ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নজরদারিত্বে সন্তানের গতিবিধি

গড়ে তুলতে হবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক
নজরদারিত্বে সন্তানের গতিবিধি

আমাদের সমাজে সবাই ব্যস্ত। কারো প্রতি কারো নজর দেয়ার এতটুকু সময় নেই। কর্মস্থলে পিতা-মাতা ব্যস্ত সময় কাটান। ফলে সংসারের দায়িত্ব অন্যরা পালন করেন। পিতা-মাতা সন্তানের প্রতি যতটা যত্নবান ও দায়িত্বপরায়ণ অন্য কেউ তেমনটি নন। পিতা-মাতা অনেক সময় তাদের সন্তানদের খোঁজখবর নেয়ার সময় পান না। সন্তানের প্রতিদিনের গতিবিধি তাদের নজরে থাকে না। মাস গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিংয়ের ফি পরিশোধ করার মধ্য দিয়ে অভিভাবকরা তাদের দায়িত্ব শেষ করতে পারেন না। সন্তানদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তাদের খাদ্যাভাস, ঘুম ও তাদের বন্ধু-বান্ধবদের প্রতিও নজর রাখতে হবে। সন্তানের প্রতিদিনের কার্যকলাপ মনিটরিং না করলে তাদের বিপদগামী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সান্নিধ্য না পেয়ে সন্তান অনেক সময় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং এক সময় একাকীত্ব জীবন বেঁছে নেয়। আর তখনই মাদকের কবলে পড়ে যায় আদরের সন্তান। আগে ধারণা ছিল কেবল ছেলে-সন্তানরাই মাদকাসক্ত জীবনযাপন করে। তবে এ ধারণা এখন পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন মেয়ে সন্তানরাও মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে। অভিভাবক ও সন্তানের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা গেলে সন্তানরা তার অভিভাবকদের কাছে তাদের চাওয়া-পাওয়া, ইচ্ছা-অনিচ্ছার কথা বলতে দ্বিধাবোধ করবে না। অভিভাবকদের এমনভাবে দায়িত্ব পালন করা উচিত যাতে সন্তানরা অভিভাবকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় এবং তাদের বন্ধু মনে করে। আমাদের সমাজে বিশেষ করে কিশোর বয়সি সন্তানরা নানা রকম অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। শহরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং নামক অপরাধী চক্র। পাড়া মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের দাপটে মানুষ অতিষ্ঠ। যে কোনো সময় সংঘটিত হচ্ছে খুনাখুনি, রক্তারক্তি। তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ডের কারণে নিরীহ সন্তানদের নিয়ে অভিভাবকরা পড়েছেন মহা সংকটে। কিশোরদের এখন আর খেলার মাঠ কিংবা লাইব্রেরিতে অবসর সময় দেখা যায় না। টেলিভিশনের বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের প্রতিও তাদের মনোযোগ কম। তাদের চোখ থাকে মোবাইল ফোনের স্কিনে। সন্তানদের খোঁজখবর না রাখার জন্য তারা নানা রকম উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে। সন্তান কোথায় যাচ্ছে? কী করছে? কখন ফিরছে? সবই খোঁজ রাখতে হবে। সন্তানদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এসব না করার কারণে কিশোর গ্যাং তৈরি হতে পারে। পুলিশর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে কিশোর গ্যাং এবং এ ধরনের চক্র তৈরিতে কেউ সহযোগিতা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিশোর গ্যাংদের সমাজের মূল স্রোতে আনা হবে। আর যদি কেউ না আসে তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক এমন মন্তব্য করেন। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরে এ মতবিনিময় সভায় তিনি সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের দায়িত্বশীল আচরণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, জনগণের সেবক হতে হলে বন্ধু হতে হয়। বন্ধু হয়েই আপনাদের সেবা দিতে চাই। তবে আমরা সবার বন্ধু হতে চাই না। মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব নয়। মাদক বিষয়ে কেএমপি কমিশনার বলেন, মাদক বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা। আমাদের দেশেও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, অন্যান্য দেশেও একই অবস্থা। শুধু নিম্নবিত্ত নয়, উচ্চবিত্তসহ সব সেক্টরে মাদকের করাল গ্রাস রয়েছে। মাদক ব্যবসা করে অনেকে ফুলে ফেঁপে যাচ্ছে। এমন রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, কোনো পুলিশ সদস্য যদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাদকের সঙ্গে যুক্ত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদক ব্যবসায়ীর চেয়ে সাধারণ মানুষের সংখ্যা বেশি। সবাই মিলে মাদকের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলব। পুলিশের এ কর্মকর্তা তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যদি তার মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে পারেন তাহলে তিনি সাধারণ মানুষের সাধুবাদ পাবেন। কেবল খুলনা নয়, সারা দেশের পুলিশ প্রশাসন যদি কিশোর অপরাধ ও মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করে তাহলে আমাদের যুব সমাজ সুস্থ জীবনযাপনে অভ্যস্থ হবে। তারা দেশের আগামী দিনে সুনাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারবে। বাংলাদেশ একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত