ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অভিমত

শিক্ষক হত্যার চেষ্টায় দুর্বৃত্তরা

মো. তৌফিক হোসাইন
শিক্ষক হত্যার চেষ্টায় দুর্বৃত্তরা

গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার অন্তর্ভুক্ত বারিষাব ইউনিয়নে এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যা খুবই মর্মান্তিক। গত রোববার রাতে বারিষাব বেলতলী বাজারের নিকটে অবস্থিত চরদুলভখাঁ আব্দুল হাই সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র গণিত শিক্ষক নূরুল ইসলাম (নুরু) (৫৫) স্যারকে হত্যার উদ্দেশ্যে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে ডুবারটেক রাস্তার পাশে একটা পুকুরে ফেলে রাখে। তার দুই ছেলে এবং এক মেয়ে সায়মা সরকার (১৯)। তার মেজো মেয়ে সায়মা সরকার জানান, গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বেলতলী বাজার থেকে হোমিওপ্যাথির দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন বাবা। বারিষাব-আমরাইদ সড়কের নূরার ব্রিজের পূর্ব পাশে সাত-আটজন সশস্ত্র দুর্বৃত্ত গতিরোধ করে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। এ সময় তার কোমরের নিচের অংশ, ডান হাতের দুটি অংশ ও বাঁ হাতের একটি অংশের হাড় ভেঙে যায়। হামলাকারীরা তাকে কোপাতে থাকে। ডান হাতের কবজির রগ, ডান পায়ের রগ ও ডান হাঁটুর নিচের মাংসপেশি কাটে।

এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে দুর্বৃত্তরা তার কাছে থাকা মোবাইল ও টাকা-পয়সা নিয়ে তাকে পাশের পুকুরে নিক্ষেপ করে। রাত ২টার দিকে তার জ্ঞান ফিরলে তিনি সাহায্যের জন্য শব্দ করেন। তার শব্দ পেয়ে সাহায্যের জন্য এলাকাবাসী কয়েকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। পরিবারসহ প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে পঙ্গু হাসপাতালে প্রেরণ করে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে থেকে অপারেশন করে কাপাসিয়া নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে তিনি কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাদিন আছেন।

সায়মা সরকার আরো জানান, তার বাবা বারিষাব লালে সরকারবাড়ি জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন। মসজিদের সামনের মাঠ দিয়ে ইটের সোলিং করা সড়ক নির্মাণ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে স্থানীয় দুটি পক্ষের বিবাদ চলছে। মসজিদের জমি ভোগ দখল করে আছে এ নিয়ে বিবাদের শুরু হয়। সম্প্রতি একটি পক্ষ মোটা টাকা খরচ করে সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে আনে সেখানে। তাদের উপস্থিতিতে ওই সড়ক নির্মাণ করা হয়।

পরদিনই মসজিদ কমিটির সভাপতি নূরুল ইসলামের (নুরু) নেতৃত্বে এলাকার কয়েকশ’ লোক ওই সড়ক ভেঙে দেন। এর পর থেকে দুটি পক্ষ মারমুখী অবস্থায় রয়েছে। শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে জানাচ্ছে তীব্র নিন্দা। প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এটা শিক্ষার্থীদের দাবি।

স্যারের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও এই হামলার তিব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সেই সঙ্গে এই ন্যক্কারজনক কাজ যারা করছে এর সঙ্গে জড়িত সবার দ্রুত গ্রেপ্তার এবং সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানাচ্ছে। যেখানে আমরা শিক্ষককে পিতৃতুল্য মনে করি শ্রেষ্ঠ আসেন স্থান দেই। সেখানে এই ধরনের ঘটনা শিক্ষার্থীদের হৃদয়কে নাড়িয়ে দেয়। এমন অমানবিক কাজ যেন কখনো কারোর সঙ্গে না হয় এমনটাই দাবি। এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সন্ত্রাসীদের নির্মম হামলার প্রতিবাদে এবং দুর্বৃত্তদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবিতে আজ থেকে মানববন্ধন শুরু করেছে অত্র বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী ও দলমত নির্বিশেষে এলাকার সচেতন নাগরিকরা এই মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করছে। ২২ তারিখ বর্তমান শিক্ষার্থী মানববন্ধন ও রাস্তা অবরোধ করেছে। ২৩ তারিখ সাধারণ মানুষ এবং ২৫ তারিখ প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে এই বিষয় নিয়ে ক্ষিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিক বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তারা থামাবে না এমনটাই শিক্ষার্থীদের দাবি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত