ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উদ্বোধনের অপেক্ষায় বঙ্গবন্ধু টানেল

চট্টগ্রাম হবে ‘ওয়ান সিটি উইথ টু টাউনস’
উদ্বোধনের অপেক্ষায় বঙ্গবন্ধু টানেল

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণকাজ ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। আর কয়েক দিন পর এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। বাংলাদেশ প্রবেশ করবে টানেল যুগে। যোগাযোগ উন্নয়নে ঘটবে এক বিশাল পরিবর্তন। দেশের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে এই টানেলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যাতায়াতের ক্ষেত্রে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানেও এগিয়ে আসবে এই টানেলটি। সাশ্রয় হবে কর্মঘণ্টা, কাজে আসবে গতিশীলতা। মানুষের জীবন হবে স্বাচ্ছন্দ্যময়। বেড়ে যাবে ওই অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন। বাড়বে জাতীয় প্রবৃদ্ধি। উন্নত যোগাযোগের ক্ষেত্রে যোগ হবে আরেকটি মাইলপলক। আমরা এরই মধ্যে মেট্রোরেল, পাতাল রেল ও এলিভেটেট এক্সপ্রেসের যুগে প্রবেশ করেছি। পদ্মা নদীর ওপর সড়ক ও রেলপথ চালুর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে শুধু উপরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে বিশ্বে বাংলাদেশের গুরুত্ব আরো বেড়ে যাবে। আগামী মাসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলটি উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আমাদের দেশের শ্রমিক ও প্রকৌশলীরা বহুল প্রতীক্ষিত টানেলটি উদ্বোধনের জন্য শেষ পর্যায়ের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর আগেই এই স্বপ্নের প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে। টানেলে দুটি টিউবই প্রস্তুত। ‘সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হওয়ার পর উদ্বোধনের তারিখ জানিয়ে দেবে মন্ত্রণালয়। টানেলটি আসলে চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি উইথ টু টাউনস’-এ পরিণত করবে। মাল্টিলেন টানেলটি সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরকে আনোয়ারা উপজেলার সাথে সংযুক্ত করবে, যা সরাসরি কক্সবাজারকে চট্টগ্রামের সাথে সংযুক্ত করবে। প্রকল্পের বিবরণে বলা হয়েছে, ১১ মিটার ব্যবধানে দুটি টিউব নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে ভারী যানবাহন সহজে টানেলের মধ্যদিয়ে যেতে পারে। টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩.৪০ কিলোমিটার। ৫.৩৫ কিলোমিটারের একটি অ্যাপ্রোচ রোডসহ ৭৪০ মিটার একটি সেতু মূল বন্দর নগরী এবং নদীর পশ্চিম প্রান্তকে সংযুক্ত করেছে। প্রকল্পের অংশ হিসেবে প্রধান বন্দর নগরী ও কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম পাশকে নদীর পূর্ব দিকে এবং আনোয়ারা উপজেলার সাথে যুক্ত করে মোট ৭৪০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউবের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত করবে এবং দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে। এই টানেলে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে যানবাহন চলবে। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এবং বাকি অংশের অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নবনির্বাচিত সভাপতি এবং চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম জানিয়েছেন, টানেলটি চালু হলে এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জন্য একটি গেম চেঞ্জার হবে, যা দেশের বাকি অংশের সাথে যোগাযোগের সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত