ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায়ভার কার

আহসান হাবিব
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায়ভার কার

প্রতিটি রাতের শেষে সূর্য ওঠার মধ্যদিয়ে শুরু হয় আরেকটি কর্মমুখর দিন। শুরু হয় নিরন্তর ছুটে চলা। তারই মধ্যে একটু অবসর। একটু অবকাশ নেওয়া। প্রতিটি ক্ষেত্রে হাসি-কান্না, আনন্দ-বিষাদ নিয়েই মানুষের জীবন। কিন্তু সেই আনন্দ-বিষাদের মধ্যে হানা দিয়েছে ডেঙ্গু। করোনাভাইরাসের মতোই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গুর প্রভাব। মশাবাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে আলাদা। এই জ্বর ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে অথবা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) ও ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গেও হতে পারে।

বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। এরপর থেকে প্রতি বছর বহু মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু জ্বরে সারা দেশে মারা যায় ১৭৯ জন। ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে মারা যান ৭ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জন মারা যান।

ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব চলা অবস্থায় ২০২০ সালে সারা বিশ্বে হানা দেয় করোনা। ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সাল পুরোটাই ছিল করোনাভাইরাস মহামারির ২ বছর। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশকেও বিপর্যস্ত করেছে এ ভাইরাস। সেই থেকে এখনও প্রতিদিন করোনাভাইরাসে মারা যাচ্ছে দুই-একজন রোগী। এখন করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে।

তবে বর্তমানে করোনাভাইরাসের মতো চলছে ডেঙ্গু জ্বরের মহামারি। সারা দেশে বেড়েছে এর প্রকোপ। করোনাভাইরাস যদি নিয়ন্ত্রণে আসে, তাহলে ডেঙ্গু কেন নিয়ন্ত্রণে আসবে না? শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। কি করছে দুই সিটি করপোরেশন তা বোধগম্য নয়।

বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছে প্রায় ৬ হাজার রোগী। এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ডেঙ্গুর প্রভাব গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ১ হাজারের বেশি রোগী এবং প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন ৫ থেকে ৭ জন। ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার আক্রমণে এর বিস্তার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার শেষ নেই। বিপুল অর্থ খরচের পরও কেনইবা কর্তৃপক্ষ এডিস মশার কাছে পরাজয় বরণ করছে; তা নিয়ে হাজারও প্রশ্ন দেশবাসীর। রাজধানী ঢাকার মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার ফল ভোগ করছে পুরো দেশবাসী।

দেশে জ্যামিতিকহারে বাড়ছে ডেঙ্গু। সরকারি হিসাবেই গেল এক সপ্তাহে (৬-১২ জুলাই) ৫ হাজার ৬৮৮ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময় মারা গেছেন ২৬ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহের মধ্যে ৬ জুলাই বৃহস্পতিবার ৬৬১ জন, শুক্রবার ১৮১ জন, শনিবার ৮২০ জন, রোববার ৮৩৬ জন, সোমবার ৮৮৯ জন, মঙ্গলবার ১ হাজার ৫৪ এবং বুধবার ১ হাজার ২৪৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসাপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ৮১২ জন ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হন। এমন নাজুক পরিস্থিতিতেও এখনও অনেক হাসপাতালে আক্রান্তদের মশারি ব্যবহার নিশ্চিত করানো যাচ্ছে না। ডেঙ্গুর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দীর্ঘসূত্রিতা হচ্ছে। সব হাসপাতালে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ড বা কর্নার খোলা হয়নি।

বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, এডিস মশার প্রজনন রুখতে ব্যর্থ, তারা ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের জন্য দায়ী। বর্তমানে ঢাকায় মশার প্রজনন বৃদ্ধি বা কমার সঙ্গে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের খামখেয়ালিপনা এবং কর্তব্যে অবহেলাই দায়ী। কোনোভাবেই তারা তাদের এই ব্যর্থতা এড়িয়ে যেতে পারেন না।

২০১৯ সালে মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। প্রায় চার বছর অতিবাহিত হলেও তার কোনো বাস্তবায়ন লক্ষ্য করা যায়নি। কার্যকর সুফল পেতে বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। যেনতেনভাবে কার্যক্রম পরিচালনায় এডিস মশার প্রাদুর্ভাব কমবে না। পাশাপাশি নগরবাসীকেও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আন্তরিক হতে হবে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে কাজ করতে হবে। এডিস মশা বা মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়ন সিটি করপোরেশন করতে চায় কি না, সেটা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। সিটি করপোরেশন যেভাবে জোড়াতালি দিয়ে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে, এতে নগরবাসীর কোনো সুফল মিলছে না।

সিটি করপোরেশনকে এখান থেকে বেরিয়ে এসে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নইলে বিদ্যমান অবস্থার উন্নতি হবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত