ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সংসদ অধিবেশনের দর্শক

দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন আবদুল হামিদ
সংসদ অধিবেশনের দর্শক

জাতীয় সংসদের অধিবেশনের কার্যাবলী বাংলাদেশ সংসদ টেলিভিশনে সরাসরি প্রচার করা হয়ে থাকে। তবে আগে যখন কেবল বাংলাদেশ টেলিভিশনে সংসদ অধিবেশনের কার্যাবলী প্রচার করা হতো তখন মানুষ তা আরো আগ্রহের সঙ্গে উপভোগ করতেন। দেশে একটা মাত্র টেলিভিশন থাকায় মানুষ হয়তো বিটিভির মাধ্যমে সংসদ অধিবেশনের কার্যক্রম দেখতেন। ক্ষমতাসীন দল ও সংসদে বিরোধীদলের প্রজ্ঞাবান সদস্যরা প্রাণবন্ত আলোচনা করতেন। মানুষ তাদের যুক্তি তর্ক দেখে মুগ্ধ হতো। অত্যন্ত মর্জিত আচরণে সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রতিফলন ঘটত। মানুষ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারতেন। শিক্ষার্থীরাও সংসদ কার্যক্রম দেখে প্রয়োজনীয় অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারত। তবে বর্তমান জাতীয় সংসদে সদস্যদের একটি বড় অংশ ব্যবসায়ী। এছাড়া বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দলের কোনো প্রতিনিত্বি সংসদে নেই। সে কারণে এখন সংসদ কার্যক্রম সরাসরি দেখার আগ্রহ মানুষের কম। তবে তা সত্ত্বেও একজন মানুষ যিনি আজীবন রাজনৈতিক পরিবেশে জীবন অতিবাহিত করে এখন সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে অবসর জীবনযাপন করছেন সেই সর্বজন শ্রদ্বেয় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সংসদের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করলেন গতকাল সোমবার। মাগরিবের নামাজের বিরতির পর রাষ্ট্রপতি সংসদের ভিআইপি গ্যালারিতে বসে সংসদের অধিবেশন দেখতে থাকেন। ওই সময় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন উত্থাপন কার্যক্রম চলছিল। আইনটি উত্থাপন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরপরই স্পিকার ড. শিরীন শারমিন সাবেক রাষ্ট্রপতির উপস্থিতির কথা জানান দেন। তিনি বলেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আজকের সংসদের বৈঠক প্রত্যক্ষ করছেন।’ এ সময় সংসদ সদস্যরা তাকে করতালির মাধ্যমে স্বাগত জানান। আবদুল হামিদও দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে সংসদ সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান। পরে অপর একটি ইস্যুতে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, ‘গত ৫৩ বছরের ইতিহাসে এই সংসদে যে ঘটনাটা আমরা প্রত্যক্ষ করলাম, সেটা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।

সংসদে নীরবে নিবৃতিতে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা দেখলাম।’ সাবেক রাষ্ট্রপতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘এই দেশে তিনি একজন স্পিকার ছিলেন। ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্বও পালন করেছেন। জাতীয় সংসদের উপনেতাও ছিলেন। দুইবার দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। কোনো রাষ্ট্রপতির অবসরের পরে সংসদে এসে অধিবেশন প্রত্যক্ষ করেছেন, এটা বোধহয় প্রথম। সেজন্য ওনার থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। অনেক কিছু জেনেছি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উনি একজন অত্যন্ত সফল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তাকে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।’ গ্যালারি থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সংসদ অধিবেশন পর্যবেক্ষণের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ একটি বিরল ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। এর আগে মাগরিবের নামাজের বিরতিতে তিনি সংসদ সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। আব্দুল হামিদ যতটা সম্মান ও ভালোবাসা নিয়ে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অবসর নিয়েছেন, সেই রকম সৌভাগ্য আর কোনো রাষ্ট্রপতির হয়নি।

একজন সাদামাটা মানুষ কীভাবে সংসদ সদস্য হিসেবে, জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে এবং সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি হিসেবে যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। তিনি অবসর জীবনে গিয়েও তার প্রিয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় সংসদের মায়া ছাড়তে পারেননি। তিনি দর্শক সারিতে বসে সংসদের অধিবেশন প্রত্যক্ষ করার মধ্য দিয়ে একট মহান দৃষ্টান্ত করলেন। তিনি আবারো এ দেশের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জন করলেন। তিনি তার রাজনৈতিক আদর্শিক শিক্ষা তার সহযোদ্ধাদের শেখালেন। তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে, জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে যে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন তা অন্যদের জন্যও হতে পারে অনুকরণীয় ও দৃষ্টান্ত। সংসদ পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি যেভাবে সংসদকে প্রাণবন্ত করে রাখতেন তা মানুষ উপভোগ করতেন। টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১০ বছর ৪১ দিন দায়িত্ব পালনের পর সম্প্রতি মো. আবদুল হামিদ অবসরে যান। মো. আবদুল হামিদ পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেছিলেন। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালের ২০ মার্চ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন আবদুল হামিদ। এরপর ওই বছরের ২২ এপ্রিল তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত