ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংলাপ

বেসামরিক-সামরিক সহযোগিতা জোরদারে মতৈক্য
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংলাপ

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র নবম নিরাপত্তা সংলাপে বেসামরিক ও সামরিক উভয় ক্ষেত্রেই সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। গত মঙ্গলবার ঢাকায় দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যকার সংলাপে এই মতৈক্য হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সংলাপে বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গী ও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলসহ পারস্পরিক স্বার্থের বিভিন্ন প্রচলিত ও অপ্রচলিত নিরাপত্তা বিষয়গুলো গুরুত্ব লাভ করে।

এতে আরো বলা হয়েছে, আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নিরাপত্তা সহায়তা, প্রতিরক্ষা বাণিজ্য ও সহযোগিতা, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন এবং ব্যাপকতর ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি। সংলাপে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা শাখার মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ব্যুরোর আঞ্চলিক নিরাপত্তাবিষয়ক উপ-সহকারী সেক্রেটারি মিরা রেসনিক স্ব-স্ব প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। অপ্রচলিত নিরাপত্তা বিষয়গুলোর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংলাপে বাংলাদেশ যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো-টলারেন্স’-এর বিবৃত অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থা মোকাবিলায় অব্যাহত সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছে। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে নিরাপত্তা সহযোগিতাকে উল্লেখ করা হয়েছে। মার্কিন পক্ষ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ, তথ্য আদান-প্রদান এবং যৌথ মহড়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। সামুদ্রিক নিরাপত্তায় একসঙ্গে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের আহ্বানে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। বাংলাদেশ পুনর্ব্যক্ত করেছে যে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সংকটের চূড়ান্ত সমাধান এবং এ সমস্যা সমাধানে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সমর্থন চেয়েছে। ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে এবং মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিরা এবং মার্কিন সরকার ও ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধিরা সংলাপে অংশ নেন। ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার এই সংলাপের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। কেননা বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোনো দেশ একক সত্ত্বা নিয়ে চলতে পারে না। তাকে উন্নত দেশগুলোর সহযোগিতা নিতে হয়। যুক্তরাষ্ট্র আজ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী দেশ। এই দেশটির সহযোগিতা পাওয়া আমাদের মতো একটি দেশের জন্য খুবই প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্র্র বাংলাদেশের সামরিক ও বেসামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার যে আশ্বাস দিয়েছে তার যথেষ্ঠ তাৎপর্য রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বাংলাদেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশের সহযোগিতাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারে তাহলে অনেকট সংকট কেটে যাবে। বাংলাদেশ উত্তরোত্তর এগিয়ে যাবে। ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এই সংলাপের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির মধ্যে অনেক মিল আছে। উভয় দেশ চাচ্ছে না, এ অঞ্চলে নির্দিষ্ট একটি দেশ তাদের আধিপত্য বিস্তার করুক, বা এখানে অবাধ চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়াক। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুকের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র জানে এবং ওই আউটলুকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সঙ্গে অনেক মিল আছে। র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা করেছে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা বলেছি যে, প্রতিটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে যে অভিযোগ আসে, সেগুলোর প্রতিটিকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি। আমাদের দেশে বিচারহীনতার কোনো সুযোগ রাখি না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত