ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পঞ্চগড়ে চা নিলাম কেন্দ্র

বদলে দেবে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি
পঞ্চগড়ে চা নিলাম কেন্দ্র

উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে চালু হচ্ছে অনলাইন চা নিলাম কেন্দ্র। বর্তমানে চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলে দুটি চা নিলাম কেন্দ্র চালু রয়েছে। আগামী ২ সেপ্টেম্বর দেশের তৃতীয় এই চা নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধন করা হবে। এই চা নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি বদলে যাবে। মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে এবং অতীতের দরিদ্রপীড়িত এই জেলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরো গতিশীল হবে। চা নিলাম কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হলে চায়ের পরিবহন খরচ কমে যাবে। পাশাপাশি ব্যাপকভাবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। নিলাম কেন্দ্রে চায়ের উন্মুক্ত কেনাবেচায় ক্ষুদ্র চা চাষিরা চায়ের কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্যও পাবেন। এতে গোটা উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। পঞ্চগড় জেলার চা শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে। অনলাইন এই চা নিলাম কেন্দ্র চালু করতে এরইমধ্যে ওয়ার হাউজ ও ব্রোকার হাউজ নির্মাণসহ বায়ারদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনলাইন অ্যাপস তৈরিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। এখন শুধুই নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধনের অপেক্ষা। পঞ্চগড়ে ২০০০ সাল থেকে চা চাষ শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকার নদীসংলগ্ন এবং পতিত জমিতে দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে চা চাষের পরিধি। এক পর্যায়ে গোটা এলাকা চায়ের সবুজে ভরে ওঠে। জেলায় এ পর্যন্ত ১০ হাজার ২৪০ একর জমিতে চা আবাদ সম্প্রসারিত হয়েছে। ৮টি নিবন্ধিত ও ২০টি অনিবন্ধিত চা বাগান, সাত হাজার ৩৩৮টি ক্ষুদ্রায়তন এবং এক হাজার ৩৬৮টি ক্ষুদ্র চা বাগান গড়ে উঠেছে পঞ্চগড়ে। এই জেলাকে অনুসরণ করে চা চাষে এগিয়ে যাচ্ছে পাশের জেলা ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাটও। এরইমধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে এক হাজার ৪৫৭ দশমিক ২৯ একর, লালমনিরহাটে ২২২ দশমিক ৩৮ একর, দিনাজপুরে ৮৯ একর এবং নীলফামারীতে ৭০ দশমিক ৫৯ একর জমিতে চা আবাদ সম্প্রসারণ হয়েছে। সর্বশেষ উত্তরাঞ্চল চা চাষ প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড়সহ পাঁচ জেলায় মোট ১২ হাজার ৭৯ দশমিক ৬ একর জমিতে ৩০টি চা বাগান এবং ৮ হাজারের বেশি ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান গড়ে উঠেছে। চা উৎপাদনের হিসাবে চট্টগ্রামকে ছাড়িয়ে এ অঞ্চল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ২০২১ সালে এ চা অঞ্চলে চা আবাদে জমির পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৪৩৩ দশমিক ৯৪ একর। উৎপাদন হয়েছিল এক কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা। ২০২২ মৌসুমে এক কোটি ৭৭ লাখ ৮১ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে এখানে, যা বিগত বছরের তুলনায় ৩২ লাখ ১৯ হাজার ২২৬ কেজি বেশি এবং দেশের মোট উৎপাদনের ১৯ শতাংশ। বৈশ্বিক মহামারি উপেক্ষা করে জেলার ২৫টি চা কারখানায় উৎপাদিত চা নিলাম কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৬০ কোটি টাকা মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে চায়ের কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য না পেয়ে লোকসান গুনতে হয় ক্ষুদ্র চা চাষিদের। তবে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র চালু হলে চা চাষিরা কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে আশা তাদের। পঞ্চগড়ের কারখানায় উৎপাদিত চা বিক্রির জন্য চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলের চা নিলাম কেন্দ্রে পাঠাতে হয়। এজন্য অতিরিক্ত পরিবহন খরচ লাগে। উৎপাদন ও পরিবহন খরচ কমলে চা চাষিরাও বেশি দাম পাবেন। পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেন, পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চল চা চাষ প্রকল্পের আওতায় প্রতিনিয়ত চা চাষের পরিধি বাড়ছে। এখানে উৎপাদিত চা চট্টগ্রাম অথবা শ্রীমঙ্গলের চা নিলাম কেন্দ্রে কেনাবেচা হয়। গত বছরের ২৩ অক্টোবর পঞ্চগড়ে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্রের অনুমোদন দেয় সরকার। এরপর কাজ শুরু করে বাংলাদেশ চা বোর্ড। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পঞ্চগড়ে দেশের তৃতীয় নিলাম কেন্দ্র্রটি উদ্বোধন করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। নিলাম কেন্দ্রটি চালুর ফলে গোটা উত্তরের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন আসবে বলে সেখানকার মানুষের প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত