ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে অবহেলা

বাস্তব কারণ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে
পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে অবহেলা

সদ্য প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলে সন্তুষ্ট না হয়ে খাতা চ্যালেঞ্জ করে ১১ হাজার ৩৬২ পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছেন ২ হাজার ২১২ জন। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৮১১ জন। ফেল থেকে সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ পেয়ে চমক দেখিয়েছেন ছয়জন। বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তনের পেছনে পরীক্ষকদের গাফিলতির বিষয়টি চিহ্নিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষাবোর্ডগুলো। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, পুনর্নিরীক্ষণের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর বিশালসংখ্যক পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের নজরে আসে। এরপরই কারণ খুঁজতে শিক্ষাবোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সব বোর্ডের পরীক্ষা শাখাকে ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালের পুনর্নিরীক্ষণের তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়। এখন অভিযুক্ত পরীক্ষকদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। এসব শিক্ষককে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বোর্ডের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি এমপিও বন্ধ করা। এছাড়া কালো তালিকাভুক্ত করে সারা জীবন বোর্ডের পরীক্ষা সংক্রান্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে। এর আগে, গাফিলতির কারণে ২০১৯ সালে ১ হাজার পরীক্ষককে শাস্তির আওতায় আনা হয়। তাদের কালো তালিকাভুক্তির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়। এবারও একই কায়দায় শাস্তি দেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

চলতি বছর পুনর্নিরীক্ষণে ফল পরিবর্তনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সব বোর্ড থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। শিক্ষকদের ভুলের কারণে শিক্ষার্থীদের খেসারত দিতে হয়। এটি কারোরই কাম্য নয়। অনেক শিক্ষক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে খাতায় প্রাপ্ত নম্বর সঠিকভাবে যোগ করেন না। প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে সঠিকভাবে বৃত্ত ভরাট করেন না। ম্যানুয়াল নম্বরপত্রের ঘরে কাটাকাটি ও পাস নম্বরের নিচে আন্ডার লাইন করেন। এসব কারণে বহু পরীক্ষার্থী ফেল করেন। ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা চ্যালেঞ্জ করে খাতা পুনর্নিরীক্ষার আবেদন করলে ফেল থেকে পাস করেন অনেকে। অনেকে জিপিএ-৫ পান। এছাড়া বহু পরীক্ষার্থীর বিভিন্ন গ্রেড পরিবর্তন হয়। পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন হওয়া উত্তরপত্রের চারটি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো, উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেওয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে ওঠানো হয়েছে কি না এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে কি না। এসব পরীক্ষা করে পুনর্নিরীক্ষার ফল দেওয়া হয়। চ্যালেঞ্জ হওয়া খাতাগুলো তৃতীয় শিক্ষকদের দিয়ে পুনর্নিরীক্ষণ হয়। পুনর্নিরীক্ষণের সময় পরীক্ষক কী কী ভুল করেছেন, তা মন্তব্যের জায়গায় লিখতে বলা হয়। তৃতীয় শিক্ষকদের এসব মন্তব্য ধরে ধরে অভিযুক্ত শিক্ষকদের চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। তবে পরীক্ষক প্রশ্নের যে নম্বর দিয়েছেন, তা পরিবর্তন করা হয় না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে খাতা মূল্যায়ন করতে গিয়ে ভুলগুলো হচ্ছে। এ বিষয়ে পরীক্ষকরা জানান, ভুলের অন্যতম কারণ পরীক্ষা শেষে ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের তাড়া।

শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকগণ বলছেন, খাতা মূল্যায়নে এ ধরনের ভুলের পেছনে কম সময়ে অধিক খাতা মূল্যায়নকে অনেকটাই দায়ী করা হয়। ৬০ দিনে ফল প্রকাশের যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়, এতে পরীক্ষকরা খাতা মূল্যায়নে তাড়াহুড়ো করেন। ফলে ভুলের পরিমাণ দিনদিন বাড়ছে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড বলছে, এর আগে ভুলের বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যায় যে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, তথ্যপ্রযুক্তির মতো কমন বিষয়ে ভুল বেশি হচ্ছে। একজন পরীক্ষককে ৫০০ থেকে ৬০০ খাতা মূল্যায়নে সময় দেওয়া হয় ১০ থেকে ১২ দিন। এ কারণে তারা তাড়াহুড়ো করেন। ফলে ভুলগুলো বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক শিক্ষক শেষ সময়ে এসে খাতার মূল্যায়ন শুরু করেন। এ কারণেও ভুল বেশি হচ্ছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, খাতা মূল্যায়ন করতে শিক্ষকদের যে সম্মানি দেয়া হয়, তা অপ্রতুল্য। সে কারণে শিক্ষকরা খাতা মূল্যায়নে তেমন একটা গুরুত্ব দেন না। খাতা মূল্যায়নের পর অন্য যেসব কাজ রয়েছে, সেগুলো সম্পাদন করতে পরিবারের কোন সদস্যের সহায়তা নেয়া হয়। নিজের কাজ অন্যকে দিয়ে করালে সেখানে ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। এসব নানা কারণে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে গাফিলতির বিষয়টি ধরা পড়ে। তবে বাস্তবতার নিরীখে খাতা মূল্যায়নের বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত। অস্বাভাবিকতা কখনো ভালো ফল বয়ে নিয়ে আসতে পারে না। সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত