বিষ দিয়ে সুন্দরবনে মাছ শিকার

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ

প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

গত পহেলা জুন থেকে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৩ মাসের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এ সময় সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ ও কাঁকড়া ধরার পাশাপাশি পর্যটক প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। তবে এ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সুন্দরবনের ভেতরে প্রবাহিত খালে বিষপ্রয়োগ করে মাছ শিকারের খবর পাওয়া যাচ্ছে। মাছ শিকারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অসাধু জেলেদের একটি চক্র। এ বিষপ্রয়োগে মাছ আহরণ অব্যাহত থাকলে এক সময় সমগ্র সুন্দরবন এলাকা মৎস্যশূন্য হয়ে যাবে। সেইসঙ্গে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যসহ উদ্ভিদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা। জানা যায়, জেলেরা সুন্দরবনের খালে জোয়ারের আগে চিঁড়া, ভাত বা অন্য কিছুর সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে খালের পানিতে ছিটিয়ে দেয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পানিতে ভেসে ওঠে। জেলেরা ওই মাছ ধরে স্থানীয় আড়তসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে সরবরাহ করে। অভিযোগ রয়েছে, একশ্রেণির অসাধু বনরক্ষীদের নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে জেলেরা বিষপ্রয়োগ করে মাছ শিকার করছে। বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তারা অভয়ারণ্যের খালে বিষ দিয়ে অল্প সময়ে অধিক মাছ শিকার করছে। অভিযোগ রয়েছে, জেলেদের শিকার করা মাছ নিরাপদে লোকালয়ে পৌঁছাতেও টাকা দিতে হয় স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। মাঝেমধ্যে দুই থেকে একজন ধরা পড়লেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় অপরাধচক্রটি দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

জানা যায়, সুন্দরবনে পর্যটকসহ মাছ ও কাঁকড়া আহরণে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অব্যাহতভাবে চলছে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের কার্যক্রম। বনবিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালিয়েও তাদের দমন করতে পারছেন না। জেলেরা সুন্দরবন এলাকায় গিয়ে কীটনাশক বিক্রেতাদের কাছ থেকে অবাধে তা সংগ্রহ করে তা মাছ ধরার কাজে অপব্যবহার করছে। ফসলের পোকা দমনে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক দিয়ে এসব মাছ শিকার করা হয়। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ চলাকালে সুন্দরবনে খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে অনেকগুলো মামলা করার পাশাপাশি জেলেসহ তাদের ব্যবহৃত ইঞ্জিনচালিত ট্রলার, নৌকা এবং অবৈধ কাঁকড়া পরিবহনকালে যানবাহন জব্দ করার খবরও শোনা যায়। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার মহাজন নামধারি কতিপয় ব্যক্তি প্রতি বছর নিষিদ্ধ সময়ে সুন্দরবনের খালে মাছ শিকারের চেষ্টা করেন। এলাকার জেলেদের দাদনের ফাঁদে ফেলে বিষ দিয়ে মাছ শিকারে উৎসাহিত করেন তারা। আবার কেউ কেউ জেলেদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে সংরক্ষিত বনের খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার ও পাচারে সুযোগ করে দেন। তারা বনরক্ষীদের টহলের গতিবিধি লক্ষ্য করে জেলেদের সতর্ক করে থাকেন।

পরিবেশবিজ্ঞানিদের মতে, বিষপ্রয়োগ করলে ছোট-বড় সব প্রজাতির মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাছের পোনা মারা যায়। এছাড়া বিষমিশ্রিত পানি ভাটার টানে যখন গভীর সমুদ্রের দিকে যায়, তখন সেই এলাকার জলজপ্রাণীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া আশপাশের মাটিতে মিশে বিষের প্রভাব দীর্ঘ সময় থাকে। ফলে জলজপ্রাণীদের প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বাহারি গাছপালা, বন্য পশু-পাখি ও জীবজন্তু ঘেরা এই বনভূমি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মোহনায় অবস্থিত। তাই আমাদের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় সুন্দরবন রক্ষা করা একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় এই রক্ষাকবজের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।