তাৎপর্যময় পবিত্র আশুরা

করণীয় ও বর্জনীয় প্রতিপালিত হোক

প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মহররম হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস। এটি পবিত্র মাসের মধ্যে অন্যতম। হাদিস শরিফে এ মাসটিকে ‘শাহরুল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহর মাস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ মাসের ১০ তারিখেই পবিত্র আশুরা পালিত হয়ে থাকে। আর আজকেই সেই পবিত্র আশুরার দিন। এ মাসটির শিক্ষা ও তাৎপর্য মুসলিম জাহানের জন্য কল্যাণের। আমাদের উচিত বিশেষ করে এই দিনটির পবিত্রতা যাতে অক্ষুণ্ণ্ণ থাকে সেটি নিশ্চিত করা এবং যা কিছু বর্জনীয় তা পরিহার করা। ‘রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। যখন রমজানের রোজার বিধান নাজিল হয়, তখন থেকে আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়।’ (আবু দাউদ)।

হাদিসে এসেছে, ‘আশুরার দিনের রোজা পালনের মাধ্যমে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহতায়ালার কাছে বিগত বছরের গোনাহ মাফের প্রত্যাশা রেখেছেন।’ (মুসলিম)। আল্লাহতায়ালা আশুরার দিন মুসা আলাইহিস সালাম ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের অত্যাচারের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। আশুরা মোমিন মুসলমানকে আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি এ শিক্ষা দেয়। বিশেষ করে আশুরার দিনে কারবালায় ঘটে যাওয়া ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঘটনা ও আত্মত্যাগ, অন্যায় ও জুলুমের ব্যাপারে তার আপসহীন মনোভাব উম্মতে মুসলিমার জন্য এক অনন্য শিক্ষা। ঈমানি চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়া এবং আশুরার দিন রোজা রাখার পাশাপাশি নফল ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে দিনটি অতিবাহিত করা মুসলমানদের কর্তব্য।

আমাদের উচিত হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্মরণে কাল্পনিক তাজিয়া বা নকল কবর বানানো, তাজিয়া বানিয়ে তা কাঁধে বা যানবাহনে বহন করে মিছিলসহ সড়ক প্রদক্ষিণ করা, নকল এসব তাজিয়ার সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা এবং এসব তাজিয়া বা নকল কবরে নজরানা স্বরূপ অর্থ দান করা থেকে বিরত থাকা।

নিজেদের দেহে আঘাত বা রক্তাক্ত করা এবং শোক বা মাতম করা, যুদ্ধ সরঞ্জামে সজ্জিত হয়ে ঘোড়া নিয়ে প্রদর্শনী করা, হায় হুসেন, হায় আলী ইত্যাদি বলে বিলাপ, মাতম কিংবা মর্সিয়া ও শোকগাথা প্রদর্শনীর সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের বুকে-পেটে পিঠে ছুরি মেরে রক্তাক্ত করা থেকেও বিরত থাকা উচিত।

ফুল দিয়ে সাজানো এসব নকল তাজিয়া বা কবরে বাদ্যযন্ত্রের তালে প্রদর্শনী, আশুরায় শোক প্রকাশের জন্য নির্ধারিত কালো ও সবুজ রঙের বিশেষ পোশাক পরা এবং আশুরা বা ১০ মহররমকে কেন্দ্র করে এসব প্রচারণা থেকে বিরত থাকাও জরুরি।

মূল কথা হলো, এদিন তাজিয়া, মার্সিয়া, শোক পালন, এই দিনে বিয়েশাদিকে অমঙ্গলজনক মনে করা হয়। আসলে ইসলামি দৃষ্টিতে সেটা ঠিক নয়। পবিত্র আশুরার এই দিনে কারবালার শোকাবহ ঘটনাবহুল এ দিনটি মুসলমানদের কাছে ধর্মীয়ভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেইন (রা.) এবং তার পরিবার ও অনুসারীরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন। ত্যাগ ও শোকের প্রতীকের এ ঘটনা স্মরণ করে বিশ্ব মুসলিম যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করে থাকে।

একই সঙ্গে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সব ধরনের তাজিয়া মিছিল, শোভাযাত্রা ইত্যাদি বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তার পরও হয়তো এর বরখেলাপ হবে। আমদের প্রত্যাশা থাকবে, আশুরার পবিত্রতা রক্ষার জন্য যেসব নেক আমল আছে তা প্রতিপালন করা এবং যেগুলো করতে নিষেধ করা হয়েছে তা থেকে বিরত থাকা। আশুরার মহান শিক্ষা হচ্ছে ত্যাগ ও অন্যের কল্যাণের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়া।