ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মায়ের দুধের বিকল্প খাদ্য

নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বাজারজাতকরণ
মায়ের দুধের বিকল্প খাদ্য

শিশুকে মেধাবী করে গড়ে তুলতে হলে মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই। জন্মের প্রথম ছয় মাস শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। সেইসঙ্গে প্রসবের পরপরই প্রথম ঘণ্টার ভেতরেই বাচ্চাকে শাল দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করতে হবে। প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে মা এ ব্যাপারে সাধারণত সচেতন থাকেন না। আর এটি নিশ্চিত করার জন্য পরিবার পরিজন ও শিশুর মা ছাড়াও অন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। বর্তমানে নানা কারণে শিশুকে জন্মের পর শাল দুধ খাওয়ানো হয় না। অনেকে মনে করে, এতে শিশুর ক্ষতি হয়। কর্মক্ষেত্রে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে মায়ের জন্য। অনেক চাকরিজীবী মা আবার ব্রেস্ট ফিডিং করানোর সময় পান না। কারণ তার ছুটি থাকে মাত্র ৬ মাস।

তখন সেই মা চিন্তা করেন ৬ মাস পর তো তাকে চাকরিতে যোগ দিতে হবে, তাই সে বাচ্চাকে বুকের দুধ কমিয়ে দিয়ে অন্য ফর্মুলায় দুধ খাওয়াতে অভ্যস্ত করে তোলে। তবে একটি শিশুকে যদি মাতৃদুগ্ধ দেওয়া হয়, তাহলে সে শিশু বুদ্ধি সম্পন্ন হবে। আমাদের চাকরিজীবী মায়েদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ফিডিংয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ছুটির বিষয়। অনেক কোম্পানি আছে ঠিকমতো ছুটি দিলেও বেশিরভাগই দিতে চায় না। কর্মক্ষেত্রে নারীরা যেন শিশুকে ব্রেস্ট ফিডিং করাতে পারেন, সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যেখানে বিশ্ব পিতৃত্বকালীন ছুটির জন্য কাজ করছে, সেখানে আমরা মাতৃত্বকালীন ছুটিই ভালো করে নিশ্চিত করতে পারছি না। সেই সঙ্গে মায়ের দুধের বিকল্প খাদ্যের বাজার ও প্রচারণাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে। শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধ নিশ্চিত করতে পারলেই রাষ্ট্র একদিকে যেমন শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারবে, তেমনি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সূচকগুলো অর্জনের দিকে এগিয়ে যাবে। মাতৃদুগ্ধ বিকল্প আইন সম্পর্কে সবাইকে ভালোভাবে অবহিত করতে হবে। মাতৃদুগ্ধ বিকল্প আইন বাংলাদেশে ২০১৩ সালে সংসদে পাস হয়। ২০১৭ সালে এটিকে আরও শক্তিশালী করা হয়। আইনে বলা হয়েছে, এটি জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করবে। তবে এটা কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব তা প্রশ্নসাপেক্ষ।

এটি বাস্তবায়ন করার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন জনসচেতনতা। মায়ের দুধের বিকল্প খাদ্যের উৎপাদন, বিপণন ও প্রচার সম্পর্কে এই আইনে সবই বলা আছে। আইনে এটাও বলা আছে, এই বিকল্প খাদ্যের প্রচার কতটুকু করতে পারবে বা কতটুকু পারবে না। সবাই যখন আইনটি ভালোভাবে জানবে, তখন ভালোভাবে মানার চেষ্টা করবে। মাতৃদুগ্ধে যদি এক ডলার বিনিয়োগ করা হয়, তাহলে তার প্রতিদান পাওয়া যাবে ৩৫ ডলার। শিশুর ২ বছর বয়স পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ পান করার গোন্ডেন সময় হিসেবে দেখা হয়। অনেক সময় গর্ভে থাকা অবস্থায় শিশু যাতে বেশি বড় না হয়ে যায়, সে জন্য মাকে বেশি খেতে দেওয়া হয় না। বাচ্চা বড় হয়ে গেলে ডেলিভারিতে কোনো সমস্যা যেন না হয় সে জন্য। গর্ভকালীন অবস্থায় আমরা অনেকে মায়ের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন না। একটি বাচ্চা যখন মায়ের গর্ভে থাকে, তখনই তার শারীরিক বিকাশ ঘটতে থাকে। সে ক্ষেত্রে গর্ভে থাকা অবস্থায় মা যদি বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খান, তাহলেই শিশুর বিকাশ ঘটবে। আর জন্মের পর মায়ের দুধের বিকল্প কিছু নেই। আমাদের দেশে পুষ্টিজনিত যে আইন তা অনেক শক্ত এবং খুবই ভালো। তবে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। আমাদের দেশে ফর্মুলা দুধ বা নানারকম সুগারযুক্ত শিশু খাদ্যের বিষয়ে নানা ধরনের চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন হয়ে থাকে। যেখানে নাম করা সেলিব্রিটিরাও অংশ নেন। যা শিশুদের অনেক বেশি আকৃষ্ট করে থাকে। এ বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে করে প্রতিনিয়ত মায়েদের ব্রেস্ট ফিডিং বা শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করা যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত