ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা

এমন কলঙ্কময় অধ্যায়ের সমাপ্তি হোক
বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলার ১৯তম বার্ষিকী আজ। আজকের এই দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় অধ্যায়ের জন্ম দেয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে চিরতরে শূন্য করতে নিতান্ত প্রতিহিংসাবশত এই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। সরকারের তরফ থেকে পৃষ্টপোষকতা না থাকলে এমন একটি নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারত না। হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি ছিল আরো করুণ ও বিভীষিকাময়। আলামত নষ্ট করার পাশাপাশি হাসপাতালে বিএনপি-জামায়াত জোটের সমর্থক ডাক্তারদের ধর্মঘট অনেক কথার জন্ম দেয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ শান্তি সমাবেশে অকল্পনীয় এক নারকীয় গ্রেনেড হামলার ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়টি আর ঘটেনি। ওই দিন ওই সমাবেশে একের পর এক গ্রেনেড হামলা করা হয়। নেতাকর্মীদের মানববর্মে মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান সে সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা, আওয়ামী লীগ সভাপতি আজকের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ২০০৪ সালের সেই সমাবেশে শেখ হাসিনার বক্তৃতা শুরু হয় বিকাল ৫টা ২ মিনিটে। ৫টা ২২ মিনিটে বক্তব্য শেষ করে শেখ হাসিনা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে মাইক থেকে সরে যাওয়ার মুহূর্তেই প্রথম গ্রেনেডটি ছোড়া হয়। গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাকে থাকা দলীয় নেতৃবৃন্দ এবং নিরাপত্তাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে ট্রাকের ওপর বসিয়ে দেন। এর পরপরই আরো তিনটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। চারিদিক ধোঁয়ায় আছন্ন হয়ে যায়। সেখানে সৃষ্টি হয় এক নারকীয় পরিস্থিতি। হতবিহবল হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের নেতারা। তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনাকে রক্ষা করা। এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে রিকশা, বেবিট্যাক্সি, এমনকি রিকশাভ্যানে করেও আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সেদিনের হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। গ্রেনেড হামলার ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ আগস্ট মারা যান আইভি রহমান। প্রায় দেড় বছর পর মৃত্যু হয় ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে। হামলার শিকার আওয়ামী লীগকেই দায়ী প্রমাণ করার নানা অপচেষ্টা চলে। বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনকে দিয়ে গঠন করা হয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন। এক মাস ১০ দিনের মাথায় ১৬২ পৃষ্ঠার একটি ফরমায়েশি প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেয় এই কমিশন। এরপর আসল ঘটনা ধামাচাপা দিতে শুরু হয় নানা নাটক। ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগে জজ মিয়াকে আটক করার পর জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়। এটি সাজানো নাটক প্রমাণ হওয়ার পর থামিয়ে দেয়া হয় তদন্ত। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষের অধিকতর তদন্তের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। অধিকতর তদন্ত আসামির তালিকায় নাম আসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরো ৩০ জনের নাম। তারেকসহ ১৮ জনকে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরু হয়। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর মামলার রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক এমপি কাজী মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। আর সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই জঙ্গি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার পর ক্ষমতা নয়, দেশের মানুষের অধিকার, যুদ্ধাপরাধ ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তিনি সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করেন। এসব কঠিন কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে তিনি শত্রুপক্ষের কমপক্ষে ১৯ বার হত্যার চেষ্টার সম্মুখীন হন। দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। দলকে গোছাতে তিনি সারা দেশে সাংগঠনিক সফর করেন। তার এই সফরের লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের লালিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত