ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বেসরকারি উদ্যোগে ভ্যাট আদায়

বাড়বে রাজস্ব, মিলবে স্বচ্ছতা
বেসরকারি উদ্যোগে ভ্যাট আদায়

ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আহরণে স্বচ্ছতা এবং গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইএফডিএমএস) চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁও রাজস্ব ভবনের মাল্টিপারপাস হলে এক অনুষ্ঠানে ইএফডিএমএস আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। প্রাথমিকভাবে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে এই ডিভাইসটির সংরক্ষণ ও পরিচালনার পাশাপাশি গ্রাহকদের কাছ থেকে ভ্যাট আহরণ করা হবে। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের ভ্যাট রিটার্ন দেয়ার সুযোগও থাকবে। এনবিআরের সার্ভারে সিস্টেমটি সংযুক্ত করা হয়েছে। এনবিআর সরাসরি ভ্যাট প্রদান ও আহরণের পরিমাণ সরাসরি পর্যবেক্ষণ-পরিবীক্ষণ করবে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এই ডিভাইস দেশে রাজস্ব আহরণের গতি বাড়াবে এবং রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে আরো স্বচ্ছতা তৈরি করবে। রাজস্ব খাতে সরকারের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে ২০২০ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ইএফডির মাধ্যমে ভ্যাট আদায় পদ্ধতি চালু করা হয়। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড এরইমধ্যে ভ্যাট আহরণে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করেছে। বাংলাদেশে রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থা আরো সুশৃঙ্খল করতে এনবিআরকে কাজ করে যেতে হবে। ব্যবসায়ীরা সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়নে তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। গত ১৫ বছরে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির পাশাপাশি দেশের জিডিপির আকার বেড়েছে সাড়ে চার গুণ এবং বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম অর্থনীতির দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ৬৮তম অর্থনীতির দেশ ছিলো। গত ১৫ বছরে বার্ষিক গড় মাথাপিছু আয় ৬৮৬ মার্কিন ডলার থেকে উন্নীত হয়ে ২৭৯৩ ডলারে পৌঁছেছে। ২০২০ সালে দেশে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার এবং চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরকে রাজস্ব আদায় করতে হবে এবং একইসঙ্গে রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। ভ্যাট আদায়ের জন্য ২০২০ সালের আগস্ট মাসে পরীক্ষামূলকভাবে ইএফডি মেশিন বসানো হয়। এনবিআরের জনবল স্বল্পতার কারণে সারা দেশে ইএফডির মাধ্যমে ভ্যাট সংগ্রহ সম্ভব নয়। এজন্য আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ডিভাইস পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইএফডির বর্তমান কার্যক্রম সাফল্যের ভিত্তিতে পরবর্তীতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে সম্প্রসারণ করা হবে। ইএফডিএমএস একটি চমৎকার উদ্যোগ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আর্থিক ব্যবস্থাপনা স্মার্ট হওয়াটা জরুরি। এরইমধ্যে স্বয়ংক্রিয় চালান পদ্ধতি চালু এবং সঞ্চয়পত্র অনলাইনভিত্তিক করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা কোনো হয়রানি ছাড়াই কর ও ভ্যাট দিতে চায়। এজন্য অটোমেশনের বিকল্প নেই। ইএফডিএমএস সরকার ও ব্যবসায়ী উভয়ের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী উদ্যোগ এবং দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে ব্যবসায়ীরা সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাবে। বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট আহরণে এনবিআরের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিভাইস বসাবে জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড। এর ফলে ভ্যাট ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে শুধু সরকারের রাজস্বই বৃদ্ধি পাবে না বরং টেকসই অর্থনীতির পথেও দেশ এগিয়ে যাবে। ইএফডিএমএস ব্যবসায় উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং হিসাব শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। ভ্যাট প্রদানে এবং রিটার্ন দাখিলে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় যে জটিলতা ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন তা এ ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে অনেকাংশে দূর হয়ে যাবে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রতিবছরে ৬০ হাজার করে পাঁচ বছরে তিন লাখ ইএফডিএমএস মেশিন বসানো হবে। দেশে বর্তমানে মোট রাজস্বের প্রায় ৪০ শতাংশ আদায় হয় ভ্যাট থেকে। ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, বিপণি বিতান, হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ ২৫টি খাতে ইএফডিএমএস ডিভাইস বসানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত