স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্টার্টআপ

আসছে নতুন সম্ভাবনার হাতছানি

প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীতে শেষ হলো দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট। শনিবার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে শেখ হাসিনা বক্তৃতায় প্রযুক্তিগত উন্নয়নের এই অভিযাত্রা সম্পর্কে বলেন, “আমাদের তরুণ প্রজন্মই হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের প্রতিটি ক্ষেত্রে সবচেয়ে দক্ষ জনশক্তি।” ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি স্মার্ট দেশ হবে এবং তরুণ প্রজন্ম মেধাবী ও তাদের নতুন উদ্ভাবন বাস্তবায়নের ক্ষমতা রয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি উপজেলায় বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের সঙ্গে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস, ব্লক চেইন, রোবোটিক্স, বিগ ডাটা, মেডিক্যাল স্ক্রাইব, সাইবার নিরাপত্তার মতো উন্নত প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে।’

একই সঙ্গে তিনি বলেন, তার সরকারের লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে পাঁচটি ইউনিকর্ন (কমপক্ষে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি স্টার্টআপ কোম্পানিকে ইউনিকর্ন বলা হয়) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০টি ইউনিকর্ন স্টার্টআপ তৈরি করতে সহায়তা করা। প্রতিটি ইউনিকর্ন স্টার্টআপ লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করেছি। কিন্তু, শুরুতে কড়া সমালোচনা, অপমান ও হাস্যকর মন্তব্যের সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমনকি, যখনই কোনো কারিগরি সমস্যা বা ত্রুটি ছিল, তখনই একটি মহল আমাদের উপহাস করে বলেছিল, এটি ডিজিটাল বাংলাদেশের ফল।’

শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করার পর অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। অথচ এখন আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, আমরা দেশকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করেছি।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, মেধাবী এবং জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে উন্নত প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর জোর দিয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের সহায়তায় স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এ পর্যন্ত ৩০টি বিনিয়োগ সম্পন্ন করেছে এবং ‘শতবর্ষে শত আশা’ ক্যাম্পেইনের আওতায় ১০০টি স্টার্টআপ বিনিয়োগের পথে রয়েছে। এই স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে ১৫ লাখেরও বেশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে ৯২ লাখ লোক সেবা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে ৫৫ শতাংশ নারী।

তিনি বলেন, স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে এ পর্যন্ত ৯২ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে স্টার্টআপ নিয়ে সরকারের গৃহীত উদ্যোগগুলো অনেকদূর এগিয়েছে, যেখানে স্টার্টআপদের মধ্যে অনুদান প্রদানের জন্য ২০১৬ সালে ‘আইডিয়া প্রকল্প’ চালু করা হয়েছিল। এই প্রকল্প থেকে তার সরকার স্টার্টআপ সত্তাকে উৎসাহিত করতে ৩৮৫টি স্টার্টআপকে ৪০ কোটি টাকা দিয়েছে। এছাড়া এটুআই ইনোভেশন ফান্ড থেকে ২৬৩টি উদ্ভাবনের জন্য ৪৫ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। ‘ই-গভর্নমেন্ট মাস্টার প্ল্যান’ প্রণয়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে ১৮ কোটিরও বেশি মোবাইল সিম এবং ১৩ কোটিরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ই-কমার্স ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির ভিত্তিতে ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

ফ্রিল্যান্সাররা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করছে।’ স্টার্টআপ কী, সে সম্পর্কে চট করে বোঝার সুযোগ কম। অথচ এর বিচার-বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে বাংলাদেশের জন্য কত বড় প্রযুক্তিগত সম্ভাবনা অপেক্ষা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসব আশার বাণী প্রতিফলিত হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে। স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। আমরা উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের নাগরিক হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব- সে আশায় বুক বাঁধবে এ দেশের মানুষ।