বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা ও কিছু কথা

এসএম রাহমান জিকু

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বন্দরনগরী চট্টগ্রাম শহরকে পরিচালনাকারী দুটি বৃহৎ সংস্থা হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা যেন আজন্ম অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে নগরবাসীর কাছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে, সিডিএকে দোষারোপ করছে চসিক। আবার চসিকের কথায় একমত পোষণ করছে না সিডিএ। চসিক এবং সিডিএর মধ্যে সবসময়ই বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিরাজ করে। সিডিএর অভিযোগ, চসিককে বারাইপাড়া খাল খনন এবং সংস্কার করতে বলা হয়েছে। কিন্তু গত ১০ বছরেও চসিক তা করে দেখাতে পারেনি। চসিকের অভিযোগ, সিডিএকে ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়েছে। কিন্তু সিডিএ সেটার বাস্তবায়ন করতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং তৎকালীন সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুস সালামের একান্ত প্রচেষ্টার কারণে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের বাজেট পাস হয়। ওই ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বাজেটের সময়কাল ছিল চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। কিন্তু এই বাজেটের সময়কাল পেরিয়ে গেলেও তা বাস্তবায়নের কোনো প্রতিকার মেলেনি। ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বাজেট পাস হলেও বাস্তবে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা আসছে। সিডিএ বিবরণীতে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী জানান, ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার কাজ শেষে বাকি খাল উদ্ধার করতে হলে বেশিরভাগ জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে। আর এ অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় তৎকালীন দেড়গুণের জায়গায় তিনগুণ হয়েছে। যেহেতু জায়গার দাম বেড়ে গেছে, স্বাভাবিকভাবে আবার নতুন প্রজেক্ট হয়েছে। এই নতুন প্রজেক্টের অর্থমূল্য সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা হিসাব করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এই নতুন প্রজেক্ট এখনও পাস হয়নি। মূলত ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বাজেটের বাকি টাকা না আসায় জলাবদ্ধতা নিরসন কাজের মন্থরগতি হয়েছে। এরপর বলা যায় যে, সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট যদি পাস না হয়, তবে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার সম্পন্নকৃত কাজের সুফল খুঁজে পাওয়া হয়তো সম্ভব হবে না। অর্থাৎ আগের বাজেটের সঙ্গে বর্তমান বাজেটের সমমুখী সম্পর্ক না হলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা অভিশাপ কখনোই লাঘব হবে না। সিডিএ এবং চসিকের এই বৈপরীত্য শুধু বাজেট বাস্তবায়ন, জলাবদ্ধতা নিরসনগত সমস্যা নয়। তাদের মূল সমস্যা হচ্ছে অর্থনৈতিক সমস্যা এবং যেখানে মনস্তাত্ত্বিক কোন্দলগত সমস্যাও বিরাজ করছে। যেহেতু চসিক এবং সিডিএ দুই সংস্থার প্রধান সমন্বয়কারী হলেন রাজনৈতিক দলের নেতা। তাই তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ মনস্তাত্ত্বিক কোন্দল বিরাজ করে। আবার ওই দুই সংস্থার মধ্যেও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা, যা আদৌও নিরসন হবে কি না? এমন প্রশ্ন নগরবাসীর মনে থেকেই যায়। এই জলাবদ্ধতা নিরসন সমস্যার সমাধান সন্দিহান থেকে যায়। কারণ এই যে সমস্যাগুলো দীর্ঘমেয়াদি, যা মুখের আদলে বলা হলেও বাস্তবায়ন খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি এই প্রজেক্টের কাজ চসিককে দেওয়া হতো, তাদের নালা-নর্দমা করার অভিজ্ঞতা আছে, তারা করত। তারা এই জলাবদ্ধতা নিরসন প্রজেক্টের কাজ করলে হয়তো দ্রুত সম্পন্ন করতে পারত। আবার বাস্তবে করতে গেলে হয়তো তা বলা যায় না। আবার এই বিষয়ে সিডিএর অভিযোগের তীর ঘেঁষে, বরাবরই সিডিএর অভিযোগ, চসিক গত ১০ বছরেও বারাইপাড়া খাল খনন ও সংস্কার করতে পারেনি, তারা আবার এত বড় বাজেট কীভাবে পাস করবে? মূল কথা হচ্ছে আমাদের জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করে সিডিএ, চসিক, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ওয়াসা। কাজ হচ্ছে, একটা আর সংস্থা হচ্ছে চারটি। সবাই যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে, তাহলে এ সমস্যা কেন? তারা কি আদৌ সমন্বয়ের ভেতরে কাজ করে, নাকি সমন্বয়হীনতার মধ্য দিয়ে কাজ করে? এসব প্রশ্ন এখন নগরবাসীর মনে দানা বেঁধে আছে। এই জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনের দায়িত্ব যেকোনো একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া উচিত। নয়তো হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করলেও চট্টগ্রাম শহরে এই জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হবে না। সর্বোপরি, গার্মেন্টস রিসাইকেল প্ল্যান বাস্তবায়ন, কাজের ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব, নালা-নর্দমা ও ড্রেনে মানুষের ময়লা ফেলা ইত্যাদি যদি শেষ করতে না পারি, তাহলে আমরা কখনোই জলাবদ্ধতা অভিশাপমুক্ত হতে পারব না।

শিক্ষার্থী

চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম