মানসিক অসুস্থতায় আত্মহত্যার ঝুঁকি

হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য করা জরুরি

প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আমাদের সমাজে মানসিক অসুস্থতার কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। মানুষ যেমন নতুন নতুন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে। তেমনি পারিবারিক ও সামাজিক অশান্তির কারণে মানুষ অস্থিরতায় ভুগছে। এই অস্থিরতা দূর করা না গেলে মানুষ ধীরে ধীরে বিষন্নতায় ভুগতে শুরু করে এবং এক সময় তার মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যার পেছনের কারণ উদঘাটন করে তা সমাধানের উপায় খুজে বের করা না হলে মানুষ মানসিক রোগে আ্ক্রান্ত হয়। একজন মানসিক রোগী মনের ওপর প্রচন্ত চাপ অনুভব করে এবং এক সময় সেই চাপ সে ধারণ করতে পারেনা। আর তখনিই সে বেছে নেয় আত্মহত্যার মতো অনাকাঙ্খিত পথ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক অসুস্থতার কারণেই সমাজে অস্থিরতা বাড়ছে, এ থেকে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। দেশে ২৫ শতাংশ মানুষ বিষন্নতায় ভুগছেন। যাদের বেশির ভাগই কখনো চিকিৎসা পায়নি। অনেকে আত্মহত্যা না করে উল্টো আপনজনকে হত্যা করার মতো অপরাধেও লিপ্ত হয়ে থাকে। প্রতিদিন বিশ্বে গড়ে ৩ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করছে। এর চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি লোক আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। দেশে মানসিক সমস্যাগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি অল্প হলেও শিশুদের মধ্যেও এ সমস্যা বাড়ছে। সরকারি এক জরিপে দেখা গেছে, ১৮ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে মানসিক সমস্যা রয়েছে ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ। যা আগে ছিল ১৬.০৪ শতাংশ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ হলো ষাটোর্ধ্ব। আর ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সী অর্থাৎ শিশুদের মধ্যে মানসিক সমস্যাগ্রস্তের হার ১৭.৭ শতাংশ। আগে যা ছিল ১৮ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৩০ সাল নাগাদ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বিষন্নতা ব্যাপক আকার নেবে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসছেন না ৯১ শতাংশের বেশি মানুষ। অন্যদিকে পুরুষদের মধ্যে মানসিক রোগ নিয়ে বেশি সংস্কার ও নেতিবাচক ধারণা দেখা যায়। এমনকি সমস্যাগ্রস্ত কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসার হার ২ শতাংশেরও কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে আরও জোরালোভাবে এগিয়ে নিতে হবে। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল দেশে পালিত হল বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। ১৯৯২ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এক গবেষণায় মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের জন্য ইন্টারনেটকে দায়ী করে বলা হচ্ছে ইন্টারনেট মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডে ইন্টারনেট কোনো না কোনোভাবে যুক্ত থাকে। কিন্তু ইন্টারনেট তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য অনেকাংশেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের করা জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে,শক্ষার্থীদের মধ্যে শতকরা ৭২ দশমিক ২ শতাংশই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হন। এদের মধ্যে ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থীই বলছেন, তাদের মানসিক সমস্যায় ইন্টারনেটের ভূমিকা রয়েছে। পারিবারিক সম্পর্কে ঘাটতি, সামাজিক সম্পর্কেও পিছিয়ে পড়া, ব্যক্তি জীবনে বিরূপ প্রভাব, ঘুম ও শারীরিক সমস্যাসহ আচরণগত পরিবর্তনও দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ অবসর সময় কাটানোর জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। বিশ্বায়নের যুগে ইন্টারনেট ব্যবহার না করলে আমাদের তরুণ প্রজন্মই পিছিয়ে পড়বে। কিন্তু সমীক্ষা অনুযায়ী তারা ইন্টারনেটকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে চান। ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতে স্কুল, কলেজগুলোতে ‘ডিজিটাল লিটারেসি প্রোগ্রাম’ চালু , ইন্টারনেট রেসকিউ ক্যাম্প স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আসক্তি কাটিয়ে উঠতে কাউন্সিলিং, থেরাপি এবং শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম প্রদান করা, সামাজিক ও পারিবারিক যোগাযোগে ইন্টারনেট নির্ভরতার পরিবর্তে সরাসরি যোগাযোগকে উৎসাহিত করতে প্রচারণা চালানো যেতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর মতে আসলেই ইন্টারনেটের ব্যবহার এ বয়সী মানুষদের উপকার করছে নাকি অপকারটাই বয়ে নিয়ে আসছে সে বিষয়টি বিবেচনায় আনা দরকার। বিশেষ করে ১৯-৩০ বছর বয়সী যে তরুণ যুবক গোষ্ঠী আছে তাদের হতাশা, বিষন্নতা এবং অন্যান্য সামাজিক-মানসিক অস্থিরতা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। এদের মধ্যে আত্মহত্যার হারও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট কিছুটা দায়ী বলেও প্রতীয়মান হচ্ছে।