ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঔষধ ও কসমেটিকস বিল পাস

নিতে হবে লাইসেন্স, ওষুধ মজুতে শাস্তি
ঔষধ ও কসমেটিকস বিল পাস

কসমেটিকসে নকল ঠেকানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এখন থেকে কসমেটিকস ব্যবসার জন্য ঔষধ প্রশাসন থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। এই বিধান করে ‘ঔষধ ও কসমেটিকস বিল, ২০২৩’ সংসদে পাস হয়েছে। কসমেটিকসের গুণাগুণ সম্পর্কে বিজ্ঞাপনে অসত্য তথ্য দিলে তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধানও রয়েছে আইনে। এছাড়া বিলে ওষুধের কৃত্রিম সংকট ও বেশি মুনাফার লোভে মজুত করলে ১৪ বছর জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কসমেটিকসের অবৈধ ব্যবহারেও শাস্তির বিধান রয়েছে। ৭ সেপ্টেম্বর সংসদের বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। ১৯৪০ সালের ড্রাগস আইন এবং ১৯৮২ সালের আইন দুটিকে একীভূত করে একটি করা হয়েছে। কসমেটিকস ব্যবসায়ীদের ক্ষতি সরকারের উদ্দেশ্য নয়। মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং ভেজাল ওষুধ ও কসমেটিকস প্রতিরোধ করাই সরকারের উদ্দেশ্য। বিলে বিউটি পার্লার বা অন্য কোথাও নিবন্ধিত চিকিৎসক ছাড়া মানবদেহে ফিলার, বোটক্স, গ্লুটাথিয়ন বা অন্য কোনো কসমেটিকস প্রয়োগ দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে। প্রস্তাবিত বিলে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের দায়িত্ব ও কর্মপরিধি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কসমেটিকস বিক্রি, আমদানি ও উৎপাদন করতে হলে লাইসেন্স নিতে হবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর লাইসেন্স অথরিটি হিসেবে কাজ করবে। এখন যারা কসমেটিকসের ব্যবসা বা উৎপাদন করছেন তাদের লাইসেন্স নিতে হবে। এজন্য ঔষধ প্রশাসন বিধি প্রণয়ন করবে। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে ওষুধের নিরাপত্তা, কার্যকারিতা, নতুন ওষুধ, ভ্যাকসিন মেডিকেল ডেভেলপ করার বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ ছাড়া রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ওষুধ বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ থাকবে এবং এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মেডিকেল ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত আইনে ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মেডিকেল ডিভাইসকে ওষুধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কিছু ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করে দেবে বলে বিলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিলটি পাস করার মধ্য দিয়ে সরকার একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেননা ভেজাল কসমেটিকস ব্যবহার করার ফলে ত্বকের মারাত্মক সমস্য দেখা দিচ্ছে। সৌন্দয্য বর্ধনে মানুষ নানা রকম কসমেটিকস ব্যবহার করে থাকেন। এসব কসমেটিকসের দাম বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল এবং সৌন্দর্য্যপ্রিয় তারা নামি-দামি ব্রান্ডের কিংবা বিদেশি কসমেটিকস ব্যবহার করেন। তবে আমাদের দেশের সবাই আর্থিকভাবে শক্ত অবস্থানে নেই। তা সত্ত্বেও তারা তো রূপ চর্যাকে পরিহার করতে পারছেন না। আধুনিক জীবনে প্রসাধনসামগ্রীর ব্যবহার যেমন বেড়ে চলেছে তেমনি এগুলো ব্যবহারে সৃষ্ট পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকিও বাড়ছে। অনেক গবেষক এরইমধ্যেই বাছ-বিচার না করে প্রসাধনসামগ্রী ব্যবহার করার প্রবণতাকে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন। বর্তমানে সারা বিশ্বে অসংখ্য কোম্পানি নানা ধরনের প্রসাধন সামগ্রী প্রস্তুত করছে। এসব সামগ্রী তৈরি করতে কমবেশি ১৩ হাজার প্রকার রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মূলত এই রাসায়নিক উপাদানই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা তৈরির জন্য দায়ী। বিশ্বব্যাপী ওষুধের রাসায়নিক উপাদান নিয়ে যতটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার পর অনুমোদন দেওয়া হয় প্রসাধনীর ক্ষেত্রে ঠিক ততটা নিয়মকানুন মানা বা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয় না। তবে এটা ঠিক যে, গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা কোনো প্রসাধন সামগ্রীর বাজারজাত করার অনুমোদন দিয়ে থাকে। কাজেই প্রসাধনসামগ্রী ব্যবহারের ফলে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকতে ব্যক্তিগত সচেতনতা বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। ত্বক ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন ব্যবহার করা প্রসাধনসামগ্রী তৈরিতে সাধারণত যেসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় এবং সেগুলো থেকে ক্যান্সার, ত্বকের অ্যালর্জি, শ্বাসকষ্ট, বুক ব্যথা, বমি, মাথা বাথা, ডায়রিয়া, হাড় ক্ষয়, স্নায়ু, লিভার ও কিডনি জটিলতাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত