ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বুলিংর‌্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি

কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নয়, অন্যত্রও করা প্রযোজন
বুলিংর‌্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি

‘সদা সত্য কথা বলিও, কিন্তু কানাকে কানা বলিওনা’। এমন একটি কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে সব সময় সত্য কথা বলা উচিত হলেও অনেক ক্ষেত্রে সত্যটাকে সত্য হিসেবে প্রকাশ না করাই শ্রেয়। আমাদের সমাজে সকল মানুষের মধ্যে সমান যোগ্যতা, দক্ষতা কিংবা অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবেনা। কোন মানুষ কোন ক্ষেত্রে বিচক্ষনতা ও মেধার পরিচয় দেয়, তবে যারা অনগ্রসর তাদের ব্যাপারে আমাদের সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত। মহান সৃষ্টি কর্তা সবাইকে সমান করে দুনিয়ায় পাঠাননি। অনেকে অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে, কেউ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, কেউবা শ্রবন প্রতিবন্ধী, আবার কেউ বা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। কেউ বা উচ্চতার দিক দিয়ে অনেক বেশী লম্বা কেউবা বা আবার আকারে ছোট-খাটো। কেউ দেখতে সুন্দর আবার কেউবা দেখতে তেমন একটা আকর্ষণীয় নয়। তাই বলে তাদেরকে হেয় কিংবা তাদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করা উচিত নয়। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাদের সমাজে অনেককে এসব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন লোকদের নিয়ে হাসি তামাশা কিংবা ঠাট্টা মসকরা করে। দিনের পর দিন এমনটি করা হলে ওই ব্যক্তির মধ্যে হতাশা নেমে আসে। সে নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। ভাগ্যকে দোষারোপ করতে করতে এক সময় সে আত্মহত্যার পথে পা বাড়ায়। যে মানুষকে যে নামে ডাকলে কিংবা তার সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করলে সে নাখোশ হয় সেটি পরিহার করা দরকার। মানুষের দুর্বলতাকে আঘাত করে কোন আচরণ করা হলে তাকে বলা হয় বুলিং- র‌্যাগিং। আর এই বুলিং-র‌্যাগিং চর্চা বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রকট সংকটের সৃষ্টি করেছে। বুলিং- র‌্যাগিং প্রতিরোধে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি গঠন করার একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি নীতিমালা প্রণয়ের আইনগত ভিত্তি তৈরি করার জন্য আদালতে রিট করার পর তা নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আশা করা যায় আদালতের মাধ্যমে বুলিং- র‌্যাগিং বন্ধে একটা নীতি মালা প্রণয়ন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশনা আসবে। এটি হলে এই সমস্যাটি অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যাবে। ২০১৮ সালের দিকে রাজধানীর একটি স্কুল থেকে অপমান করে বের করে দেওয়ার পর নিজ বাসায় আত্মহত্যা করে একজন ছাত্রী। এরপরে বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে একটি সুয়োমোটো রুল ইস্যু করা হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র‌্যাগিং প্রতিরোধে নীতিমালা বা গাইড লাইন তৈরি করার জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়েছে। প্রায় সাত থেকে আট বার খসড়া পর্যালোচনা করা হয়েছে। এরপর পরিমার্জন, সংযোজন, বিয়োজন করার পর চূড়ান্তভাবে গত ২ মে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। তারপর গত ২৯ জুলাই আদালতে দাখিল করা হয়েছে। নীতিমালাটি শুনানি সম্পন্ন করার পর আদালত দেশের ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় বুলিং ও র‌্যাগিং প্রতিরোধে কমিটি গঠন করার জন্য হয়তো একটা নির্দেশনা দেবে। ২০২১ সালে বুলিং নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভির আহমেদের রিটে ওই বছর ২২ আগস্ট হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। ‘বুলিং’ থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। সেই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং রোধে নীতিমালা তৈরি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা-ও জানতে চাওয়া হয়। এ নীতিমালা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হবে। কাউকে উদ্দেশ্য করে মানহাকির/অপমানজনক এমন কিছু বলা বা লেখা যা খারাপ কোনো কিছুর প্রতি ইঙ্গিত বহন করে এমন আচরণকে মৌখিক বুলিং বুঝাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেসব জায়গার বুলিং ও র‌্যাগিং হবার আশঙ্কা থাকে, সেসব জায়গায় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা করবে। তবে কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নয়, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অফিস- আদালত কিংবা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও বুলিং- র‌্যাগিংয়ের চর্চা হয়ে থাকে। তাই সমাজের সর্বত্রই এই ধরণের কমিটি গঠন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে শিক্ষা- প্রতিষ্ঠানে বুলিং- র‌্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি হতে যাচ্ছে। এটির পর বাস্তবতার নিরীক্ষে কতৃপক্ষ হয়তো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও এ ধরণের কমিটি গঠনে এগিয়ে আসবে। আমাদের সমাজে শান্তি ও স্বস্থি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই ধরণের কমিটি গঠন করার কোন বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত