ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দূষণে ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা

জিল্লুর রহমান
দূষণে ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ এবং ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। ২০১৭ সালে ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ওয়ার্ল্ডফিশের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে। ইলিশ পছন্দ করে না, এমন বাঙালি দেশে ও বিদেশে খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। ইলিশ স্বাদে ও গুণে সত্যিই অতুলনীয়। সাগর ও নদী দুই জায়গায়ই ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র। বিগত বছরগুলোতে ইলিশ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল এবং এমন প্রেক্ষাপটে মা ইলিশ শিকারের ওপর অবরোধসহ সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশের বিচরণক্ষেত্রে পানির গুণগত মানের ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। সেই সঙ্গে কমছে ইলিশের জন্য প্রয়োজনীয় খাবারের পরিমাণ। ইলিশ গবেষকরা বলছেন, এর ফলে ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদনের ওপর একসময় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এরইমধ্যে নদীতে ইলিশের উৎপাদন কমে গেছে। এর অন্যতম কারণ নদীর পানি দূষণ। ইলিশের যেসব বিচরণক্ষেত্র আছে, সরকারের মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুর সেসব স্থানে দীর্ঘ সময় ধরে পানির মান পরীক্ষা করে আসছে। এ প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা প্রতিবছর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও-ডিসলভ অক্সিজেন), পিএইচ, পানি ও বায়ুর তাপ, হার্ডনেস (ক্ষারত্ব), অ্যামোনিয়ার পরিমাণ ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করেন। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলজ প্রতিবেশে দূষণ যে কোনো মাছের জন্যই ক্ষতিকর। তবে ইলিশ অনেক বেশি সংবেদনশীল মাছ এবং দূষণের ফলে প্রতিবেশের সামান্য পরিবর্তন ইলিশ নিতে পারে না। ইলিশ তার গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে। পানিতে অ্যামোনিয়ার বৃদ্ধি ইলিশের খাবারের চাহিদায় পরিবর্তন করতে পারে। ইলিশের বিচরণক্ষেত্রে পানির মান বিচারে অন্যতম নিয়ামক হলো পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন বা ডিও। যদি ডিওর পরিমাণ প্রতি লিটারে পাঁচ মিলিগ্রামের কম হয়, তবে তা জলজ পরিবেশের জন্য কম উপযোগী বলে বিবেচিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, পদ্মায় গত পাঁচ বছরে ডিওর মান কমেছে। ২০১৮ সালে পদ্মার পানিতে ডিওর গড় মান ছিল আট দশমিক ৭০ এবং এরপর থেকে প্রায় প্রতিবছর কমছে। ২০২২ সালে ডিওর মান ছিল পাঁচ দশমিক ৪১। মেঘনায় ২০১৮ সালে ডিওর গড় মান ছিল আট দশমিক ৪০ এবং এটি ২০২২ সালে কমে ছয় দশমিক ৮৪ শতাংশ হয়েছে। নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি রাসায়নিক যৌগ হলো অ্যামোনিয়া। যে পানির মান ভালো, সেখানে এর উপস্থিতি শূন্য থাকতে হয়। পদ্মায় ২০১৮ সালে পানিতে অ্যামোনিয়ার গড় উপস্থিতি ছিল শূন্য দশমিক চার ভাগ। গত বছরও তা-ই ছিল। কিন্তু মেঘনায় পানিতে অ্যামোনিয়ার গড় উপস্থিতি শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ এবং এটি গত বছর শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে, অ্যাসিড ও ক্ষারের পরিমাপক হলো পিএইচ। জলজ প্রাণীর সহনীয় পরিবেশের ক্ষেত্রে পিএইচ সাড়ে সাত থেকে সাড়ে আটের মধ্যে থাকতে হয় কিন্তু সাতের নিচে নয়। পদ্মা নদীতে পিএইচের গড় উপস্থিতি ছিল আট এবং গত বছর এর পরিমাণ কমে হয়েছে পাঁচ দশমিক ৪৭। মেঘনায় ২০১৮ সালে পিএইচের উপস্থিতি ছিল আট দশমিক ১৩ এবং ২০১৮ থেকে ২০২২-এর মধ্যে পদ্মায় পানির তাপমাত্রা প্রায় ২৫ থেকে বেড়ে ৩০ ডিগ্রি হয়েছে। এ সময় অবশ্য মেঘনায় পানির তাপ ২৭ দশমিক ৪০ থেকে কমে প্রায় ২৭ হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, নদীর পানি দূষণের ফলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ইলিশের আবাসস্থল। এটি পরিবেশ বা পানি দূষণের যেকোনো একটি কারণে হতে পারে। কারণ ইলিশের পেটে পাওয়া গেছে প্রায় ৩৬ শতাংশ বালু-কাদা। এতেই বোঝা যায় পানিতে বালি ও কাদা রয়েছে। এটা তো তাদের খাবার নয়। তারা পানি ফিল্টার করে খায়। কিন্তু পানিতে বালু-কাদা আছে বলেই তাদের পেটে তা চলে যাচ্ছে। এরপর কিন্তু সেটি হজম হচ্ছে না। তা ছাড়া, মা ইলিশ অল্প বয়সেই ডিম দিচ্ছে এবং এটি অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়। কারণ এই মাছ যখন বাচ্চা দেয়, স্বাভাবিক কারণেই সেটি ম্যাচিউরড বা পরিণত হয় না। ইলিশ গবেষকরা প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে আগামী দু-তিন বছর সর্বোচ্চ সাত লাখ টন পর্যন্ত ইলিশ আহরণ করতে। এর বেশি করলে প্রাকৃতিক যে মজুত আছে সেটির ওপর প্রভাব পড়তে পারে। মা ইলিশ মূলত বছরে সাধারণত দুইবার ডিম দেয়, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর (ভাদ্র মাস থেকে মধ্য কার্তিক) ও জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি (মধ্য পৌষ থেকে মধ্য ফাল্গুন)। তবে দ্বিতীয় মৌসুমের তুলনায় প্রথম মৌসুমে প্রজনন হার বেশি। একটি মা ইলিশ প্রতি মৌসুমে একবারে সর্ব্বোচ্চ এক থেকে দুই দশমিক তিন মিলিয়ন অর্থাৎ ১০ থেকে ২৩ লাখ পরিমাণ ডিম পাড়ে এবং নার্সিং গ্রাউন্ডে সারাক্ষণ ডিমের পরিচর্যা করে। সদ্য প্রসূত ডিমগুলোকে শত্রুর হাত থেকে বাঁচাতে কখনো কখনো তা মুখে পুরে সঙ্গে নিয়েও ঘুরে বেড়ায়। ডিম থেকে বাচ্চা না ফোটা ও সাঁতার শেখা পর্যন্ত মা ইলিশের পরিচর্যা চলতে থাকে। সাঁতার দেওয়ার উপযোগী হয়ে উঠলে বাচ্চারা মা ইলিশের সঙ্গে সাঁতার কেটে ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়ায়। ইলিশের বাচ্চা লালন-পালনে বাবা ইলিশও ভূমিকা রাখে। মা ইলিশ যখন বাচ্চাদের রেখে খাদ্যান্বেষণে যায় তখন বাবা ইলিশ তাদের দেখাশোনা করে। ইলিশ পোনা ছয় থেকে ১০ সপ্তাহে ১২ সেন্টিমিটার থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হয়। তখন তাদের জাটকা বলে। একটি জাটকা মাছ পূর্ণাঙ্গ ইলিশে পরিণত হতে সময় নেয় এক থেকে দুই বছর। তখন আয়তনে ৩২ সেমি থেকে ৬০ সেমি এবং ওজনে এক থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। জাটকা মা ইলিশের সঙ্গে সমুদ্রে চলে যায়। সেখানে পূর্ণাঙ্গ ইলিশে পরিণত হয়ে আবার প্রজননকালে নদীতে ফিরে আসে। এত পরিচর্যার পরও মাত্র ১০-২০ শতাংশ জাটকা সমুদ্রের নোনা পানিতে সঠিকভাবে বেড়ে উঠার সুযোগ পায়। কারণ ডিমের প্রায় ৩০ শতাংশ অন্যান্য মাছ ও প্রাণীদের আহারে চলে যায়। ১০ শতাংশ অপুষ্ঠিজনিত কারণে শুরুতেই নষ্ট হয়ে যায়। পরে প্রায় ২০ শতাংশ পোনা এবং ৩০ শতাংশ জাটকা হিসেবে জেলেদের জালে ধরা পড়ে। বলা হয়, যদি ৫০ শতাংশ ডিমও যথার্থভাবে বেড়ে উঠতে পারত তাহলে বিভিন্ন নদী ও বঙ্গোপসাগরের অর্ধেকটা ইলিশের দখলে চলে যেত। গবেষকরা বলছেন, পানি দূষণ ও জিনগত কারণে দেশের নদীতে ধরা পড়া ইলিশের আকার ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। ছোট হচ্ছে মাছের ডিম্বাশয়ের আকারও। এতে কমছে ডিমের পরিমাণ। ছোট আকৃতির মাছের ডিম থেকে জন্ম নেওয়া ইলিশও হচ্ছে খর্বাকৃতির। এর মধ্যে আবার অনেক মাছ ডিম দিচ্ছে অল্প বয়সে। সেই ডিম থেকে জন্ম নেওয়া ইলিশও হচ্ছে আকারে ছোট। ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের তথ্য বলছে, দেশের নদ-নদী ও সাগরে ইলিশের বার্ষিক সর্বোচ্চ সহনশীল উৎপাদন অর্থাৎ আহরণ মাত্রা সাত লাখ ৭০৫ মেট্রিক টন। এর চেয়ে বেশি মাছ আহরণ হলে ইলিশের প্রাকৃতিক মজুত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে ভবিষ্যতে ইলিশ উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বর্ষার সময় ইলিশ মূলত দুটি কারণে সাগর ছেড়ে নদীর দিকে আসতে শুরু করে। একটি কারণ হলো খাবার সংগ্রহ, দ্বিতীয়টি প্রজনন। ইলিশের এই আগমনে নদীর পানির গুণাগুণ বড় নিয়ামক ভূমিকা রাখে। পানির মান ভালো হলে ইলিশের এই বিচরণ নির্বিঘ্ন হয়, জেলের জালেও আটকা পড়ে বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশ এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। গবেষকরা বলছেন, নদীর পানির তাপমাত্রা বেড়ে গেলে তা মাছের জন্য ক্ষতি বয়ে আনে। পদ্মা ও মেঘনায় ইলিশের বিচরণক্ষেত্রের ওপরের অংশে পানির দূষণ অপেক্ষাকৃত বেশি। কিন্তু নিচের দিকে কম। কারণ বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী শিল্পের বর্জ্য ও দূষিত পানি পদ্মা ও মেঘনার মাধ্যমে জোয়ার ভাটায় বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। মেঘনার পানির দূষণ পদ্মার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি। মেঘনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আছে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ। এসব নদীর পাড়ে অনেক কারখানা আছে। সেই তুলনায় পদ্মাপাড়ে কারখানার সংখ্যা কম। যেকোনো মাছ জলজ পরিবেশের খাবারের ওপরই নির্ভর করে। ইলিশের খাদ্যের মধ্যে ৪২ শতাংশই শৈবাল। এরপরই ৩৬ শতাংশ আছে বালু বা ধ্বংসাবশেষ। বাকি খাবারের মধ্যে আছে ডায়াটম, রটিফার, প্রোটোজায়া। ইলিশ মাছের খাদ্য তালিকায় মোট ২৭ প্রজাতির উদ্ভিদ কণা এবং ১২ প্রজাতির প্রাণী কণা রয়েছে। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের গবেষণা অনুযায়ী, ২০০৬ সালের তুলনায় গত বছরের হিসাব অনুযায়ী, ইলিশের খাবারের পরিমাণ ছয় শতাংশ কমে গেছে। নদীতে ইলিশের উৎপাদনের হার কমছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পদ্মা ও মেঘনায় ইলিশের উৎপাদনের হার আগের বছরের তুলনায় ৫৬ শতাংশের বেশি বেড়েছিল। পরের বছর এই বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় দুই শতাংশ। ২০১৮-১৯ সালে আড়াই শতাংশ। কিন্তু সর্বশেষ ২০১৯-২০ সালে তা কমে হয় শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা অনুযায়ী, পদ্মা ও মেঘনা-দুই নদীর উপরের দিকে দূষণ বেশি, পক্ষান্তরে দুই নদীর উপরের দিকে উৎপাদনও কমেছে। ২০১৭-১৮ সালে পদ্মার ওপরের দিকে এক হাজার ১১৭ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছিল। এটি ২০২০ সালে কমে যায় ৬০৪ মেট্রিক টনে। মেঘনায় ২০১৭-১৮ সালে এক হাজার ৭৭ মেট্রিক টন ইলিশের উৎপাদন ছিল। দুই বছর পর তা সামান্য বেড়ে এক হাজার ১১১ মেট্রিক টন হয়েছে। দেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে, এটি একটি স্বস্তিদায়ক খবর। কারণ প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়নের কারণে ইলিশ উৎপাদন বাড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ইলিশ গবেষকরা। দেশে ২০১৮-১৯ সালে ইলিশ উৎপাদন হয়েছিল পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার টন। ২০২০-২১ সালে এর পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার টন। কিন্তু মৎস্য গবেষকরা মনে করেন ইলিশের এই উৎপাদন বৃদ্ধিতে পানির দূষণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ভবিষ্যতে নদীর পানি দূষণ ইলিশের প্রজনন হার, ইলিশের আকার এবং সার্বিকভাবে এর উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শিল্পসহ নানা ধরনের বর্জ্য ইলিশের জলজ প্রতিবেশ নষ্ট করছে। এই বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা দরকার। ইলিশ গবেষকরা বলছেন, বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে ইলিশের গতিপথ। বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেলে নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ইলিশের আমদানিও বাড়ে। দ্য প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিস রুলস ১৯৮৫ সংশোধন করে ছয়টি ইলিশ অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এছাড়া দেশে এই মুহূর্তে পাঁচটি প্রজনন ক্ষেত্র আছে। সম্প্রতি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বলেশ্বর নদী ও মোহনা অঞ্চলের প্রায় সাড়ে সাত হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ইলিশের নতুন পঞ্চম প্রজনন এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আগে মায়ানী-মীরসরাই, পশ্চিম সৈয়দ আওলিয়া পয়েন্ট-তজুমুদ্দিন, গন্ডামারা-বাঁশখালী ও লতা চাপালি কলাপাড়া এলাকার মোহনা অঞ্চলে আরো চারটি প্রজনন এলাকা শনাক্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে শুরু করে ভোলার লালমোহন উপজেলা পর্যন্ত ইলিশের সবচেয়ে বড় প্রজনন ক্ষেত্র। বিশেষ করে মনপুরা, ঢালচর, বালিরচর, মৌলভীরচর- এগুলো হচ্ছে ইলিশের ডিম ছাড়ার সবচেয়ে বড় পয়েন্ট। চট্টগ্রাম, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা মিলিয়ে প্রায় সাত হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশ মাছ সবচেয়ে বেশি ডিম ছাড়ে। এর বাইরের উপকূলের অন্যান্য নদীগুলোতেও ইলিশ ডিম ছাড়ে। যে ছয়টি নদী এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে, সেসব জায়গায় ইলিশের ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন বেড়েছে। ইলিশের অভয়াশ্রমগুলো মূলত মেঘনা নদী ও এর অববাহিকা এবং পদ্মা ও মেঘনার সংযোগস্থলে অবস্থিত। এর মধ্যে চাঁদপুরে মেঘনা নদীর নিম্ন অববাহিকার ১০০ কিলোমিটার এলাকা, ভোলায় মেঘনা নদীর শাহবাজপুর শাখা নদীর ৯০ কিলোমিটার এলাকা, তেঁতুলিয়া নদীর প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা অন্যতম। এছাড়া পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা, বরিশালের হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জে মেঘনা নদীর প্রায় ৮২ কিলোমিটার এলাকা। প্রতি বছর মার্চ ও এপ্রিল, এই দুই মাস উল্লিখিত অভয়াশ্রমে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকে। এই সময় মাছ ধরা, বিক্রি, বিপণন, মজুত ও পরিবহন নিষিদ্ধ থাকে। ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। শুধু ইলিশের জন্য দরকার সঠিক প্রজনন, প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রয়োজনীয় খাবারের নিশ্চয়তা ও বেড়ে ওঠার সঠিক পরিবেশ। ইলিশ একটি নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ এবং দেশের অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব অপরিসীম। তা ছাড়া, অন্যান্য জলজ প্রাণীর তুলনায় ইলিশ অনেক বেশি সংবেদনশীল এবং দূষণের ফলে প্রতিবেশের সামান্য পরিবর্তন ইলিশ গ্রহণ করতে পারে না। এজন্য ইলিশ তার গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে এবং এটি বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়। আর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দূষণমুক্ত নদ-নদী নিশ্চিত করা, তাহলেই ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

জিল্লুর রহমান : ব্যাংকার ও কলাম লেখক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত