ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অপ্রতিরোধী বাজার সিন্ডিকেট

নিয়ন্ত্রণের অভাবে বাড়ছে নিত্যপণের দাম
অপ্রতিরোধী বাজার সিন্ডিকেট

ডিমের দাম বেড়েই চলছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে ডিমের ডজন ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে দুয়েকটি ডিম কিনতে বাড়তি টাকা নিচ্ছে দোকানি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী ডিমের সরবরাহ না থাকায় দাম বাড়ছে। এছাড়া বাজারে মাছ, মাংসের পাশাপাশি সবজির দাম চড়া। তাই চাপ পড়েছে ডিমের ওপর। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ডিমের দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে স্বল্প আয়ের মানুষ। কারণ ডিমের দামে মাছ বা মাংস কোনোটাই কেনা সম্ভব নয়। তাই স্বল্প আয়ের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে বড় ভরসার জায়গা ডিম। কিন্তু এখন সেই ডিমও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সীমিত আয়ের মানুষ কীভাবে সংসার পরিচালনা করবে তা নিয়ে তারা রীতিমতো চিন্তিত। শুধু ডিমের দাম বাড়তি হলে তা না হয় সামাল দেয়া যেত কিন্তু বাজারে সব নিত্যপণ্যের দামই এখন চড়া। ডিমের দাম অত্যন্ত বেশি হওয়ায় মানুষ এই পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছে। প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) জানিয়েছে, পোলট্রি খাতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায় সরকারি তদারকি না থাকায় তাদের আধিপত্য বেড়েছে, যার খেসারত দিচ্ছে জনগণ। এই কর্পোরেট সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে ডিমের দাম আরো বাড়বে। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডিম ও মুরগির দাম বেড়ে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির আরেক কারণ প্রান্তিক পর্যায়ের অধিকাংশ ছোট ছোট খামার বন্ধ হয়ে যাওয়া। এ কারণে সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। এ খাতের বড় সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানিয়েছেন, গত কিছু দিনে প্রচণ্ড গরমে খামারে অনেক মুরগি মারা গেছে। ফলে ডিমের উৎপাদনে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আগামী অক্টোবরের আগে এই ঘাটতি পূরণ হবে না। এছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পোলট্রি ফিডসহ অন্যান্য সব খরচ বেড়ে যাওয়ার ফলে উৎপাদনের খরচ অনেক বেড়েছে। এতে ক্ষুদ্র খামারিরা টিকতে না পেরে খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশে (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় প্রতি হালি ডিমের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। গত এক বছরে প্রতি হালি ফার্মের বাদামি ডিমের দাম বেড়েছে ২৮ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে মুরগির ডিমের হালির গড় দাম ছিল ২৭ টাকার আশপাশে। এখন তা ৬০ টাকায় ঠেকেছে। গত শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, বিশ্বের সব দেশেই বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, ডিম, মুরগি, পেঁয়াজ কিংবা কাঁচা মরিচের দাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। এসব পণ্যের উৎপাদন, চাহিদা অন্য দুটি মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকে। কিন্তু যে কোনো পণ্যের দাম বাড়লেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। এদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে ডিমের পাশাপাশি গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ, সবজি ও মাছের দামও বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি নেই। বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটোল ৬০, ঝিঙা ৭০ থেকে ৮০, পেঁপে ৪০, করলা ৭০ থেকে ৮০, আলু ৪০, কাঁচা মরিচ ২২০ থেকে ২৪০, ঢ্যাঁড়স ৬০ থেকে ৭০, বরবটি ৯০ থেকে ১০০, শসা ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর টমাটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। কাঁচকলার হালি ৪০ টাকা। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় উঠেছে। আমদানি করা পেঁয়াজর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। অন্যদিকে ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম বেশ চড়া। বাজারে ৬০০ বা ৭০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। আর এক কেজি বা তারও বেশি ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা। সস্তা মাছের মধ্যে তেলাপিয়া, পাঙাশের কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, যা গত বছর ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। মোট কথা হচ্ছে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করে তার একটা বিহিত করতে হবে। তা না হলে সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাপন করা দুর্বিসহ হয়ে পড়বে। তাই অবিলম্বে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। দ্রব্যের মূল্য ক্রয় সীমার মধ্যে রাখতে হলে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকেও আরো সক্রীয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত