সাত কলেজের এক দাবি

পর্যালোচনা করে আসতে হবে সঠিক সিদ্ধান্তে

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ‘এক দফা’ দাবি কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেনই বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এসব কলেজকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিল সেটাও পরিষ্কার নয়। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতো সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রমোশন-সংক্রান্ত সুবিধা পাচ্ছেন। দুই বিষয়ে অকৃতকার্য হলেও শিক্ষার্থীরা শর্তসাপেক্ষে পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণের সুযোগ পাচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো শিক্ষার্থীর প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে সিজিপিএ-২, দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় বর্ষে সিজিপিএ-২.২৫ এবং তৃতীয় থেকে চতুর্থ বর্ষে প্রমোশন পেতে-২.৫ পেতে হবে। তা না হলে ওই শিক্ষার্থীকে আবারো আগের বর্ষে থাকতে হবে। এখানেই শিক্ষার্থীদের আপত্তি। তারা চান সিজিপিএ শর্ত শিথিল করে তিন বিষয়ে অকৃতকার্য হলেও পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণের সুযোগ দেওয়া। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যুক্তি হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল যথাসময়ে প্রকাশ করা হলেও সাত কলেজের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে ৮ থেকে ৯ মাস সময় নেওয়া হয়, যা শিক্ষাজীবনকে বিপাকে ফেলছে। ফলাফল প্রকাশে সময়সীমা তিন মাসে নামিয়ে আনার জন্য এর আগেও দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন ব্যর্থ হবে সেটাও আরেকটা প্রশ্ন। যেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পারবে না সেই দায়িত্ব নেয়ার কি দরকার ছিল।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘আমরা পরবর্তী বর্ষের প্রস্তুতির জন্য ইনকোর্স ও টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে থাকি। আর ফল প্রকাশিত হয় ৮ থেকে ৯ মাস পর। এই দীর্ঘ সময় পরে যদি জানতে পারি আমি তিন বিষয়ে অকৃতকার্য, তাহলে কীভাবে বিগত বর্ষের সব বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব?’ তাই নির্ধারিত সিজিপিএ শিথিল করে তিন বিষয় পর্যন্ত মানোন্নয়ন পরীক্ষার মাধ্যমে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন দরকার। তবে সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়ার আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রমোশন সুবিধা পেতেন শিক্ষার্থীরা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে প্রমোশনের জন্য কমপক্ষে তিনটি বিষয়ে পাস করতে হবে এবং সিজিপিএ ১ দশমিক ৭৫ অর্জন করতে হবে। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে তৃতীয় বর্ষে প্রমোশনের জন্য কমপক্ষে তিনটি বিষয়ে পাস করতে হবে এবং কমপক্ষে সিজিপিএ-২ পেতে হবে। আর তৃতীয় বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষে প্রমোশনের জন্য কমপক্ষে চারটি বিষয়ে পাস করতে হবে এবং কমপক্ষে সিজিপিএ-২ দশমিক ২৫ পেতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রমোশন নিয়ম অনেকটা শিথিল। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, যেহেতু শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে পড়ছেন, এ কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধান মানতে হবে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সিজিপিএর শর্ত শিথিল ও মানোন্নয়ন পরীক্ষা নিয়ে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশনের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের বাইরে। তাই এটি পরিবর্তনের সুযোগ নেই। এর পরও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নীতিমালা রয়েছে। সেই আলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সব শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে ছাত্রদের এই দাবি পূরণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি নীতিমালায় কিছুটা ছাড় দেয়, তাতে সমস্যার সমাধান সম্ভব। এছাড়া সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক একটি নীতিমালা করা যেতে পারে। তিন বিষয়ে অকৃতকার্য হলেও প্রমোশন দেওয়ার জন্য ২০১৯ সাল থেকে দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ- এই সাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করা হয়। শিক্ষার মানোন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয় ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সরকারি সাত কলেজকে। অধিভুক্তির শুরু থেকেই ছিল সমন্বয়হীনতা, যা এখনো চলছে। তবে এ অবস্থা আর কতদিন চলবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের এক দফার দাবিতে নীলক্ষেত বন্ধ করে সমাবেশ করবে আর সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ পোহাবে এটা কাম্য নয়। তাই অবিলম্বে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না পারলে এসব শিক্ষার্থীদের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।