ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দেশ হবে সুন্দর সোনার বাংলাদেশ, এটাই প্রত্যাশা

তৌফিক সুলতান
দেশ হবে সুন্দর সোনার বাংলাদেশ, এটাই প্রত্যাশা

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এদেশের প্রান্তিক ও গ্রামীণ পর্যায়ের সাধারণত মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বিগত ৫০ বছর ধরে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন এই ডিএমএফ ডিগ্রিধারী উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারগণ।

আমাদের দেশে কেন বারবার এমন ঘটনা ঘটছে, একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক পাচ্ছে না, তাদের কাঙ্ক্ষিত সম্মানি। ম্যাটস শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না নিয়োগ অন্য দিকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড-এর আওতাভুক্ত করে কিছু সময় গণহারে মেডিকেল শিক্ষার্থী তৈরি করে পরে বন্ধ করে দেওয়া হয় কারিগরি বোর্ডের মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স যা এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।

ম্যাটস আসলে কি আমরা জানি? ২০১৯ সালে ৩ ডিসেম্বর যখন বাংলা উইকিপেডিয়াতে এ মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) নিয়ে নিবন্ধন লেখি, তখন এর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হয়েছিল উইকিপেডিয়া সহযোদ্ধাদের।

ম্যাটস হলো মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল যা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান। এটিকে সংক্ষেপে ম্যাটস বলা হয়। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের ট্রেনিং স্কুলের সংখ্যা ২০৯। বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন সরকারি ৯টি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল রয়েছে।

বাংলাদেশের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৭৩-৭৮) অনুযায়ী জনগণের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার সেবার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৬ সালে সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের অধীনে ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স চালু করে পরবর্তী সময়ে এটি ৪ বছর মেয়াদি করা হয়। এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের কারিকুলাম অনুসরণ করে।

এ প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থী ৪ বছর ধরে এমবিবিএস কোর্সের প্রায় সববিষয় যেমন মাইক্রোবায়োলজি, প্যাথলজি, ফিজিওলজি, অ্যানাটমি, মেডিসিন ও পেডিয়াট্রিক, গাইনেকোলোজি ও অবস্টেট্রিক্স, বেসিক সার্জারি, জনস্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন প্যারাক্লিনিক্যাল ও ক্লিনিক্যাল বিষয়গুলো অধ্যয়ন করে।

অথচ স্বাস্থ্য খাতে বিগত ৪৮ বছরে বাস্তবায়ন হলো না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৭৩-১৯৭৮) অনুযায়ী ম্যাটস শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা প্রদান। বাংলাদেশে অন্যান্য সব ডিপ্লোমা সেক্টরে সরকারি চাকরির নিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকলেও ম্যাটস ডিপ্লোমাধারীদের বিগত এক যুগ ধরে কোনো সরকারি নিয়োগ বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশের সব সরকারি-বেসরকারি ম্যাটস শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিগুলো আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝোলানোসহ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কঠোর থেকে কঠোরতর ছাত্র ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বক্তারা এ সময় ইন্টার্নশিপ বহাল ও অসংগতিপূর্ণ কোর্স কারিকুলাম সংশোধনসহ ৪ দফা দাবি পূরণে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

চার দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ম্যাটসের শিক্ষার্থী গত ২৫ আগস্ট থেকে ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করে আসছে। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইন্টার্নশিপ বহালসহ কোর্স কারিকুলাম সংশোধন, এলাইড হেলথ বোর্ড বাতিল করে অবিলম্বে মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ নামে স্বতন্ত্র বোর্ড গঠন, কর্মসংস্থান সৃজন এবং দ্রুত নিয়োগ ব্যবস্থা, বঙ্গবন্ধুর পঞ্চমবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী উচ্চ শিক্ষা প্রদান। সভায় বক্তারা তাদের উক্ত চারটি দাবি মানার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান। তারা বলেন- ‘আমাদের চারটি দাবিই শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি।’

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাফিসা মুমতাজ বলেন, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২০ হাজারের বেশি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদ খালি রয়েছে। কিন্তু প্রায় এক যুগ ধরে কোনো নিয়োগ নেই। তাই এই পদে দ্রুত নিয়োগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি। শিক্ষার্থী হাসিবুল হোসেন শান্ত বলেন, মানুষের দোরগোড়ায় স্বল্প খরচে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে ম্যাটস প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ৪০ বছর পরেও মেলেনি উচ্চশিক্ষার সুযোগ। শিক্ষাব্যবস্থার এসব সমস্যার জন্য ঝরে যায় অনেক শিক্ষার্থী, এদের দায় কার?

যখন দেখে বড়রা এতো কষ্ট করে পড়াশোনা করে টাকা খরচ করে উপযুক্ত স্থানে যেতে পারছে না, তখন নবীন শিক্ষার্থীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ভেঙে পড়ে অমনোযোগী হয়ে পড়ে পড়াশোনায়, যার ফলে পড়াশোনা বন্ধ করে কাজে লেগে পড়ে, পরিবারে হাল ধরার জন্য। বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে খরচ করতে না পারায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৫ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা সরকারি তহবিলে ফেরত গেছে। করোনা অতিমারির মধ্যে টিকা, ভেন্টিলেটর, অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কিনতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ১৩ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। তারা খরচ করতে পেরেছে ৮ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

জানা গেছে, বাজেটে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রয়োজনের চেয়ে এমনিতেই বরাদ্দ থাকে কম। যে টাকা বরাদ্দ করা হয় তার একটি বড় অংশই খরচ করতে না পারায় ফেরত যায়। শুধুমাত্র বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরেই নয়, গত কয়েক বছর ধরেই এই চিত্র বাংলাদেশে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে স্বাস্থ্যক্ষেত্রের জন্য বরাদ্দ করা হয় ৯ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা।

ম্যাটস কখনো এমবিবিএস এর সমমনা হতে পারে না। কারিগরি নার্সিং এবং কেয়ার গিভিং হতে পারে না বিএসসি নার্সিং-এর সমমনা। কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধিভুক্ত থাকা ডেন্টাল, ফার্মেসি, প্যাথলজিসহ কোনো কোর্স ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) সমমনা হতে পারে না।

একইভাবে উল্লেখিত কোনো সাটিফিকেটই বিডিএস, এমবিবিএস, বিএসসি’র সমমনা হতে পারে না। তবুও এই বিষয়গুলো নিয়ে শুরুর লগ্ন থেকে চলে আসছে অসঙ্গতি-এর জন্য দায়ী কোর্স শেষে যথাযত স্থানে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকা।

যেহেতু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নেই তাই ম্যাটস ও ডিপ্লোমা ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ শুরু করে চেম্বার। যা একজন এমবিবিএস এবং বিডিএস ও এতো দ্রুত চেম্বার করার সুযোগ পায় না, তবে এ কাজগুলো সবাই করে না কিছু সংখ্যা শিক্ষার্থীরা এমনটা করে। এরই ধারাবাহিকতায় নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হয়, যেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই অনেক কম ভিজিট এ রোগে দেখে, এমনকি সার্জারিও করে, যার ফলে অনেক দুর্ঘটনার শিকার হয় রোগীরা- যা আমরা বিভিন্ন নিউজে দেখতে পাই।

শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে বন্ধ করতে হবে আন্দোলন শিক্ষার্থীরা কেন আন্দোলন করবে? কর্তৃপক্ষের কি উচিত নয়, এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখা শিক্ষার্থীদের ভালো এবং মন্দ। আন্দোলনে না নামা পর্যন্ত কোনো বিষয় সমাধান হয় না কেন, এমনটা হবে এমন চলতে থাকলে দেশ এগুবে কি করে। একটা সময় দেখা যাবে, ভালো-মন্দ না বুঝেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। কারণ কোনো কিছুতে মানুষ একবার স্বাদ পেয়ে গেলে তা বারবার করতে চাই। তাছাড়া এই আন্দোলন শুধু শিক্ষার্থী বা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ক্ষতি হচ্ছে না, ক্ষতি হচ্ছে চারপাশের মানুষ সর্বপরি রাষ্ট্রের।

তাই কর্তৃপক্ষের উচিত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাসহ সব সমস্যার দিকে নজর দিয়ে ঢেলে সাজানো শিক্ষাক্রম শাসনব্যবস্থা ও সব নীতিনৈতিকতার শিক্ষা। সমস্যা কোথায় তা অনুসন্ধান করুন এবং সমাধান করুন আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে প্রয়োজনে আলোচনা করুন, যতক্ষণ পর্যন্ত না সমাধানে পৌঁছানো যায়। দুর্নীতি দমনে সোচ্চার হতে হবে, ঘোষণা করতে হবে, জিরো টলারেন্স। থাকতে হবে স্বচ্ছতা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগ জরুরি! আমাদের দেশ হবে এক পরিকল্পিত কোলাহলমুক্ত সুশৃঙ্খল সুন্দর সোনার বাংলাদেশ এই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা মেডিকেল ইনস্টিটিউট

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত