প্রবাসে বসে মিলবে স্মার্টকার্ড

ডিজিটাল বাংলাদেশের আরেক সংস্করণ

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রবাসে বসেই স্মার্টকার্ড পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশিরা। ফলে তাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর হওয়ার পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদক্ষেপ আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। সেইসঙ্গে প্রবাস জীবনে বাংলাদেশিদের মর্যাদা ও আত্মসম্মান আরো বাড়বে। আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করার জন্য যে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, প্রবাসে বসে স্মার্টকার্ড বিতরণ তারই একটি অধ্যায় হয়ে থাকবে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম আরো সহজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে যারা দেশে থাকতে লেমোনেটিং এনআইডি নিয়েছিলেন, তাদের স্মার্টকার্ড প্রবাসে পৌঁছে দেবে সংস্থাটি। নতুন করে যারা আবেদন করবেন তাদের ভুল সংশোধনেরও সুযোগ থাকছে প্রবাসে বসেই। সম্প্রতি এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের জন্য এনআইডি মহাপরিচালক একেএম হুমায়ূন কবীর ইসির সিস্টেম ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। জানা গেছে, দেশে থাকতে যারা ভোটার হয়ে লেমোনেটিং এনআইডি নিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের মাধ্যমে তালিকা সংগ্রহ করে তাদের স্মার্ট এনআইডি কার্ড দেওয়া যেতে পারে। তবে যারা ০ আঙুলের ছাপ এবং আইরিশ দেননি তাদের ক্ষেত্রে কি প্রক্রিয়ায় তা সংগ্রহ করা যায়, সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান এনআইডি কার্যক্রমে কারো আবেদন অসম্পূর্ণ থাকলে বা ভুল হলে সেই আবেদন বাতিল করা হতো। এতে সংশ্লিষ্ট নাগরিকের দেশে আসা ছাড়া পথ ছিল না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীর আবেদন বাতিল না করে সংশোধনের সুযোগ রাখবে ইসি। তদন্ত প্রক্রিয়া সহজীকরণের উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে প্রয়োজনীয় দলিলাদি সরবরাহ করতে দেরি হলে বা অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হলে সেগুলোর ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন অফিসার কর্তৃক সেই আবেদন বাতিল না করে ইনভেস্টিগেশন পেন্ডিং নামে একটি অপশন তৈরি করা হচ্ছে সফটওয়্যারে। এর ফলে প্রযোজ্য দলিলাদি সরবরাহ করা হলে সেগুলোকে পুনরায় প্রক্রিয়াকরণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করা হবে। এদিকে, প্রবাসীরা যখন সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে আবেদন করেন, সে সময় কন্টাক্ট পারসনের কেবল একটি ফোন/মোবাইল নম্বর দেওয়ার সুযোগ থাকে। এতে অনেক সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পাওয়া যায় না। তাই এখন থেকে একাধিক ফোন/মোবাইল নম্বর নেবে সংস্থাটি। অন্যদিকে এনআইডি সিস্টেম থেকে দেশে বসবাসরত নাগরিকরা যেমন মোবাইলে খুদে বার্তায় আবেদন সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেন। সেই ব্যবস্থা প্রবাসীদের জন্যও রাখার বিবেচনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, প্রবাসে এনআইডি কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের উপায়ও খুঁজছে ইসি। বর্তমানে দূতাবাসের মাধ্যমে কার্যক্রমটি পরিচালিত হচ্ছে। তাই এনআইডি উইং হতে প্রেরিত এনআইডি কার্ডসমূহ সংশ্লিষ্ট দূতাবাস/হাইকমিশন/কনস্যুলেট কর্তৃক বুঝে পাওয়া বা রিসিভিং হিস্ট্রিরি রাখার জন্য সিস্টেম ডেভেলপ করা; রেজিস্ট্রার পদ্ধতি অনুসরণ করা; সঠিক ব্যক্তিকেই যে তার এনআইডি প্রদান করা হলো সেজন্য আলাদা সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে আঙুলের ছাপ প্রদানপূর্বক রিসিভ করানোর ব্যবস্থা করা; নাগরিকদের সুবিধার্থে বিদেশে ভিন্ন ভিন্ন এলাকা নির্ধারণ করে পূর্ব ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এনআইডি কার্ড বিতরণের ব্যবস্থা করা; কেউ কেউ স্থায়ীভাবে দেশে ফেরত আসা তাদের তালিকা করে সেই এনআইডি কার্ডগুলো দেশে এনআইডি উইংকে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করার কথাও ভাবছে ইসি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে এই উদ্যোগটি হাতে নেয়। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনের ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর ইউএই প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর সৌদি আবর, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপে থাকা বাংলাদেশিদের জন্যও এ সুযোগ চালু করা হয়। সে সময় অনলাইনে আবেদন নিয়ে সেই আবেদন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপজেলা থেকে যাচাই করে সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্ট দেশে দূতাবাস থেকে এনআইডি সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। এরপর করোনা মহামারির কারণে থমকে যায় দূতাবাসের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই কার্যক্রমকে ফের উজ্জীবিত করেন। এক্ষেত্রে আগের আবেদনগুলো পাশ কাটিয়ে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেন তারা। এতে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। দেশটিতে দুটি দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এনআইডি সেবা দেওয়া হচ্ছে। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ বিষয়ে বলেছেন, আমিরাতে সফল কার্যক্রমের পর প্রবাসীদের আধিক্য রয়েছে এমন ৪০টি দেশে এনআইডি সেবা নিয়ে যেতে চায় তার কমিশন।