ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চাকরির আবেদনে ফি বৃদ্ধি

বেকার যুবকদের জন্য বাড়তি বোঝা
চাকরির আবেদনে ফি বৃদ্ধি

সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে আবেদন ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে শিক্ষিত বেকারদের জন্য চাকরির ফি বৃদ্ধি বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। চাকরির আবেদনের ফির সঙ্গে বাড়তি ভ্যাট আরোপ ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন ভুক্তভোগীরা। অবিলম্বে ভ্যাট প্রত্যাহার ও শূন্যপদগুলোতে দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করে বেকারদের কর্মসংস্থান তৈরির দাবি করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। সরকারি চাকরিতে পরীক্ষার ফির সার্ভিস চার্জের (টেলিটকের কমিশন) ওপর ভ্যাট যোগ করে পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। ফলে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরির আবেদন ফি বাড়বে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, টেলিটকের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন ও পরীক্ষার ফি নেওয়া হবে। পরীক্ষার ফি বাবদ সংগ্রহ করা অর্থের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমিশন হিসেবে টেলিটককে দিতে হবে এবং কমিশন হিসেবে পাওয়া অর্থের ১৫ শতাংশ ভ্যাট হিসেবে আদায় করা হবে। এখন থেকে নবম গ্রেডে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন ফি হবে ৬০০ টাকা। এর সঙ্গে টেলিকম বাংলাদেশের সার্ভিস চার্জ ১০ শতাংশ বা ৬০ টাকা দিতে হবে। আর ৬০ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ বা ৯ টাকা ভ্যাট দিতে হবে। অর্থাৎ নবম গ্রেডে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন করতে মোট ৬৭৫ টাকা দিতে হবে। একইভাবে দশম গ্রেডে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন ফি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে ৫০ টাকা সার্ভিস চার্জ ও ৭ টাকা ৫০ পয়সা ভ্যাট দিতে হবে। অর্থাৎ দশম গ্রেডে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন করতে মোট ৫৫৭ টাকা ৫০ পয়সা দিতে হবে। ১১ ও ১২তম গ্রেডে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন ফি ধরা হয়েছে ৩০০ টাকা। এর সঙ্গে ৩০ টাকা সার্ভিস চার্জ ও ৪ টাকা ৫০ পয়সা ভ্যাট দিয়ে আবেদনকারীকে মোট ৩৩৪ টাকা ৫০ পয়সা দিতে হবে। ১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ টাকা। এর সঙ্গে সার্ভিস চার্জ ২০ টাকা ও ভ্যাট ৩ টাকা যোগ করে আবেদনকারীকে মোট ২২৩ টাকা দিতে হবে। আর ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডের চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে ১০ টাকা সার্ভিস চার্জ ও ১ টাকা ৫০ পয়সা ভ্যাট যোগ করে আবেদনকারীকে ১১১ টাকা ৫০ পয়সা দিতে হবে। উচ্চ শিক্ষিত চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, কারা চাকরির আবেদনের সঙ্গে চাকরির ফির বিপক্ষে। আমাদের সবার আবেদন ছিল কমানো। এখন উল্টো বাড়ানো হলো। নবম-দশম গ্রেডের চাকরির জন্য ২০০ টাকা ও বাকি গ্রেডগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো ফ্রি বা ১০০ টাকা করা উচিত। তারা বলছেন, তারা প্রথমত বেকার। বেকার অবস্থায় প্রতিমাসে অনেক কষ্টে আমাদের আবেদনের টাকা যোগাড় করতে হয়। বাধ্য হয়ে অভিভাবকদের কাছে হাত পাততে হয়। এটা অভিভাবকাদের জন্যও এক ধরনের চাপ। সরকারের এমন আচরণে আমরা হতাশ। সরকারের উচিত ছিল আবেদন ফি কমিয়ে বেকারদের পাশে থাকা। বেকার যুবকরা বলছেন, আবেদন ফিতে সরকার ট্যাক্স বসিয়েছে ১৫ শতাংশ। নিসন্দেহে এটা অমানবিক ও অবিবেচক সিদ্ধান্ত। সরকারের যেখানে বেকারবান্ধব হওয়ার কথা উল্টো বেকারদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতিকূল আচরণ করছে। এটা খুবই অমানবিক সিদ্ধান্ত। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে চাকরিতে আবেদনের কোনো ফি নেওয়া হয় না। সেখানে বাংলাদেশ যেন আবেদন ফি নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বেকাররা পড়াশোনা শেষে কষ্টে দিন পার করে। তাই উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বেকার ভাতা চালু করা উচিত। বেকার যুবকদের দীর্ঘদিনের দাবি চাকরির আবেদনে পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট প্রথা বাতিল করে নিয়োগ আবেদন সহজ ও স্বল্পমূল্য করা। সেখানে সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত যুবকদের আরো হতাশ করবে। নিয়োগের দীর্ঘসূত্রিতা, ঘুষ বাণিজ্য ইত্যাদির কারণে দেশের বেকার যুবকরা দিশাহীন। তার ওপর নতুন করে অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে এ ভ্যাট তাদের ওপর বাড়তি চাপ। পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট প্রথা বাতিল করে চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুতকরণের দাবি জানান বেকার যুবকরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত