ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অভিমত

লেভেল ক্রসিং পার হতে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে

মাহমুদ সালেহীন খান
লেভেল ক্রসিং পার হতে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে

দেশের বিভিন্ন লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গত ১০ বছরে তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কেবল যে অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়েই দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ও সম্পদহানি ঘটছে তা নয়, বৈধ ক্রসিংগুলোতেও হরহামেশা ঘটছে দুর্ঘটনা। রেলপথে ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে লেভেল ক্রসিংয়ে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ৮৩ শতাংশই ঘটছে রেলক্রসিংয়ে। পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে মিলে সারা দেশে ২ হাজার ৮৫৬টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৬১টিরই অনুমোদন নেই অর্থাৎ অবৈধ। আবার বৈধ ১ হাজার ৪৯৫টির মধ্যে ৬৩২টিতে নেই গেটম্যান। রেলের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কমছে না দুর্ঘটনার সংখ্যা। একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেভেল ক্রসিংয়ে মৃত্যুহার। যেন মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে লেভেল ক্রসিং। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত ৫ বছরে লেভেল ক্রসিংয়ে কাটা পড়ে মারা গেছে ১২০ জন। যদিও বেসরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশি। সড়কপথে দুর্ঘটনা নিয়ে বেশ আলোচনা হলেও রেলপথের অঘটন নিয়ে খুব কমই কথা হয়। অথচ ট্রেন দুর্ঘটনাও নিয়মিতভাবেই ঘটছে। তবে এ অবস্থার পরিবর্তনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। রেলের উন্নয়নে ব্যয়বহুল প্রকল্প নেওয়া হলেও ক্রসিংগুলো উপেক্ষিতই থেকে যায়। লেভেল ক্রসিং চার ধরনের, স্পেশাল, এ,বি এবং সি ক্যাটাগরি। স্পেশাল ক্যাটাগরিতে ২৪ ঘণ্টায় তিনজন করে গেটম্যান দায়িত্ব পালন করে। এ ক্যাটাগরিতে একই সময়ে দুইজন গেটম্যান দায়িত্ব পালন করে। বি ও সি ক্যাটাগরিতে কোনো গেটম্যান নেই। জাতীয় মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কের মধ্যে যে লেভেল ক্রসিং পড়েছে সেগুলোর মান এ প্লাস, বি প্লাস ও সি প্লাস। মহাসড়কের এ প্লাস গেটে তিনজন গেট-ম্যান, বি প্লাস গেটে দুইজন গেটম্যান দায়িত্ব পালন করে। আর কিছু লেভেল ক্রসিং আনম্যানড বা অরক্ষিত। রেলওয়ে গত এক দশকে রেললাইন তৈরি ও কেনাকাটায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়নে বরাদ্দ ছিল প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। সওজ প্রতিবছর ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করছে। কিন্তু রেলক্রসিংয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কেউ দায়িত্ব নিতে চাইছে না। লেভেল ক্রসিংগুলো অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে। বছরের পর বছর ধরে এগুলো অরক্ষিত থাকলেও দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ পরস্পরের ওপর দোষ চাপিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে।

দেশের লেভেল ক্রসিংগুলো কেন নিরাপদ করা যাচ্ছে না এবং একইসঙ্গে অবৈধগুলো কেন বন্ধ হচ্ছে না- এ প্রশ্নের সদুত্তর খোঁজা জরুরি। বিশ্বে লেভেল ক্রসিংজনিত দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তালিকার এক নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার জন্য পথচারী ও যানবাহনের চালকরাও দায় এড়াতে পারেন না। সাধারণত দুই কারণে রেলপথে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়- রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় ও ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে। ট্রেনের নিচে কাটা পড়লে রেল কর্তৃপক্ষ কোনো দায় নেয় না; উল্টো মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। অন্যদিকে, লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায় এড়ানোর চেষ্টা করা হয়।

পথের গুরুত্ব অনুযায়ী রেলক্রসিং বৈধতা দেওয়া দরকার, প্রয়োজনে তা দিয়ে সেখানে প্রহরী নিয়োগ দিতে হবে বাকি সবগুলো ক্রসিংয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নিয়োগ দিতে হবে। লেভেল ক্রসিং অতিক্রমকালে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। নিয়ম-কানুন ও আইন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে কর্তৃপক্ষ লেভেল ক্রসিংগুলো সুরক্ষিত করার পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত