব খাদ্য উপাদান আসে, সেগুলোও পরীক্ষা করা হচ্ছে, যাতে মাছ উৎপাদন, আহরণ ও বিপণনে অস্বাস্থ্যকর কোনো উপাদান প্রবেশ করতে না পারে। শুধু মাছ উৎপাদন নয় বরং স্বাস্থ্যসম্মত ও খাবার উপযোগী নিরাপদ মাছ উৎপাদন সরকারের লক্ষ্য। আগে সরকারের লক্ষ্য ছিল মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি। এখন সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে দেশে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। পৃথিবীর ৫২টি দেশে বাংলাদেশের মাছ রপ্তানি হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৪ হাজার ৭৯০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। মাছ রপ্তানির মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। গ্রামাঞ্চলে মাছ উৎপাদনের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি সচল হচ্ছে।

মৎস্য খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১ কোটি ৯৫ লাখ মানুষ সম্পৃক্ত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে। ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে শীর্ষস্থানে রয়েছে। মিঠা পানি ও বদ্ধ জলাশয়ের মাছ উৎপাদনেও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য আহরণে বাংলাদেশ এখন তৃতীয়, বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে পঞ্চম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের জলসীমায় প্রচলিত ও অপ্রচলিত মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার কাজ করছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ও গবেষকরা ৩৯ প্রজাতির দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় মাছ ফিরিয়ে এনেছেন।

জাতীয় মৎস্য সপ্তাহে মুক্ত ও বদ্ধ জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্তকরণের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ২৩ জুলাই মধ্যরাতে উঠে গেছে সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। জেলেরা এখন সাগরে জাল ফেলার কাজে ব্যস্ত। দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় গত ২০ মে থেকে ৬৫ দিন সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। ২৩ জুলাই পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা ছিল। সামুদ্রিক মাছের প্রধান প্রজননকালে ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হচ্ছে মাছের নির্বিঘ্ন প্রজনন নিশ্চিত করে মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধি করা। মৎস্য চাষাবাদের মাধ্যমে শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে পুষ্টির চাহিদা পূরণই নয়, জাতীয় পর্যায়ে প্রবৃদ্ধি অর্জনে মৎস্য খাত অবদান রাখছে। সেই সঙ্গে দূর হচ্ছে বেকার সমস্য।