সর্বত্র শিশু নির্যাতন

ব্যাঘাত হচ্ছে মানসিক বিকাশ

প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আমাদের সমাজে শিশু নির্যাতন এক ধরনের সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এই ব্যাধি এখন পরিবার থেকে শুরু করে শিশুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। তবে পারিবারিক অঙ্গনেই একটি শিশু সবচেয়ে বেশি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া না করার জন্য শিক্ষকরা তেমন একটা বকাঝকা না করলেও শিশুরা অনেক সময় বুলিংয়ের শিকার হয়ে থাকে। পরিপত্র জারি করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর থামছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশু নির্যাতন। আর শিশুশ্রমে যারা নিযুক্ত কিংবা যারা পথশিশু তাদের কাছে নির্যাতন, লাঞ্ছনা, যৌন নিপীড়ন তো নিত্যদিনের ঘটনা। এমনকি ডিজিটাল জগতে প্রবেশ করেও হয়রানির শিকার হচ্ছে শিশুরা। নির্যাতনের কারণে শিশুদের সুষ্ঠু বিকাশে ব্যাঘাত ঘটে। বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, কোনোভাবেই শিশুদের শারীরিক ও মানসিকভাবে হয়রানি করা ঠিক নয়। এতে তাদের সুষ্ঠু বিকাশে ব্যাঘাত ঘটবে। শিশুদের অবহেলা করাও এক ধরনের নির্যাতনের প্রক্রিয়া। শিশুদের চাওয়া-পাওয়ার মূল্য দিতে হবে। বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে।

বাংলাদেশে বর্তমানে ৫ কোটি ৭০ লাখের কাছাকাছি শিশু রয়েছে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। এর মধ্যে ১৪ বছরের নিচে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি শিশু বাড়িতে শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার শিকার হচ্ছে। শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন, এমন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মতে দেশে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে শিশুধর্ষণ ও শিশুর ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা। তবে শ্রমের সঙ্গে নিযুক্ত সব শিশুই নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। কাজেই সামান্য ভুল কিংবা কাজে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হলে মারধর করা হয়। গৃহশ্রমে নিযুক্ত শতভাগ শিশুই নির্যাতনের শিকার। অনেক অভিভাবক বলে থাকেন, বাচ্চাদের শাস্তি না দিলে তারা পড়া মুখস্থ করতে চায় না। তাদের ভয়ের মধ্যে রাখলে পড়ায় মনোযোগী হয়। এ ধারণা এখন ভুল। বাংলাদেশে ৯৫ দশমিক ৮ জন শিশু নানাভাবে ঘরেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হয় বাবা-মা ও অভিভাবকদের দ্বারা। আর এসব নিপীড়ন চালানো হয় শান্তি ও নিয়মানুবর্তিতার অজুহাতে। পারিবারিক অস্থিরতা ও দাম্পত্যকলহের কারণেও শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। শিশুর প্রতি সহিংসতার প্রধান কারণ পারিবারিক অস্থিরতা ও দাম্পত্যকলহ। পারিবারিক কলহের একপর্যায়ে শিশুর প্রতি সহিংসতা এমনকি হত্যা অবধি পৌঁছায়। শিশুকে অতিরিক্ত শাসন বা মারধর করা হলে সে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। অনেক সময় মানসিক নির্যাতনের ফলে শিশুদের স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে। মানসিক নির্যাতনের ফলে শিশুটির ভবিষ্যৎ জীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই শিশুদের ভবিষ্যৎ জীবন সুন্দর করতে হলে তাদের মানসিক জীবনকে সুন্দর করা জরুরি।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সি ৩২ শতাংশ শিশু অনলাইন সহিংসতা, অনলাইনে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ডিজিটাল উৎপীড়নের শিকার হওয়ার মতো বিপদের মুখে রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের শাস্তি নিষিদ্ধ করে আইন থাকলেও তা থামছে না। আইন থাকলেও কিছুতেই শিশুশ্রম থামছে না। এতে শিশুরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যারা এ ধরনের কাজ করছেন, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। শিশুর গায়ে হাত তোলা বা শিশুর মনটা ছোট করে দেওয়ার ফলে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়। অনেক সময় তারা জায়গামতো কথা বলতে পারে না, তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশ ঘটে না। শিশুদের প্রতি নির্যাতন, শারীরিক ও মানসিকভাবে হয়। আমাদের নানা রাগ শিশুদের ওপর চাপিয়ে দেই। অনেক সময় তাদের চাওয়া-পাওয়ার মূল্য দেওয়া হয় না। অভাব-অনটন থাকলেও শিশুদের চাওয়া-পাওয়ার মূল্য দিতে হবে। শিশুর ওপর শারীরিক ও মানসিকভাবে আঘাত করা হলে তারা নানা অপরাধ-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে। তাই নিজের সন্তানই হোক বা পরের সন্তান হোক, শিশুদের শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করা থেকে বিরত থাকা দরকার।