সাইবার দুনিয়ায় নিরাপদ থাকুক নারীরা

সোহেল মামুন

প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

এটি সবাই জানে, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের বিস্তৃতি হয়েছে। বড় হয়েছে সাইবার দুনিয়া। এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কেটে যায় অনলাইনে। নারী-পুরুষ সবাই মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকতেই অভ্যস্ত হয়েছেন। উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও চাকরি, ব্যবসায়, লেখাপড়া কিংবা বিনোদন- সব কাজই এখন করা সম্ভব হচ্ছে ভার্চুয়ালি। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো সাইবার দুনিয়ায় বেড়েছে দুষ্টু লোকের সংখ্যাও। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস (সিসিএ) ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেড়েছে সাইবার বুলিং। সাইবার বুলিংয়ের মধ্যে রয়েছে ছবি বিকৃত করে অপপ্রচার, পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট, সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার এবং অনলাইনে-ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে হুমকি দিয়ে মানসিক হয়রানি। আর ক্রমেই এ ধরনের অপরাধ বাড়ছে। আর নারীরাই এই হীন আক্রমণের শিকার হচ্ছেন বেশি।

নারীরা সাইবার অপরাধের শিকার : সিসিএ ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের ৫০ দশমিক ২৭ শতাংশই সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। জেন্ডারভিত্তিক অপরাধের ক্ষেত্রে নারীরা বেশি সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। সিসিএ ফাউন্ডেশনের গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, ভুক্তভোগীদের মধ্য পুরুষের সংখ্যা ৪৩ দশমিক ২২ শতাংশ এবং নারীদের সংখ্যা ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান তুলে ধরার কারণ রিয়েল লাইফ বা বাস্তব জীবনের মতো সাইবার জগতেও নারীদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি তুলে ধরা। অবশ্য অনলাইনে বিভিন্ন কাজে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সচেতনভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হলে ঝুঁকিমুক্তভাবেই সব কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। রিয়েল লাইফে চাইলেও যেমন অনেক সামাজিক সমস্যার সমাধান করা দুরুহ হয়, কিন্তু অনলাইনে যে কোনো ঝুঁকি শতভাগ বিমোচন করে নিরাপদে থাকা যায়। আর এটাই হলো সাইবার দুনিয়ার বড় সুবিধা।

যেভাবে নিরাপদ থাকা সম্ভব: এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্যের সঙ্গে মিল রেখে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম বা ম্যাসেজিং প্লাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপে ব্যবহারকারির সুরক্ষায় বেশকিছু ফিচার সংযুক্ত করেছে। এসব ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারিরা বিশেষ করে নারীরা সামাজিক মাধ্যমে আরো সুরক্ষিত থাকতে পারবেন। মূলত ইন্টারনেট ব্যবহারে আরো সচেতন হওয়া খুব জরুরি।

আইনের আশ্রয় নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে: সিসিএ ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা গেছে, সাইবার অপরাধের শিকার হওয়া ভুক্তভেগীদের মধ্যে ৭৩ দশমিক চার শতাংশই আইনের আশ্রয় নেন না। গবেষণায় এমন অসংখ্য নারীর খোঁজ মিলেছে যারা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারস্থ হননি। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়াদের মধ্যে মাত্র ২৬ দশমিক ছয় শতাংশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিচ্ছেন। বাকি ৭৬ দশমিক চার শতাংশ মানুষ লোকলজ্জার ভয়ে অভিযোগ করছেন না। ভুক্তভোগীদের ৮০ দশমিক ৯০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, দেশের তরুণ প্রজন্মকে টার্গেট করেই সাইবার অপরাধগুলো সংঘটিত হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট রয়েছে। তবে এখনো যেমন অনেক মানুষ এই আইন সম্পর্কে জানেন না; আবার অনেকে এই আইনের সুফলও পাচ্ছেন। এরইমধ্যে অনেক নারীর সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে। এরইমধ্যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টারও স্থাপন করা হয়েছে। নারীদের সাইবার দুনিয়ায় সুরক্ষিত রাখতে এবং অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সাইবার হাইজিন, অ্যাওয়ারনেস ও ডিজিটাল লিটারেসি বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে এখন যে কেউ ন্যশনাল হেল্প লাইন ৩৩৩ কল সেন্টারে ফোন করে সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে কোনো পরামর্শ, সুপারিশ কিংবা আইনের আশ্রয় সহজেই নিতে পারে। ৯৯৯-এ ফোন করে পাঁচ বছরে নয় কোটি মানুষ সেবা গ্রহণ করেছে।