ভিডিও কনফারেন্সে বিচারকাজ

কমবে মামলার জট, দূর হবে ভোগান্তি

প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আদালতে হাজির না হয়েও দেশ-বিদেশে অবস্থান করে অংশ নেওয়া যাবে মামলার বিচারকাজে। অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এই বিচারকাজ পরিচালিত হবে। বাদী-বিবাদী কিংবা সাক্ষী হাজির না হওয়ার কারণে মামলার বিচার কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হয় এবং আদালতে মামলার জট বাড়তে থাকে। বছরের পর বছর সময় লাগে একটি মামলার নিষ্পত্তি হতে। বিলম্বিত বিচারের কারণে বিচার প্রার্থীর মধ্যে হতাশার জন্ম নেয়া কোনো অস্বাভাবিকতা নয়। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে মামলার জট কমবে এবং তরান্বিত হবে দেশের বিচার কার্যক্রম। সেই সঙ্গে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করবে দেশের বিচারাঙ্গন। প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেমন এগিয়ে যাচ্ছে দেশের বিচারাঙ্গনও তেমনি এগিয়ে যাবে এটাই সবার কাম্য। আদালত কর্তৃক পরিচালিত এই বিচার কাজের মধ্যে সমন্বয় করবেন একজন সমন্বয়কারী। আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০ এর ৫ ধারার ক্ষমতাবলে গত রোববার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এসব ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ জারি করেছেন। নিম্ন আদালতের বিচারকদের জন্য জারি করা এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে যে, আদালত কক্ষ হতে কোনো স্থানে অবস্থানরত মামলার কোনো পক্ষ, সাক্ষী, অভিযুক্ত ব্যক্তি, আইনজীবী, বিশেষজ্ঞ এবং মামলার সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তির তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অডিও-ভিজুয়ালের মাধ্যমে মামলায় উপস্থিতি, সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানিসহ সব বিচারিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে। ‘দূরবর্তীপ্রান্ত’ অর্থু এমন একটি স্থান যেখানে মোকদ্দমার কোনো পক্ষ, সাক্ষী, আসামি বা আইনজীবী শারীকিভাবে উপস্থিত থেকে অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রমে উপস্থিত হবেন। দূরবর্তীপ্রান্ত বলতে দেশের বাইরে, কারাগার, হাসপাতাল, সেইফ হোম, প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠান, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র, নিরাপত্তামূলক হেফাজত, সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস, ফরেনসিক ল্যাবরেটরি ছাড়াও অন্য যে কোনো স্থানকে বোঝানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মনোনীত কোনো ব্যক্তি সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বিদেশে বাংলাদেশি সংশ্লিষ্ট কনস্যুলেট/দূতাবাস/হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা সমন্বয়কারী হবেন। নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, এই ধরনের বিচারকাজে কনফারেন্সিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ের কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে দূরবর্তী প্রান্তে প্রস্তুত থাকতে হবে। কোনো অননুমোদিত রেকর্ডিং ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না। অডিও-ভিডিও কনফারেন্স চলাকালীন কোনো অননুমোদিত ব্যক্তি কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করতে পারবে না। যে ব্যক্তিকে পরীক্ষা করা হচ্ছে তাকে কোনোভাবে প্ররোচিত করা, টিউটর করা, বাধ্য করা হয়নি এবং যে ব্যক্তিকে পরীক্ষা করা হচ্ছে তাকে কনফারেন্স চলাকালীন সংশ্লিষ্ট আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনো নথি, স্ক্রিপ্ট বা ডিভাইস দেখানো যাবে না। মামলা সংশ্লিষ্ট পক্ষ, সাক্ষী, অভিযুক্ত ব্যক্তি, আইনজীবী, বিশেষজ্ঞ এর আবেদনক্রমে বা আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে যে কোনো মামলার যে কোনো পর্যায়ের কার্যক্রম অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন। এরূপ আবেদন প্রাপ্তি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শুনানির পর, আদালত সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন যে, অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং এক্ষেত্রে আবশ্যিক কি না। আবেদন মঞ্জুর করা হলে আদালত অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের সময়সূচি নির্ধারণ করবেন। অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের আবেদনে অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপস্থিতি শুনানি অথবা সাক্ষ্য গ্রহণের সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের শনাক্তকরণের সুবিধার্থে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, টেলিফোন নম্বর, ই-মেইল আইডি সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করতে হবে। জেলহাজতে আটক অভিযুক্ত বা সাক্ষীর ক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং কার্যক্রম শেষ হলে, আদালত আদেশনামায় কনফারেন্সিংয়ের সময় ও স্থায়ীত্বকাল উল্লেখ করবেন এবং কনফারেন্সিংয়ে ব্যবহৃত সফটওয়্যার/প্ল্যাটফরমের নাম উল্লেখ করবেন। এছাড়া আদালত কনফারেন্সিংকালে এর অডিও, ভিডিও এবং সংযোগের বিষয়ে তার সন্তুষ্টি আদেশে উল্লেখ করবেন। এই সিদ্ধান্ত যত দ্রুত দেশের আদালতগুলো কার্যকর করা হবে ততই আমাদের সবার জন্য মঙ্গল। ডিজিটাল যুগে এসে এনালগ চিন্তাচেতনার অবসান ঘটাতে আমাদের সম্মিলিত চেষ্টা থাকতে হবে।