ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রশ্নফাঁস রোধে দরকার কঠোর অবস্থান

এইচএসসি পরীক্ষা শুরু
প্রশ্নফাঁস রোধে দরকার কঠোর অবস্থান

আজ থেকে শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ও নকলমুক্ত পরিবেশে সুষ্ঠু, সুন্দরভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরও পরীক্ষায় নকল এবং প্রশ্নফাঁসের গুজব রোধ করা যাচ্ছে না। সেজন্য দরকার প্রশাসনের কঠোর অবস্থান। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুসারে দেশের সব কোচিং সেন্টার এখন বন্ধ। গত ১৪ আগস্ট থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে এবং ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। কোনো পাবলিক পরীক্ষা শুরু হলেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের নেশায় মেতে ওঠে একটি কুচক্রীমহল। তারা প্রশ্নফাঁস করে পরীক্ষার মৌসুমে কোটি কোটি টাকা আয় করে। পাবলিক পরীক্ষার সময়টি তাদের জন্য আয় রোজগারের একটা ‘সুযোগ’ করে দেয়। আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তারা সংসার পরিচালনা করার পাশাপাশি দামি গাড়ি ও বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে বসবাস করে। প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের সঙ্গে হয়তো এই চক্রটির একটি ‘গভীর’ সম্পর্ক থাকতেও পারে। আর এই সুযোগটি কাজে লাগান অযোগ্য সন্তানদের অভিভাবকরা। তারা তাদের সন্তানদের যোগ্যদের কাতারে নিয়ে যাওয়ার জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামে। কিন্তু তারা হয়তো বুঝতে পারেন না যে তারা তাদের সন্তানদের কি সর্বনাশ করছেন। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি পরীক্ষাই নিজের যোগ্যতা যাচাইয়ের মাপকাঠি। অসদুপায় অবলম্বন করে কোনো একটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ভবিষ্যতে তো আরো পরীক্ষা অপেক্ষা করছে। ওইসব পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করার সুযোগ হয়তো নাও আসতে পারে। তখন ওইসব শিক্ষার্থী কি করবে তা কি অভিভাবকরা কখনো ভেবে দেখেছেন? অযোগ্যকে যোগ্য করার মনমানসিকতা এক প্রকার অসুস্থতা বলে মনে করা হয়। নিজের সামাজিক মর্যাদা বাড়াতে গিয়ে সন্তানদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করলে আখেরে তার ফল ভালো হয় না। যে যতটুকু যোগ্য তাকে তার যোগ্যতার মাপকাঠিতে বিচার করা উচিত। অন্যথায় ওই সন্তান স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারবে না। জীবনটা উপভোগের স্থলে অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ মিলে। তাই ফাঁসকৃত প্রশ্ন পেলে পরীক্ষা ভালো হবে এবং ভালো পরীক্ষা হলে ফলাফলও ভালো হবে। আর এই তথাকথিত ভালো ফলাফল নিয়ে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা ভাল কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগত্যা অর্জন করা যায়। তারপরের বিষয়টি হয়তো ভবিষতে জানা যাবে। যেসব অভিভাবক বিস্তর অর্থ-বিত্তের মালিক তারা তাদের ‘অযোগ্য’ সন্তানদের ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা বিশেষায়িত কোনো শিক্ষাঙ্গনে ভর্তি করানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন। তারা প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন এই মনোভাবনা পূরণ করতে। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য তারা ভর্তির প্রশ্নপত্র হয়তো সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে আসল প্রশ্নপত্র হয়তো পেয়েও যান। বিনিময়ে দেন লাখ লাখ টাকা। অনেকে ফাঁসকৃত প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে পাসও করে গেছেন। সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের সন্ধান পাওয়ার পর লোমহর্ষক এই কাহিনী উঠে এসেছে। বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের আড়ালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৭ চিকিৎসকসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। সংস্থাটি বলছে, চক্রটি ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত শত শত মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর কাছে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেছে। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করেছে; এখন দেশে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে চক্রের সদস্যরা। এমনকি অনেকে বিদেশেও অর্থপাচার করেছে। চক্রটির অন্তত ৮০ সদস্য প্রায় ১৬ বছর ধরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে ফাঁস করা প্রশ্নপত্র দিয়ে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয় করেছে। এদের প্রায় সবাই বিভিন্ন মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার, নয়তো প্রাইভেট পড়ানোর আড়ালে প্রশ্নপত্র ফাঁস করত। গ্রেপ্তারদের মধ্যে আটজন তাদের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে, ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে অন্তত ১০ বার এই চক্রটি মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। এদের ব্যাংক একাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে, যেগুলো মানিলন্ডারিং মামলায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত