ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আবাসিক এলাকায় অফিস

শহরমুখী মানুষের স্রোতে বাড়বে দুর্ভোগ
আবাসিক এলাকায় অফিস

ঢাকার ১০০ ফুট সড়কের দুইপাশে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুযোগ রেখে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তবে এমন জনগুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগে কোনো বিষয়টি নিয়ে, কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই করা হয়নি বলে গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবাসিক এলাকার নির্ধারিত প্লটে ঢালাওভাবে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ রাখলে যাতায়াত ও পরিবহনের চাপ আরো বাড়বে। স্থায়ী বাণিজ্যিক স্থাপনার পাশাপাশি সড়কের দুইপাশে অস্থায়ীভাবে কেনাবেচার মতো কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে। ফলে যানজট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হবে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ঢাকার মূল সমস্যা জনঘনত্ব ও ঢাকামুখী মানুষের স্রোত। তাই নগরীর সমস্যা সমাধানে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত কমানোর ওপর জোর দিতে হবে। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামও গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ঢাকায় কত মানুষ বসবাস করবে, তারও একটি সীমা ঠিক করতে হবে। এ নিয়ে নীতিমালা করার সময় এসেছে। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নীতিগত সুযোগ তৈরি হওয়ায় অনেকেই বেশি লাভের আশায় নির্দিষ্ট ফি দিয়ে আবাসিক প্লট বাণিজ্যিকে রূপান্তর করার সুযোগ কাজে লাগাতে চাইবেন জমির মালিক। এর ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বটে; কিন্তু সেই সূত্রে গ্রাম ও মফস্বল থেকে রাজধানীমুখী মানুষের স্রোতও বাড়বে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) গত বছর সংশোধিত ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) প্রকাশ করেছে। সেখানে ঢাকার জনঘনত্ব কমাতে ভবনের উচ্চতা কমিয়ে দিয়েছে। এলাকাভিত্তিক গণপরিসর বিবেচনায় ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ঢাকায় ধারণক্ষমতার চেয়ে চারগুন বেশি মানুষের বসবাস।

আর নাগরিক সুবিধা রয়েছে প্রয়োজনের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। রয়েছে ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় ছয়গুন বেশি গণপরিবহন। এ অবস্থায় বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ ঘটলে রাজধানীর অবস্থা শোচনীয় হবে। ২২ শর্ত ও বিষয় নিয়ে নতুন নীতিমালা গত ৩ মে রাজউকের আওতাধীন গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের আবাসিক প্লটে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার নীতিমালা অনুমোদন করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এই নীতিমালা অনুযায়ী, ১০০ ফুট প্রশস্ত সড়কের দুইপাশের আবাসিক প্লটে শর্তসাপেক্ষে বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তোলার অনুমোদন দেওয়া হবে। বেসরকারি হাউজিং প্রকল্পও এ সুযোগে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সম্প্রসারণ ঘটাতে পারবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ আরো বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকায় আরো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানানো স্বাভাবিক বসবাসের জন্য সহায়ক হবে না বলে নগররিদরা মনে করছেন না। কেননা, এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে আবাসিক পরিবেশ নষ্ট হবে। যানজট, জনজট ও জনদুর্ভোগ বাড়বে। অনেকে বলছেন ‘এই নীতিমালা রাজউকের সংশোধিত ড্যাপের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কেননা, সেখানে জনঘনত্ব কমাতে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

আবার ঢালাওভাবে বাণিজ্যিকের অনুমোদন দেওয়ার নীতিমালা অনুমোদন করা হয়েছে। এটা রীতিমতো স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত। ঢালাওভাবে আবাসিক এলাকার নির্ধারিত সড়কগুলোয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দিলে ঢাকার ওপর চাপ বাড়বে। ওইসব এলাকার বাসযোগ্যতার মানও কমে যাবে। তবে রাজকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকার বিভিন্ন এলাকাতেই আবাসিক প্লটে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো নীতিমালা না থাকায় ৬০ ফুট ও ৮০ ফুট সড়কের পাশেও অনেক বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য আবেদন জমা পড়েছে। এ নীতিমালার মাধ্যমে এতদিনের বিশৃঙ্খল অবস্থাকে কিছুটা শৃঙ্খলায় আনা হচ্ছে। তবে এর মাধ্যমে প্লট মালিকরা যাতে উৎসাহী না হন, সেজন্য প্লটের শ্রেণি পরিবর্তনের ফি দ্বিগুণ করা হয়েছে। এদিকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এসব আবাসিক এলাকার কিছু সড়কে বাণিজ্যিক অনুমোদন দেওয়া ছিল। কোনো নীতিমালা না থাকায় সেসব সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এজন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে করে রাজউক শৃঙ্খলভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত