আছে পদমর্যাদা নেই দায়িত্ববোধ

ইমন হাওলাদার

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মানুষ বন্যদশা থেকে সভ্যতার বিকাশের মাধ্যমে সভ্য জাতিসত্তা গড়ে তোলে। মানুষ পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকে সুন্দরভাবে পরিচালিত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে বর্তমান আধুনিক সমাজ। প্রাচীন সমাজে শক্তিশালী ও বুদ্ধিমত্তায় প্রখর পরিচয় দিতে পেরেছে বলেই তাকে দলপতি নির্বাচন করা হতো। তার তত্ত্বাবধানে সব কার্যক্রম পরিচালনা হতো। সবাই তাকে মেনে চলত। তিনিও তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সচেষ্ট থাকতেন। তিনি কখনো তার দায়িত্ববোধ এড়িয়ে যেতেন না। নিজ সম্প্রদায়ের মঙ্গল কামনায় মৃত্যু স্বীকার করতেও পিছ পা হতেন না। যার কারণে সবাই তার কাছে আনুগত্য প্রকাশ করত। যুগে যুগে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষমতা হস্তান্তর হতে থাকে। তবে কারো ক্ষমতাই স্থায়ী নয়। যুগে যুগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে শত শক্তিশালী সম্রাট, শাসক, রাজা, বাদশার সাম্রাজ্য। কেউ টিকে থাকতে পারেনি। এটা মূলত প্রকৃতির অমোঘ নিয়মের এই ধারা। কিন্তু তারপরও যেকেনো কিছুর বিলুপ্তির বা ধ্বংসের পেছনে মূলত দায়ী হচ্ছে নিজের দায়িত্ব কর্তব্য পালনে বিলম্ব করা। রাষ্ট্রকে সুন্দরভাবে পরিচালিত করার জন্য সব দেশে আছে বিভিন্ন পরিষদ, সেক্টর, মন্ত্রণালয়, যার অধিনে আছে দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য একাধিক দায়িত্ব। দেশের সর্বস্তরেই আছে বিভিন্ন পরিষদের আওতায়। দেশকে সুন্দরভাবে পরিচালিত করতে এদের দায়িত্বের শেষ নেই। কিন্তু অনেকেই তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে যথাযথভাবে সচেতন নয়। তাদের দায়িত্বের অবহেলার কারণে দুর্বিপাকে পড়তে হয় সাধারণ জনগণের। যাদের মঙ্গলের জন্য তাদের রাখা হয়েছে, তারা কোনো রকম সুযোগ-সুবিধা পায় না। সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে সুশীলসমাজ। ব্যাংকিং-ব্যবস্থা থেকে শুরু করে কৃষি অফিস, ভূমি মন্ত্রণালয়, মামলা-মোকদ্দমা, চিকিৎসা ক্ষেত্রে, সড়ক ও সেতু পরিবহণ মন্ত্রণালয়, চাকরির জন্য অফিস আদালতের দারে দারে ঘোরা- সবাই যেন বসে আছে পদমর্যাদা নিয়ে কারো যেন নেই কোনো দায়িত্ব। কিছু বলতে গেলে বলে আমি সরকারের চাকরি করি আপনার না। যে লোক প্রতিবাদ করল তার ফাইল হয়তো ডাস্টবিনে পড়ে রইল। কিছু কর্মচারী-কর্মকর্তা আছেন, যারা বাড়তি কিছু পাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেন। তারা মুখে বলেন না আর্থিক লেনদেনের কথা কিন্তু কাজে-কর্মে বুঝিয়ে দেন। তাদের কাছে কোনো কারণে যাওয়া হলে তারা একটা ফর্ম ধরিয়ে দিয়ে বলে পূরণ করে নিয়ে আসেন। কিছু একটা বুঝতে না পারলে তাদের কাছে নিয়ে গেলে বলে আপনি অমুক কর্মচারীর কাছে জান সে বুঝিয়ে দেবে। তার কাছে গেলে বলে তার কাজ আছে। সামান্য একটা বিষয় মানুষ নাই বুঝতে পারে, কিন্তু তাই নিয়ে তারা একাধিক কথা শুনিয়া দেন তাকে- বলে এইটুকুই বুঝেন না আপনি বাকি কাজ সম্পূর্ণ করবেন কীভাবে। বিভিন্নভাবে অপমান, অপদস্থ করে তাও বুঝিয়ে দেন না। অনেক ঘোরাঘুরির পর বলে অমুকের কাছে জান তাকে কিছু দিলে সে সুন্দরভাবে পূরণ করে দেব। প্রতিটি সেক্টরে এ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সাধারণ জনতাকে। একজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে নেয়া বক্তব্য- তিনি একটা ফাইল জমা দেন একটি সরকারি অফিসে কিছু কাজ করার জন্য। কিছুদিন পর যোগাযোগ করা হরে বলা হয়- স্যার আপনার ফাইলটা ওই যে আলমারির ওপর রাখা। ভুক্তভোগী বলেন স্যার আমার কাজটা কবে নাগাদ হবে। জবাবে স্যার বলেন, আপনার ফাইল তো আপেই আছে সমস্যা কী। পরে ভুক্তভোগী বলেন স্যার আমার কাজটা করে দিলে ভালো হতো, আমার খুব দরকার কাজটা। পরে অফিসার মহোদয় বলেন, আপনি বুঝেন না কীভাবে ফাইল আপ থেকে ডাউন করতে হয়! সরকারি মহলের কর্মকর্তা-কর্মচারীর এ ধরনের ব্যবহার কখনোই কাম্য নয়। প্রতি স্তরে বকশিশনামক মরণ ছুরির ব্যবস্থা, যা গলা না কাটলেও হৃদয় কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলছে সাধারণ জনতার। এই হচ্ছে আমাদের দেশের অবস্থা।

তাই প্রশাসনিক মহলের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি- এসব সমস্যা প্রতিকারে সবার একযোগে কাজ করা প্রয়োজন।

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

ইতিহাস বিভাগ (২০২০-২১)