ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঋণ জালিয়াতি রোধে নির্দেশনা

যত দ্রুত বাস্তবায়ন হবে ততই মঙ্গল
ঋণ জালিয়াতি রোধে নির্দেশনা

বাংলাদেশে ব্যাংকঋণ নিয়ে ফেরত দেয়ার সংস্কৃতি এখনো সেভাবে গড়ে উঠেনি। মানুষ প্রয়োজনে ঋণ নেবে এবং সময় মতো তা পরিশোধ করবে- এটাই হচ্ছে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ব্যাংক জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এবং মানুষকে ঋণ দেয়। ব্যাংকের নিজস্ব কোনো টাকা নেই। ব্যাংক গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে। বিনিময়ে গ্রাহককে কিছু সুদ দেয়। পক্ষান্তরে ব্যাংক সেই টাকা থেকে মানুষকে ঋণ দেয়।

বিনিময়ে সুদ আদায় করে। তবে গ্রাহককে দেয়া সুদ থেকে ঋণ গ্রহিতার কাছ থেকে আদায় করা সুদের হার বেশি। এই বাড়তি অর্থ দিয়ে ব্যাংক পরিচালনা ব্যয় করে নির্বাহ করে থাকে। আমাদের দেশে ঋণ নিয়ে দিতে হয় না- এমন একটা ধারণা অনেকেই পোষণ করে। এ কারণে মানুষ ঋণ খেলাপি হয় এবং ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ঋণ আদায় করতে গিয়ে নানা বিপত্তির মুখে পড়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতার সুবিধার জন্য ঋণের পুনঃতফসিল করা হয়। তার পরও মানুষ ঋণ খেলাপি হয়ে থাকে। আর একবার যদি কেউ ঋণ খেলাপি হয়, তা হলে সেটি উদ্ধার করা খুবই কঠিন। শুরু হয় ঋণ নিয়ে জালিয়াতি। আর এই ঋণ জালিয়াতি ঠেকাতে গ্রাহক ও জামিনদারের স্বাক্ষরের পাশাপাশি বৃদ্ধাঙুলির ছাপ (টিপসই) নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়, হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ মোতাবেক, সম্প্রতি আদালতে বেশ কিছু রিট পিটিশন দায়ের করা হচ্ছে, যেখানে ঋণগ্রহীতারা এবং ঋণের জামিনদাররা উভয়ে যথাক্রমে ঋণগ্রহণ এবং জামিন প্রদান-সংক্রান্ত দলিলাদিতে স্বাক্ষর দেননি বলে উল্লেখ করেছেন। ফলে, সংশ্লিষ্ট চার্জ ডকুমেন্টসমূহের সঠিকতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা এবং জামিনদারের স্বাক্ষরের ওপর নির্ভর করতে হয় বলে ঋণ আদায়ের আইনগত প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হচ্ছে।

এমন প্রেক্ষাপটে, ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা নিরসনে ঋণ প্রদানের উদ্দেশ্যে গৃহীত ও গৃহীতব্য চার্জ ডকুমেন্টসের বিষয়বস্তু ঋণগ্রহীতা এবং জামিনদাতাসহ সংশ্লিষ্ট তৃতীয় ব্যক্তি ও পক্ষকে পড়ে শুনানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে ডকুমেন্টসমূহে স্বাক্ষরের (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) পাশাপাশি তাদের উভয় হাতের বৃদ্ধাঙুলির ছাপ জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য সংরক্ষিত ডাটাবেজ থেকে যাচাই করতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করে অবিলম্বে কার্যকর করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করতে এবং নগদ টাকার প্রবাহ ধরে রাখার জন্য ঋণদান ও ঋণ পরিশোধ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনা একান্ত দরকার। কেন না, অর্থের প্রবাহ ধরে রাখার মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রের আয়-ব্যয় নির্বাহ করার ক্ষেত্রেও অর্থের প্রবাহ অক্ষুণ্ণ রাখা প্রয়োজন। আমাদের দেশের ব্যাকিং খাত যদি স্থিতিশীল হতো তাহলে আমাদের অর্থনীতিও আরো সচল হতো।

ব্যাংকের যেসব বকেয়া ঋণ রয়েছে, সেসব ঋণ যদি পুরোপুরি আদায় করা যেত, তাহলে আমাদের অর্থনীতি আরো বেশি চাঙা হতো। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশনা অবিলম্বে এবং শতভাগ বাস্তবায়িত হলে ব্যাংকের বকেয়া ঋণ আদায় কার্যক্রম আরো জোরদার হবে বলে আশা করা যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত