ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফুল রপ্তানির সম্ভাবনা

হতে পারে সচ্ছলতা অর্জনের ফসল
ফুল রপ্তানির সম্ভাবনা

বাংলাদেশে অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে ফুল রপ্তানির একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ফুল যে শুধু ঘরবাড়ি অথবা বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি কিংবা প্রিয়জনকে উপহার দেয়ার পণ্য- তা কিন্তু নয়, ফুল হতে পারে আমাদের জীবিকা নির্বাহের আরেক অর্থকারী কৃষি ফসল। আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। পরিবারের অন্যান্য কাজের ফাঁকে ফুল চাষিরা ফুল বাগানের পরিচর্ষা করে থাকেন। তারা বছরের বিশেষ বিশেষ দিনের অপেক্ষোয় থাকেন। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান স্বাধীনতা দিবস, মহান বিজয় দিবস ছাড়া বাবা দিবসের মতো আরো অনেক দিবসে অনেক ফুল বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, বিয়েশাদী কিংবা বিভিন্ন আনন্দঘন দিনের অনুষ্ঠানেও ফুলের কদর বাড়ে। এছাড়া ইদানীং ব্যক্তি বিশেষের পদোন্নতি কিংবা অন্য যে কোনো সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানাতে মানুষ উপহারসামগ্রী হিসেবে ফুলও নিয়ে যায়। ফুলের ব্যবহার দিন দিন যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে চাষাবাদ। ফুল রপ্তানি করে বছরে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব এবং ফুলকে খুবই সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে অভিহিত করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেছেন, দেশে এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুলের চাষ বাড়ছে। দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে ফুলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারাবিশ্বে ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ফুলের বাজার রয়েছে। এর মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বাজার ধরার মতো সুযোগ আমাদের রয়েছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। গত শুক্রবার রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের সন্নিকটে বেড়িবাঁধে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উদ্যোগে নির্মিত পাইকারি ফুলের আধুনিক বাজার ও প্রসেসিং সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি সামনে আরো বিকশিত হবে। সেখানে ফুল বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবে।’ সেজন্য, ফুলের উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনা এবং তার ব্যাপক সম্প্রসারণ করতে হবে। তিনি এ সময় বিজ্ঞানী ও উদ্যান তত্ত্ববিদদের দ্রুত ফুলের আধুনিক জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের নির্দেশ দেন। দেশে এতদিন নির্ধারিত পাইকারি কোনো ফুলের বাজার ছিল না। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের নির্মিত এই পাইকারি বাজারে ব্যবসায়ীরা আধুনিক সব সুবিধা পাবেন ও প্রসেসিং করে বিদেশেও ফুল রপ্তানি করতে পারবেন। ফুল পবিত্রতা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রতীক। ফুল নিয়ে যুগে যুগে রচিত হয়েছে অনেক কাব্য ও সাহিত্য। কবি বলেছেন, জোটে যদি মোটে একটি পয়সা, খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি, দুইটি যদি জোটে তার একটি ফুল কিনে নিও ওহে অনুরাগী। অতীতে ফুলের উৎপাদন ও ব্যবহার ছিল খুব সীমিত। বর্তমানে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও বাণিজ্যিকভিত্তিতে ফুলের উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে এবং ফুলের ব্যবহারও অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভিত্তিতে ফুল উৎপাদনের সূচনা শুরু হয় ১৯৮৩ সালে যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামে। বর্তমানে বাংলাদেশের ২৪টি জেলায় প্রায় ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভিত্তিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। ফুল উৎপাদনে জড়িত আছেন প্রায় ১৫ হাজার কৃষক এবং ফুল উৎপাদন ও বিপণন ব্যবসায়ে অন্তত দেড় লাখ মানুষ সরাসরি নিয়োজিত রয়েছেন। ফুল সেক্টরের কার্যক্রমের মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন করছেন প্রায় ৭ লাখ মানুষ। ফুল শিল্পের সম্প্রসারণের ফলে আজকাল ফুলের ব্যবহারও অনেক বেড়েছে। সার্বিকভাবে ফুল শিল্পের বিকাশের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে- ফুলচাষ ধান ও শাকসবজির তুলনায় অনেক বেশি লাভজনক। ফুলের উৎপাদন ও বাজার সম্প্রসারণের অন্যতম প্রধান কারণগুলো হচ্ছে- ফুলের চাহিদার ব্যাপক বৃদ্ধি, হেক্টর প্রতি অধিক লাভ, ফুলের নতুন জাত ও প্রযুক্তি গ্রহণ, অর্থনৈতিক উন্নতি, অন্যান্য জেলায় ফুলের চাষ বৃদ্ধির সুযোগ, শহরের মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে খাদ্য ও মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ফুল ক্রয়ের ব্যাপক অভ্যাস ও উৎসাহ। বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ফুল শিল্পের আরো অধিকতর বিকাশের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফুল নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম আরো জোরদার করার পাশাপাশি বিশেষায়িত হিমাগার স্থাপন, দক্ষিণাঞ্চলের ফুল উৎপাদনকারী এলাকাগুলোতে বাজারের অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যাকিং ঋণের সুযোগ সৃষ্টি সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ফুল সেক্টরে নারী উদ্যোক্তাদের অধিক অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি জাতীয় ফুলনীতি প্রণয়ন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত