ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য

জনস্বার্থে নীতিমালা দরকার
মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য

রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র মোটরসাইকেলর উৎপাত বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। উঠতি বয়সি তরুণরা বা যুবকরা রাজপথে বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল ড্রাইভ করে। যে কারণে প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটে। সেই সঙ্গে ঘটে প্রাণহানি। আমাদের সমাজে উঠতি বয়সি যুবকরা আপনজনকে নিয়ে অনেক সময় দুঃসাহসিক অভিযানে নামে। ফলে ঘটে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণহানির ঘটনা। অনেকে মোটরসাইকেল নিয়ে দূরের কোথাও বেড়াতে যায়। ফলে দীর্ঘপথে সে অন্য যানবাহনের সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে সর্বশান্ত হয়। ব্যক্তি পর্যায়ে যারা মোটরসাইকেল চালায়, তাদের কথা না হয় বাদই দিলাম। তবে যারা রাইড শেয়ারিং করে তারা আরো বেশি বেপরোয়া। কোনো যাত্রী তার মোটরসাইকেলে যেতে না চাইলে কিংবা ভাড়া নিয়ে বিতর্কে যাত্রীকে মারধর করার ঘটনাও ঘটছে। যেহেতু রাজধানীতে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের দাঁড়ানোর কোনো নির্দিষ্ট স্থান নেই, সেকারণে তারা পুরো ঢাকা শহরকে তাদের স্ট্যান্ড মনে করে। রাইড শেয়ারে যারা মোটরসাইকেল চালান, তারা মূলত বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান করেন। অনেক যাত্রী অল্প সময়ে দূরের পথ যেতে রাইড শেয়ারিংয়ে মোটরসাইকেল ভাড়া নেন। সিএনজিচালিত অটোরিকশার চেয়ে তুলনামূলক কম ভাড়া হওয়ায় মানুষ এ বাহনটি ব্যবহার করে। তবে রাইড শেয়ারিং করার ক্ষেত্রে বিআরটিএ’র কোনো নীতিমালা আছে কি-না, সেটি স্পষ্ট নয়। তবে রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল চালকদের একটা নীতিমালার মধ্যে আনা উচিত। দিন দিন রাইড শেয়ারিং বাড়ছে। তবে রাইড শেয়ারিং করার মতো কি কি যোগ্যতা থাকা দরকার, সেটারও একটা নীতিমালা দরকার। বিআরটিএ ঈদের সময় রাইড শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে একটা নীতিমালা করে দেয়। অথচ বছরের অন্যান্য সময় রাইড শেয়ারিং বেপরোয়া গতি লাভ করে। বাংলাদেশে অনেক বেকার রাইড শেয়ারিং করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

এটা একদিকে ভালো, তবে আশঙ্কার কথা হলো, রাস্তায় বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালালে যেমন যাত্রীারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে রাস্তার লোকজনও পড়ে যায় ঝুঁকির মধ্যে। তাই বেকারত্ব এবং অল্প সময়ে সাশ্রয়ী মূল্যে মানুষ দূরের পথ পাড়ি দেয়। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে রাইড শেয়ারিংয়ের ব্যাপারে একটা নীতিমালা দরকার। রাস্তার বাম দিক ঘেঁষে যাত্রী তুলছে বা নামাচ্ছে- ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল। আবার পথচারীদের মাঝ দিয়ে বিকট শব্দ করে মোটরসাইকেল ছুটে যায় আপন গন্তব্যে। এতে পথচারীরা অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। মানুষের ভিড়ের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে মোটরসাইকেল। নগরীজুড়ে বেপরোয়াভাবে এভাবে চলছে বাহনটি। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনাও। রাস্তা পার হওয়া, গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে ছুটে আসা মোটরসাইকেলের কারণে প্রায় সময় বিপদে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের। পথচারীদের অভিযোগ, ট্রাফিক বিভাগের উদাসীনতা ও মোটরসাইকেল চালকের নিয়ম না মানার প্রবণতার কারণেই বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।

অন্যদিকে, মোটরসাইকেলের বেপোরোয়া গতি ও দুর্ঘটনার জন্য চালকদের অসচেতনতাকে দায়ী করে ট্রাফিক বিভাগ। সিগনাল পড়লে সব গাড়ি নিয়ম মেনে দাঁড়িয়ে পড়ে। তবে মোটরসাইকেল চালকরা প্রায়সময় করে এর উল্টো। নিয়মের তোয়াক্কা না করে একটু একটু করে এগিয়ে যায় মোড়ের মাঝখানে, এতে সৃষ্টি হয় জটলা। কখনও কখনও ধৈর্য হারিয়ে ফুটপাতে উঠে যাচ্ছে দুই চাকার এই যান। সুযোগ পেলে রং সাইড দিয়েও চালাচ্ছে গাড়ি। এভাবেই নগরজুড়ে বিপজ্জনকভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মোটরসাইকেল চালকরা। যারা বাইক চালান, তাদের জ্যামে বসা থাকার এতোটুকু ধৈর্য নেই। সুযোগ পেলে ফাঁকফোকর দিয়ে গাড়ি ঢুকিয়ে দেন। নিজের জীবনের কথাও চিন্তা করে না এরা। ট্রাফিক নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলাচলকারী মোটরসাইকেল চালকদের কাছে অনেকটাই অসহায় ট্রাফিক বিভাগ। যদিও ডিএমপি’র ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি ঠেকাতে আমরা কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে থাকি। অনেক সময় ট্রাফিক রুলস ভঙ্গ করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছি। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কথা তাদের নিজেদের সচেতনতা। মোটরসাইকেল চালকদের এমন ভুলের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। নিয়ম মেনে তারা সচেতন হলে কোনো সমস্যা হতো না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত