গুদাম থেকে স্বর্ণ খোয়া

নিশ্চিত করতে হবে দোষীদের শাস্তি

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত ঢাকা কাস্টম হাউজের গুদাম থেকে সাড়ে ৫৫ কেজি স্বর্ণ খোয়া গেছে। যার বাজারমূল্য ৫০ কোটি টাকারও বেশি। সাধারণত বিমানবন্দরে যাত্রীদের কাছ থেকে জব্দ করা স্বর্ণের বার ও অলংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী এই গুদামে রাখা হয়। গুদামে রক্ষিত স্বর্ণের হিসাব মেলাতে গিয়েই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। কীভাবে এই বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ উধাও হলো, সে বিষয়ে মুখ খুলছেন না কাস্টম হাউজের কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এরইমধ্যে এ ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। স্বর্ণের গুদাম যেখানে, সেই জায়গাটি সম্পূর্ণ সংরক্ষিত এলাকা। এছাড়া পুরো এলাকাটি থাকে সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে। বিমানবন্দরের ভেতরে ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ অর্থাৎ হারিয়ে যাওয়া ও খুঁজে পাওয়া পণ্য রাখার স্থানের পাশেই কাস্টম হাউজের গুদামটির অবস্থান। কাস্টম হাউজের গুদামটিতে বিমানবন্দরে কর্তব্যরত ঢাকা কাস্টম হাউজ, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থাগুলোর জব্দকৃত মালামাল এখানে রাখা হয়। স্বর্ণের অলংকার ও স্বর্ণের বার মিলিয়ে ওই পরিমাণ স্বর্ণ কাস্টমের গুদামের একটি আলমারিতে বাক্সের মধ্যে সংরক্ষিত ছিল। সেই বাক্সটিই চুরি হয়ে গেছে। গুদামের আলমারি ভেঙে চুরি করা হয়েছে বাক্সটি। কীভাবে এই স্বর্ণ গায়েব হয়েছে, তা জানতেই এখন বিমানবন্দরে বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। বিমানবন্দরে ২৪ ঘণ্টায় পালাক্রমে চারটি শিফট কাজ করে। সপ্তাহ খানেক আগে খবর পাওয়া যায় ওইসব স্বর্ণ গুদামে নেই। এরপর একটি কমিটি করে দেওয়া হয় গুদামের সব স্বর্ণ গণনা করার জন্য। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনার সত্যতা মেলে। জব্দ কিংবা উদ্ধারকৃত স্বর্ণ অত্যন্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। সেখান থেকে এসব স্বর্ণ খোয়া গেল। বিষয়টি হালকাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাইরে থেকে কেউ এসে এতো বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ চুরি করে নিয়ে যাবে সেটা কল্পনাতীত। সেখানকার দায়িত্বে যারা ছিলেন দায়ভার মূলত তাদের। কার গাফিলতিতে কারা কীভাবে এসব স্বর্ণ গায়েব করে দিল তার একটা সুরাহা হওয়া দরকার। তা না হলে দেশের অন্যান্য স্থানে যেসব গুদাম রয়েছে সেখানকার মূল্যবান সামগ্রীও যে খোয়া যাবে না তা হলফ করে বলা যাবে না। নিরাপত্তামূলক কিংবা প্রশাসনিক ফাঁকফোকর গলিয়ে এসব স্বর্ণ কীভাবে খোয়া গেল তা পুর্নাঙ্গভাবে তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন সুপারিশসহ প্রকাশ করা দরকার। তাহলে দেশের অন্যান্য সুরক্ষিত গুদামে রক্ষিত মূল্যবান সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো লুকোচুরি করা হলে তা হবে আত্মঘাতি। কেননা একবার যদি খোয়া স্বর্ণ ‘খোয়ার’ খাতায় তালিকাভুক্ত হয়ে যায় তাহলে দেশের যেসব গুদাম রয়েছে সেখান থেকে পণ্য গায়েব করতে কেউ দ্বিধাবোধ করবে না। কারা এই খোয়া বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আর একবার যদি অপরাধী শাস্তির আওতা থেকে বের হয়ে যেতে পারে তা হলে সে ভবিষ্যতে দ্বিগুণ উৎসাহে একই অপকর্ম চালিয়ে যাবে। তদন্ত কার্যক্রমে কোনো আপসরফা, ছাড় দেয়া কিংবা ক্ষমা করার বিষয়টি অবশ্যই পরিহার করতে হবে। গায়েব হওয়া জিনিসপত্র বিক্রি করে দিয়ে অর্থের মালিক হওয়ার সুযোগ যদি মানুষ একবার পেয়ে যায় তাহলে তার আকাঙ্ক্ষা অনেক বেড়ে যাবে। আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এই খোয়া চক্রের সঙ্গে অনেকেই জড়িত রয়েছেন এবং তারা অনেকদিন থেকেই এই অপকর্মটি করার জন্য অত্যন্ত গোপনীয়তা অবলম্বন করে এই অসাধ্য কাজটি সম্পন্ন করেছে। খোয়া যাওয়া স্বর্ণ যদি হজম করা যায়। তাহলে এই চক্রের সঙ্গে জড়িতরা সারাজীবন আরাম আয়েশে জীবন কাটাতে পারবেন। তাদের অনুসরণ করে অন্যরা এ ধরনের কাজে মনোনিবেশ করবে। যদি আমাদের সমাজটি এভাবেই এগিয়ে যায় তাহলে দেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাবে। তাই স্বর্ণ খোয়ার বিষয়টি প্রভাবমুক্ত হয়ে তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তাহলেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।