বাসযোগ্য শহর চাই

প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত বাংলাদেশও। নদীমাতৃক দেশ, সুজলা-সুফলা-সবুজের সমারোহে ভরা আমাদের মাতৃভূমি। এখন এখানেও মরুভূমির উত্তাপ ধেয়ে আসছে। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হওয়ার কোনো কারণ নেই। তারপরও অতি লোভ, বিলাসবহুল জীবন সব মিলেমিশে আমাদের জলাধারগুলো ভরাট হয়েছে, সবুজের উদ্যানগুলো হারিয়ে গেছে আমাদের চোখের নিমেষে। ফলে বিরূপ আবহাওয়া এখন চোখ রাঙাচ্ছে সারা দেশে। একটি আদর্শ শহরে ১৫ শতাংশ সবুজ ভূমি থাকা প্রয়োজন হলেও ঢাকায় তা অর্ধেকেরও কম। বর্তমানে ঢাকায় সবুজ ভূমি রয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। যার অন্যতম কারণ সমন্বয়হীন উন্নয়ন। সবুজ ভূমি সংরক্ষণে স্টেকহোল্ডারদের মৌলিক কার্যাবলির কথা জানিয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা, পার্ক এবং খোলা জায়গা রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি। রাজউককে যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। ইমারত ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র দিতে হবে। নির্মাণ অনুমতিপত্র ও অকুপেন্সি সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে।

বন বিভাগের মৌলিক কাজ জানিয়ে বলা হয়, বনসম্পদ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জীববৈচিত্র্য ও জলাশয় ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ কাজে নিয়োজিত করতে হবে। এসব কথা বলা হয়েছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে ‘২৮ বছরে রাজধানীর জলাধার ও সবুজ নিধন : বাস্তবতা ও উত্তরণের পথনকশা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও গোলটেবিল বৈঠকে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) ও নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম, বাংলাদেশ যৌথভাবে রাজধানীর বিআইপি মিলনায়তনে গত শনিবার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। গত ২৮ বছরে দেশের রাজধানী শহরের সবুজ, জলাধার, জলাভূমি, উন্মুক্ত স্থান, গণপরিসর, পতিত জমি সবই ব্যাপক মাত্রায় কমেছে। কেন্দ্রীয় নগর এলাকায় সবুজের পরিমাণ ১৯ দশমিক ৭৮ বর্গকিলোমিটার থেকে কমে ১০ দশমিক ৪২ একরে নেমেছে। জলাধার ও জলাভূমি ৩০ দশমিক ২৫ বর্গকিলোমিটার থেকে কমে ৪ দশমিক ২৮ বর্গকিলোমিটার হয়েছে। ফাঁকা জায়গা ও পতিত জমিও কমেছে। নানা অব্যবস্থাপনা ও দুর্বৃত্তায়ন উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়ায় ভরাট-দখলদারিত্বের সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হতে সময় লাগছে। মানুষই পরিবেশ দূষণ করে এবং মানুষই দূষণ প্রতিরোধ করতে পারে।

দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ না হলে ঢাকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে না। অসংখ্য মানুষের চাপে যে কোনো ভালো পরিকল্পনা ও নাগরিক সুবিধা ভেঙে পড়তে বাধ্য। সীমার অতিরিক্ত মানুষ ঢাকায় বসবাসে নিরুৎসাহিত করতে নানা ধরনের পরোক্ষ নীতিমালা নেওয়ারও সময় এসেছে। বৃক্ষ নিধন, জলাশয় দখল ও নদী দূষণের বিরুদ্ধে সরকার সোচ্চার। কারণ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সবুজ ভূমি ও জলাভূমিও গুরুত্বপূর্ণ। খাঁচার মতো অবকাঠামোয় মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। বসবাসযোগ্য ঢাকা অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য এবং রাজধানী ঢাকা না বাঁচলে আমাদের অর্থনীতি বাঁচবে না। এসব কারণেই পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া দিঘি ভরাট, হাতিরঝিলের লেক ভরাট এবং গাবতলীতে বিএডিসির জন্য নিম্নভূমি ভরাট বন্ধ করতে হবে। আমরা চাই সবুজে ঢাকা, অজস্র জলাধারে পূর্ণ একটি বাসযোগ্য শহর। যেটা দুটি সিটি কর্পোরেশন চেষ্টা করলে এমন কঠিন কিছু নয়। শুধু সদিচ্ছাই পারে বসবাসযোগ্য শহর নির্মাণ করতে।