ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

২৬৬টি মামলার নিষ্পত্তি

এ মহান দৃষ্টান্ত হোক অনুকরণীয়
২৬৬টি মামলার নিষ্পত্তি

সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্টে গত বুধবার ২৬৬টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম। চেম্বার কোর্টের কার্যতালিকায় ২৬৬টি মামলা শুনানির জন্য ছিল। এসব মামলা মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টায় পক্ষদ্বয়ের শুনানি নিয়ে নিষ্পত্তির আদেশ দেন বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম। এসব মামলার মধ্যে রয়েছে হাইকোর্টের বিভিন্ন রায় ও আদেশের বিষয়ে সংক্ষুব্ধ পক্ষে আনা মামলা। এর মধ্যে সিভিল, ক্রিমিনাল, রিটসহ বিভিন্ন মামলা ছিল। মামলা নিষ্পত্তির এ নজির বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, একজন কর্মঠ বিচারকের একটি প্রকৃত উদাহরণ। অন্যরা এর থেকে অনুপ্রাণিত হবেন নিশ্চয়ই- এটাই প্রত্যাশা থাকবে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতের জন্য এটি উদাহরণ হয়ে থাকবে যে, মামলার জট কমাতে এভাবে কাজ করা যায়। চেম্বার কোর্ট বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম একটি অসাধারণ কাজ করেছেন। ফলে মামলার জট হ্রাসের পাশাপাশি বিচারিক কাজে গতিশীলতা বাড়বে।

সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন দোলন বলেন, আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্টে এক কার্যদিবসে এতো পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তি করে বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম নজির স্থাপন করেছেন। এ ধরনের নজির বিচার বিভাগের মামলা নিষ্পত্তিতে গতিশীলতা আনবে। এতে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবী উভয়ই উপকৃত হয়েছেন। পাশাপাশি মামলা জট কমার সঙ্গে উচ্চ আদালতের ভাবমূর্তিও বৃদ্ধি পাবে। গত বুধবার বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এসব মামলার উপর শুনানি নিয়ে আদেশ দেন চেম্বার কোর্ট বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম। হাইকোর্টের বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে একদিনে এক হাজারের অধিক মামলা নিষ্পত্তি করে নজির সৃষ্টি করেছিলেন বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ। ফলে হাইকোর্ট বিভাগে বিভিন্ন বেঞ্চে মামলা শুনানি ও নিষ্পত্তিতে গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। আপিল বিভাগে নিয়োগ লাভের পর চেম্বার কোর্ট বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে মামলা নিষ্পত্তিতে দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম। আইনজীবীরা এতে তার প্রশংসা করে আশা প্রকাশ করেন যে, সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগে মামলা নিষ্পত্তিতে এটি গতিশীলতা আনবে। ফলে মামলা জট পর্যায়ক্রমে কমে আসবে। আমাদের সমাজে মামলা নিয়ে একটি কথা প্রচলিত আছে, তা হলো কাউকে যদি শায়েস্তা করতে হয়, তাহলে তাকে একটি মামলা-মোকদ্দমার মধ্যে ফেলে দিলেই আর কিছু করার প্রয়োজন হয় না। কেননা, মামলার বিচার নিষ্পত্তি করা একটি কঠিন কাজ। মামলার বিচার বিলম্বিত হওয়ার নানা কারণ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- মামলার বাদী-বিবাদী কিংবা সাক্ষীর অনুপস্থিতি। মামলার শুনানির তারিখ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো যদি আদালতে হাজির না থাকেন, তা হলে শুনানির নতুন তারিখ পড়ে এবং সেই তারিখ নিকট ভবিষ্যতে না পড়ে অনেক দেরিতে পড়ে। নতুন তারিখের শুনানিতে আইনজীবীদের পারিশ্রমিক দিতে দিতে বাদী-বিবাদীর পকেটশূন্য হয়ে যায়। তার পর সাক্ষীদের হাজির করার খরচ তো রয়েছে।

এমন কোনো কোনো মামলা রয়েছে যা নিষ্পত্তির জন্য মানুষ বছরের পর বছর কাটিয়ে দেন। একটি মামলা কতদিনে নিষ্পত্তি করতে হবে, তার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হলে মানুষ হয়তো ধারণা করতে পারত যে, তিনি ওই সময়ের মধ্যে বিচার পাবেন। অথচ আমাদের দেশে সে ব্যবস্থা নেই। ভবিষ্যতে যদি মামলার শ্রেণিবিন্যাস করে মামলা নিষ্পত্তির একটি সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়, তাহলে বিচারাঙ্গনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা আরো বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে বাদী-বিবাদীর দুর্ভোগও কমে আসবে। তবে মামলার জট কমানোর জন্য আমাদের দেশে গ্রাম-আদালত ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রামীণ জীবনে পারিববারিক বিষয়ে ছোটখাটো বিরোধ নিয়ে মানুষ থানা কিংবা আদালতে মামলা করেন। কোনো কিছু বিবেচনা না করে শুধু ক্ষোভ কিংবা আত্মসম্মান অথবা অহমিকার কারণে অনেকে মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে তিনি বুঝতে পারেন, মামলায় জড়িয়ে পড়ার কত যন্ত্রনার। তবে তখন আর তার ফিরে আসার সুযোগ থাকে না। ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’। এই বাক্য অনুসরণ করলে আমাদের জীবনের অনেক সমস্যা থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত