ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঘরে ঘরে জ্বর, ডেঙ্গু আতঙ্ক

চিকিৎসা প্রাপ্তিতে বিড়ম্বনা ও বাড়তি খরচ
ঘরে ঘরে জ্বর, ডেঙ্গু আতঙ্ক

ঘরে ঘরে বাড়ছে জ্বর। বর্ষা মৌসুমের এই সময়টাতে এই জ্বর ছড়িয়ে পড়ে। এটি মৌসুমি জ্বর হলেও জ্বরের মাত্রা ১০০ থেকে ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত অনুভূত হচ্ছে। এই জ্বর হলে ডেঙ্গুর আশঙ্কায় চিকিৎসকরা ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে হাসপাতালে ভর্তিতে বিড়ম্বনা কম পোহাতে হচ্ছে না। ডাক্তার ও নার্সের অপ্রতুল্লতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, বিশেষ করে স্যালাইন সংকটের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় রক্তের জোগান দিতে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা পাওয়া গেলেও দুর্বলতার সঙ্গে শারীরিক নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে। খাওয়ার ব্যাপারে তৈরি হয় অনীহা। সে কারণে চিকিৎসকরা হালকা তরল জাতীয় খাবার খেতে পরামর্শ দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত বিশ্রাম। তবে সেটা কি আসলেই সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। খেটে খাওয়া মানুষ বিশেষ করে দিনমজুর যদি কাজে যেতে না পারে, তাহলে তার সংসার চলবে কীভাবে? এছাড়া দিনমজুর শ্রেণির মানুষের সাধারণত কোনো সঞ্চয় থাকে না। তাই চিকিৎসা ব্যয় করার অর্থ সংগ্রহ করতে তারা ধারকর্জ করে থাকেন। এই ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে তাদের সংসার পরিচালনা করা দায় হয়ে পড়ে। দ্রব্যমূল্যের এ উর্ধ্বগতির এই বাজারে ডেঙ্গু চিকিৎসা করাতে গিয়ে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়ছে।

ডেঙ্গু জ্বরের কারণ হচ্ছে মশা। আর ক্ষুদ্র প্রাণী মারার সাধ্য কি মানুষের নেই। শুধু দায়িত্বহীনতা ও গাফিলতির কারণে আজ মশা দাপট দেখাচ্ছে। আর মশার দাপটের কাছে মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। এই ঘাতক মশা নিধনের দায়িত্ব যাদের ওপর দেয়া হয়েছে; তারা যদি সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে, তাহলে এমন বিপর্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। নগরীর রাস্তাঘাট, নালা-ডোবা ও খাল পরিষ্কার না করার কারণে পানি জমে থাকে। আর এই বদ্ধ পানিতে মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হয়। অথচ মশা নিধনে দেশের সিটি করপোরেশনগুলোর যেন কোনো গরজ নেই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজটি না করার কারণে ডেঙ্গু মশার প্রজনন ক্ষেত্রে তৈরি হচ্ছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজটি ঠিক মতো করা হলে হয়তো মশা বংশবিস্তার করতে পারত না। মূল কারণ অনুসন্ধান না করলে মশা নিয়ন্ত্রণে আসবে না। আর মশা নিয়ন্ত্রণে না এলে ডেঙ্গু পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে না। দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ডেঙ্গুর সংক্রমণ হয়েছিল ২০১৯ সালে। চলতি বছর অতীতের সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এখন সর্বোচ্চ আক্রান্ত রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে দেশ। ১২ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৫০৫ জন। এরই মধ্যে ঢাকা সিটিতে ৪১ হাজার ৭০৪ জন ও সারা দেশে ৪০ হাজার ৮০২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। গত শনিবার সারা দেশে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮৭ জন। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের হিসাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা বলছেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সরকারি যে হিসাব, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়েও বেশি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেভাবেই হোক বর্তমানে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণগুলো বেশ বদলে গিয়েছে। বর্তমানে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা দিনে এবং রাতে কামড় দেয়। এছাড়াও ডেঙ্গু এখন শুধু পরিষ্কার পানিতে নয়, যেকোনো পানিতেই জন্মাতে পারে। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণও বদলে গিয়েছে, উপসর্গেও পরিবর্তন এসেছে। সব মিলিয়েই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। যেভাবে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, আমরা যদি সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হই, তাহলে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গুরোগের বাহক এডিস মশা তার ধরন বদলে ফেলেছে। ডেঙ্গুরোগ একটা সময় ঢাকা কেন্দ্রিক থাকলেও বর্তমানে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই দেশের প্রতিটা শহরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার মধ্যেও বিষয়টি যুক্ত করা বিশেষ প্রয়োজন বলে তারা মনে করছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত