ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাড়ছে মাদকাসক্ত পথশিশু

চাই সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ
বাড়ছে মাদকাসক্ত পথশিশু

রাজধানীতে মাদকাসক্ত শিশু-কিশোরের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কেবল রাজধানী নয়, অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরেও মাদকাক্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। কেবল রাজধানীর অলিগলি নয়, বড় বড় রাস্তার মোড়েও শিশু-কিশোরদের মাদক গ্রহণ করার দৃশ্য প্রতিনিয়ত চোখে পড়ছে। চামড়ার জুতা মেরামত করার কাজে যে বিশেষ এক ধরনের আঠাল পদার্থ ব্যবহার করা হয় তা পলিথিনে ভরে তার গন্ধ নাক-মুখ দিয়ে গ্রহণ করে নেশা করে থাকে এসব শিশু-কিশোর। ছিন্নমূল এসব পথ শিশু রেল ও বাসস্টেশন এবং লঞ্চ টার্মিনালে রাত্রিযাপন করে। তারা দিনের বেলা টুকরো কাগজপত্র ও বিভিন্ন পরিত্যক্ত জিনিসপত্র সংগ্রহ করে তা ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে নেশার টাকা সংগ্রহ করে। খাবারের টাকার চেয়ে নেশার টাকা জোগাড় করার প্রতি তাদের মনোযোগ বেশি। কখনো কখনো এসব শিশু-কিশোর নেশার টাকা সংগ্রহ করার জন্য ছোটখাটো চুরি ও ছিনতাই কাজে অংশ নেয়। এসব শিশু ময়লা অবর্জনার মধ্যে জড়াজড়ি করে রাত্রিযাপন করে। তাদের জীবনে স্যানিটেশন বলতে তেমন কোনো কিছুর বালাই নেই। দিনে দিনে এসব পথশিশু নানা রকম রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে এক সময়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। পুলিশ প্রশাসন যদি এসব পথ শিশুর ব্যাপারে নজর দেয়, তাহলে তাদের জীবন হয়তো পরিবর্তন হতে পারে। তাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশু-কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে নিয়ে পরিচর্যা করলে তারা হয়তো নতুন জীবন পাবে। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখবে। এসব পথশিশু ‘অশান্তির’ সংসারে বড় হওয় সন্তান। তারা সংসার বিবর্জিত হওয়ায় স্নেহ-ভালোবাসা থেকেও বঞ্চিত। সে কারণে তারা রাস্তার জীবন বেছে নেয়। তবে আশার কথা হচ্ছে প্রকাশ্যে মাদক সেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত পথশিশুদের তালিকা করতে কাজ করবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এ বিষয়ে ডিএমপির সংশ্লিষ্ট উপকমিশনারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তালিকা তৈরির পর সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টিও দেখভাল করবেন ডিএমপির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এমন উদ্যোগের ফলে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত শিশুদের নজরদারিতে রাখা অনেকটাই সম্ভব হবে বলে ধারণা করছে পুলিশ। ডিএমপির সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এলাকায় সম্প্রতি চুরি-ছিনতাই-ডাকাতির মতো ঘটনা বেড়েছে। এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে মাদকাসক্ত শিশুরাও। সেই সঙ্গে একটি গোষ্ঠী স্বার্থ আদায়ের জন্য মাদকসেবীদের ব্যবহার করে আসছে। তালিকা তৈরি করার জন্য ডিএমপির ৫০টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক, অলিগলি, ফুটপাত ও পদচারী-সেতুর আশপাশে পথশিশুদের আনাগোনা দেখা যায়। পলিথিনে কিছু একটা ভরে তা মুখে ধরে শ্বাস নিতে থাকে, যাকে ড্যান্ডি বলা হয়। তাদের মধ্যে ড্যান্ডি সেবনকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া গাঁজা ও অন্যান্য মাদক তো রয়েছেই। তারা বিভিন্ন গ্রুপে একতাবদ্ধ হয়ে ড্যান্ডি বা গাম সেবন করে, যা চলতি পথে নগরবাসীর জন্য অনেকটাই ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ডিএমপি সূত্র আরো জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পথশিশুদের ব্যবহার করে কেউ যেন কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়েও বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। তালিকা তৈরির কাজ শেষে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হলে পথশিশুদের মাদকাসক্ত থেকে ফিরিয়ে আনা সহজ হবে। এতে অপরাধপ্রবণতা অনেকাংশে কমে আসবে। পুলিশ বলছে, চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার সঙ্গে পথশিশুদের জড়িত থাকার খবর প্রায়ই পাওয়া যায়। তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে তারা আবার একই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। যদিও কোনো থানায় কত পথশিশু রয়েছে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবু তাদের মাদক-সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি তালিকায় উঠে এলে তা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত