ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চাকরির ক্ষেত্রে সত্যায়ন

ভোগান্তি এড়াতে নীতিমালা জরুরি
চাকরির ক্ষেত্রে সত্যায়ন

সরকারি চাকরির আবেদনে কিংবা মৌখিক পরীক্ষার সময় ছবি ও শিক্ষা সনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্র সত্যায়ন করা অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়ে দঁড়িয়েছে। আর সত্যায়ন করার ক্ষমতা আছে কেবল প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাদের। তবে এমন অনেক চাকরিপ্রার্থী আছেন যাদের গেজেটেড কর্মকর্তা খুঁজে পেতে যথেষ্ঠ ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ফলে কাগজপত্র সত্যায়ন করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সে কারণে অনেকটা বাধ্য হয়ে তারা রাজধানীর নীলক্ষেত থেকে কোনো এক কর্মকর্তার নামে নকল সিল বানিয়ে নিজে সত্যায়ন করে নেন এবং অন্যকেও করে দেন। বেকার বন্ধুবান্ধবরা মিলেমিশে এই কাজটি করে থাকেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ পদ্ধতির এখন আর খুব একটা প্রয়োজন রয়েছে কি না তা নিয়ে চলছে নানা আলাপ-আলোচনা। সত্যায়নের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করছেন না অনেক বিশেষজ্ঞ। তাদের মতামত হচ্ছে বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধনসহ বহুভাবে বেশ সহজেই একজন মানুষের তথ্য যাচাই করা যায়। তাই সত্যায়ন প্রক্রিয়ার চলমান নিয়ম আর দরকার নেই। সরকারি চাকরির আবেদনকারীদের অভিযোগ, পরিচিত না হলে বেশিরভাগ প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা কাগজপত্র সত্যায়নই করতে চান না। আবার এটা নিয়ে বেশ বিরক্ত সত্যায়নকারী কর্মকর্তারাও। তাদের দাবি, এতে গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ নষ্ট হয় এবং সময়ের অপচয় হয়। অজানা মানুষের সত্যায়নের ক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকিও থেকে যায়। কেননা অনেকে আছেন যারা সত্যায়ন সংগ্রহ করে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নেন। পরবর্তী জীবনে আইন-আদালতের কাছে গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়ারও দরকার হয়ে পড়ে কখনো কখনো। এটা রীতিমতো একটা বিড়ম্বনার। চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, চাকরির আবেদনপত্রের সঙ্গে সাধারণত সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবিসহ সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের সত্যায়িত অনুলিপি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত অনুলিপি পাঠাতে বলা হয়। অথচ সত্যায়ন প্রক্রিয়াটা আমাদের মতো চাকরিপ্রার্থীদের জন্য এখন দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরে প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা অনেক থাকলেও গ্রামে তা একেবারেই কম। এটি সেখানকার চাকরিপ্রার্থীদের জন্য আরো বেশি দুর্ভোগের কারণ। কেননা ‘যতগুলো আবেদন করা হয় প্রায় সবগুলোতেই সত্যায়ন করতে হয়। একটা আবেদনের কাগজপত্র সত্যায়ন করতেই কষ্ট হয়ে যায়। সত্যায়ন করতে গিয়ে বিরক্ত হন প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তারাও। সত্যায়ন প্রক্রিয়া সরকারি সিদ্ধান্ত বলে এ বিষয়ে নিশ্চুপ থাকেন তারা। কর্মকর্তাদের ভাষ্য, সত্যায়ন করতে সময় অপচয় হয়। এছাড়া কাগজপত্রের ক্ষেত্রে কেউ প্রতারণার আশ্রয় নিলে দায় তার উপরে আসবে এমন ভয়ও থাকে। অনেক কর্মকর্তা মনে করেন এ যুগে পুরোনো আমলের এ পদ্ধতির আর প্রয়োজন নেই। যাচাই-বাছাইয়ের অনেক মাধ্যম, বাদ যেতে পারে ‘সত্যায়ন’ প্রক্রিয়া। ‘সত্যায়ন’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে সত্যতা নিশ্চিতকরণ। আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সাক্ষ্য দেওয়া, নিশ্চিতরূপে বলা, প্রমাণ করা, প্রকাশ করা ইত্যাদি। চাকরির আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া কাগজপত্র আসল কি না অথবা আসল ডকুমেন্টের অনুলিপি কি না, তা নিশ্চিত করার জন্যই মূলত সত্যায়িত করতে বলা হয়। চাকরির আগে সত্যায়ন নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ না করে নিয়োগপত্র দেয়ার আগে সত্যায়নকে বেশি গুরুত্ব দেয়া যেতে পারে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিক না থাকলে তো এমনিতেই নিয়োগদান বন্ধ থাকে। তাই চূড়ান্ত নিয়োগের আগে মূল সনদপত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি সত্যায়ন প্রক্রিয়াটি কঠোরভাবে অনুস্মরণ করলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। সত্যায়ন নিয়ে একটা নীতিমালা প্রণয়ন করা না হলে চাকরিপ্রার্থৗ ও প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাদের ভোগান্তি দূর হবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত