ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আইন-আদালত পবিত্র অঙ্গন

মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সংবেদনশীলতা কাম্য
আইন-আদালত পবিত্র অঙ্গন

আইনের পরিভাষায় সব দেশের মানুষই সমান। সেইসঙ্গে বিচারপ্রাপ্তি তার একটা মৌলিক অধিকার। এই অধিকার খর্ব হলে সে সর্বোচ্চ বিচারাঙ্গনের দ্বারস্ত হতে পারে। সেইসঙ্গে কোনো মানুষ যদি কোনো অপরাধ করে তা হলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তবে বিচার বা বিচারের রায় মনোপুত না হলে সংক্ষুব্ধ হয়ে উচ্চতর আদালতের সম্মুখীন হওয়ার নজির তো রয়েছেই। আর কোনো একটা মামলার রায় দেয়ার আগেই ওই রায় সম্পর্কে আগাম একটা ধারণা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করাও সমীচিন নয়। কেননা বিচারক কি রায় দেবেন সেটা তিনি ছাড়া অন্য কেউ জানেন না। রায় ঘোষণা করার মালিক বিচারক। আদালতের বাইরের কোনো ব্যক্তি বিশেষ নন। আর ব্যক্তি বিশেষ যদি বিচারকের রায় নিয়ে মন্তব্য করেন তা হলে সেটা বিধিবহির্ভূত কি না সেটা আইনজ্ঞরাই ভালো জানেন। অধিকার আদায় কিংবা বিচারিক কার্যক্রমে উন্নত, উন্নয়নশীল কিংবা উন্নয়নকামী অথবা দরিদ্র দেশের মানুষের সমান প্রবেশ অধিকার রয়েছে। এখানে ব্যক্তি বিশেষের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পরিবারিক মর্যাদাকে আমলে নেয়া হয় না কিংবা বিচারের পর বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়। এটাই শিষ্টচার এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অনন্য নজির। কোনো মামলার রায় ঘোষণার আগে ওই মামলার বিচার নিয়ে কোনো প্রকার মন্তব্য করা হলে বিচারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার জৌলুস হারায়। আইন-আদালত নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিচারের রায় নিজের পক্ষে যাবে সেটা সব সময় ভাবার কোনো সুযোগ নেই। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার দিকে অগ্রসর হতে পারে। বক্তৃতা, বিবৃতি কিংবা কোনো গণমাধ্যমের কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার কোনো সুযোগ নেই। অথচ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে গতকাল আদালতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। আর তার আগের দিন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই রায় নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন সেটা পুনরায় উল্লেখ করা সমীচিন বলে মনে করি না। অথচ গত মঙ্গলবারই যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাবেক প্রেসিডেন্টকে ফৌজদারি অপরাধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি আদালতের রায় মেনে নিয়েছেন এবং তিনি তলবি নোটিশে আজ আদালতে যাবেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খরবে এসেছে। এই প্রথম নয়। বিগত মাত্র চার মাসের মধ্যে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ফৌজদারি অপরাধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত হলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে হস্তক্ষেপের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন জয়ী হন। এ নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে পরাজয় মানতে অস্বীকৃতি জানান তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বাইডেনের জয়ের সত্যায়নে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন বসে। সত্যায়ন প্রক্রিয়া ঠেকাতে ট্রাম্পের উসকানিতে তার সমর্থকরা কংগ্রেস ভবনে হামলা চালান। ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের দুই মাসের বেশি সময় পর তিনি এই বলে মিথ্যা ছড়িয়েছিলেন যে, নির্বাচনের ফলাফলে জালিয়াতি হয়েছে এবং প্রকৃতপক্ষে তিনিই জিতেছেন। এর আগে গত মার্চ ও জুনে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হন ট্রাম্প। এর মধ্যে মার্চে সাবেক পর্নো তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলকে ঘুষ দিয়ে মুখ বন্ধ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। আর জুনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সরকারি গোপন নথি’ নিজের কাছে রেখে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মেনে নিয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে আদালতের রায় নিয়ে তিনি কোনো বিরূপ মন্তব্য করেননি। আর এটাই হচ্ছে শিষ্টাচার। কেননা আদালতের রায় সম্পর্কে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সংবেদনশীলতা কাম্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত