পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস

শুধু কোচিং সেন্টার নয়, বন্ধ করতে হবে উৎস

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আগামী ১৭ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আগামী ১৪ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৪৩ দিন কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ও নকলমুক্ত পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। এসব কোচিং সেন্টারে যারা অগ্রিম টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছে, তারা তো কোচিংয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে না এ সময়টিতে। প্রশ্ন হচ্ছে- আমাদের দেশে যখন কোনো পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার্থীদের পাস করানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কতজন শিক্ষার্থী পাস করল, তা নিয়ে চলে চুলচেরা বিশ্লেষণ। যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যত বেশি শিক্ষার্থী পাস করবে, সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তত বেশি ভালো লেখাপড়া হয় বলে মানুষ ধরে নেন। বছরের অধিকাংশ সময় বিশেষ করে কলেজের ক্লাসে শিক্ষকরা পাঠদানের পরিবর্তে অন্য কোনো প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতেই বেশি পছন্দ করেন। গল্প-গুজব করে সময় কাটানোর নেপথ্যের কারণ হচ্ছে, ওই শিক্ষক ক্লাসে পড়ানোর আগে নিজে ওই বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোনো ধারণা নিয়ে আসেননি। ফলে তারা নিজেরাই জানেন না, বিষয়বস্তু কী এবং তিনি কী পড়াবেন। শিক্ষক পরের দিন ক্লাসে কী পড়াবেন, সেটা যদি তিনি আগের দিন পড়াশোনা না করে ক্লাসে যান, তাহলে শিক্ষার্থীদের কাছে পড়ালেখা বোধগম্য হবে না। পরীক্ষার হলে যদি কোনো শিক্ষার্থী আনুকূল্য পায়, তাহলে পরীক্ষার ফলাফল কিছুটা হলেও ভালো হবে। আর এই ভালো ফলাফল অর্জনের জন্য নানা রকম অসদুপায় অবলম্বন করা হয়।

অতীতে দেখা গেছে, শুধু অর্থের বিনিমিয়ে কোনো কোনো পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিয়েছেন। প্রশ্নপত্র তৈরি, ছাপা, প্যাকেট, মজুত ও বিতরণব্যবস্থার সঙ্গে যারা থাকেন, মূলত তাদের কাছ থেকেই তো প্রশ্নফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কোচিং সেন্টারগুলো এই সুযোগটি গ্রহণ করে। তারা হয়তো প্রশ্নপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের এই অপতৎপরতা ‘সফল’ হলেই তারা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র তাদের নিজস্ব ছাত্রছাত্রীদের কাছে সরবরাহ করে। কোচিং সেন্টারগুলো প্রশ্ন প্রণয়ন, ছাপা কিংবা সংরক্ষণের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। যারা সম্পৃক্ত, তাদের কাছ থেকে অবৈধ লেনদেনের বিনিময়ে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতে পারে। কোচিং সেন্টারে বসেই যে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা যায়- এমন একটা ধারণা রয়েছে। তবে এটাও ঠিক নয়। এখন প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে যে কোনো স্থানে বসেই প্রশ্নপত্র হোক, কিংবা অন্য যে কোনো তথ্য ফাঁস করা সম্ভব। সরকার মূল স্থানে হাত না দিয়ে ঢালাওভাবে কোচিং সেন্টারের ওপর চড়াও হচ্ছে। প্রশ্নপত্রের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট, তাদের অপতৎপরতা রোধ করলেই তো আর প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা থাকে না! এদিকে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে বিক্ষোভ, রাস্তা অবরোধ করেছে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার আগমুহূর্তে শিক্ষার্থীদের এমন কর্মকাণ্ড শোভনীয় নয়। পরীক্ষা গ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আর এখন পরীক্ষা পেছালে আবার নতুন করে প্রস্তুতি নিতে হবে।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার জানিয়েছেন, পরীক্ষা পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও জানিয়ে দিয়েছেন, পরীক্ষা পেছানো হবে না। তিনি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করার পরামর্শ দিয়েছেন। এ বছর দেশের ১১টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ পরীক্ষার্থী, যা গত বছরের চেয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ জন বেশি। এর মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮৭ জন এবং ছাত্রী ৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৫৫ জন। সারা দেশে ২ হাজার ৬৫৮টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠানের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি বছর সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণসময়ে পরীক্ষার্থীরা অংশ নেবে। তবে আইসিটিতে ১০০ নম্বরের পরিবর্তে ৭৫ নম্বরের পরীক্ষা হবে।