ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সর্বত্র ডেঙ্গু আতঙ্ক

শয্যা বাড়ানোর নির্দেশ প্রশংনীয়
সর্বত্র ডেঙ্গু আতঙ্ক

দেশের সর্বত্র ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে। কে কখন কীভাবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় সেটা সে নিজেও জানে না। এই জ্বর একদিকে মানুষের প্রাণহানি ঘটাচ্ছে, অন্যদিকে শরীরের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দিচ্ছে। এ ছাড়া ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপতালে শয্যা পাওয়া অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা খরচও অনেক বেশি। মশা থেকে বাঁচতে এই দুর্মূল্যের বাজারে রাখতে হচ্ছে বাড়তি বাজেট। সুযোগ বুঝে অসৎ ব্যবসায়ীরাও মশা নিরোধক সব পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন কয়েক গুণ। মশা থেকে বাঁচতে মশারি, কয়েল, অ্যারোসল, স্প্রে, লোশন, ক্রিম ও মশক প্রতিরোধী পণ্য কিনতে মানুষ ভিড় করছেন ফার্মেসি, সুপারশপ ও জেনারেল স্টোরগুলোতে। অনেক দোকান ঘুরেও মিলছে না মশা নিরোধক এসব পণ্য। আগে যেখানে একটি পরিবার মশা মারতে অ্যারোসলের একটি ক্যানেই মোটামুটি মাস চালিয়ে নিতে পারতেন, এখন সেখানে তিন বেলাই অ্যারোসল স্প্রে করতে হচ্ছে। মশারি ভেদে দাম বেড়েছে ২০০ টাকা পর্যন্ত।

কয়েক মাস আগেও নরমাল মশারির দাম ছিল ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। সেগুলো এখন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। ভালো মানের মশারি আগে ছিল এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকার মধ্যে, সেগুলো এখন দেড় থেকে ১৮শ’ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে মানুষের জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে মশা নিরোধ কয়েল কিংবা ওষুধ। আমাদের দেশের সর্বত্র ন্থানীয় সরকার বিভাগ রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে মশক নিধন। আগে শুধু সিটি করপোরেশন এলকায় মশার দাপট ছিল, এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মশা দাপট দেখাচ্ছে। সে কারণে মানুষের আতঙ্কও বাড়ছে। কিন্ত যাদের ওপর মশক নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব তারা যদি সেটা না করে তাহলে তার চেয়ে দুর্ভাগ্য আর হতে পারে না।

স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিটি স্তরে সরকার জনহিতকর কর্মকাণ্ডে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ বরাদ্দ দেয়। আবার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকেও কিছু টাকা কর হিসেবে পায়। ওই টাকা দিয়ে মশা নিধনে ওষুধ কেনা হয়। সেই ওষুধের মান নিয়েও নানা আলোচনা-সমালোচনা আছে। আবার যারা মশার ওষুধ ছিটানোর কাজে যেসব ব্যক্তি নিয়োজিত থাকে তারা নিয়মিত ওষুধ ছেটায় না। বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকার সব সরকারি হাসপাতালে আরও দেড় হাজার শয্যা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। নির্দেশনাটি প্রশংসনীয়। আগামী সাত দিনের মধ্যে এই অতিরিক্ত বেড প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং হাসপাতাল পরিচালকদের সঙ্গে আয়োজিত সভায় এই নির্দেশনা দেন তিনি। সভায় সারা দেশের বিভাগীয় পরিচালক, সিভিল সার্জনরা সংযুক্ত ছিলেন। ভয়াবহরূপে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্ত-মৃত্যুতে প্রায় প্রতিদিনই ছাড়াচ্ছে রেকর্ড।

এডিস মশাবাহিত রোগটির দাপট এখন দেশজুড়ে। এ পরিস্থিতি স্থানীয় প্রশাসনকে অধিকতর উদ্যোগী হতে হবে। মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। করেনাকালে মানুষকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্শেনায় যেভাবে প্রশাসন উদ্যোগী ও তৎপর হয়েছিল, এবারও যদি স্থানীয় প্রশাসন সেভাবে পদক্ষেপ নেয়, তাহলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তাহলে করোনার মতো ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য কি দেশের সরকারপ্রধানকে নির্দেশনা দিতে হবে! এসব প্রশ্ন এখন মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে। একটা সাধারণ পরিস্থতি সামাল দেয়ার জন্য যদি স্থানীয় প্রশাসনে সক্ষমতা গড়ে না ওঠে তাহলে সেটাও দুঃখজনক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত