নিম্নমানের মশার কয়েল

মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে দরিদ্র মানুষ

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ডেঙ্গু মশার কামড়ে চলতি মৌসুমে সাড়ে ছয় শতাধিক মানুষ মারা গেছে। ডেঙ্গু মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে দরিদ্র মানুষ কয়েলের ওপর নির্ভর করে থাকে। দিনে-রাতে মশা তাড়াতে মানুষ কয়েল ব্যবহার করে থাকে। অন্য বছরের তুলনায় চলতি বছর মশার কয়েলের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। সেই সুযোগে বাজার ছেয়ে গেছে নিম্নমানের অনুমোদনহীন নন-ব্র্যান্ডের কয়েলে। ফলে গরিব ও অসহায় মানুষ মশা তাড়াতে গিয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছে। এসব নিম্নমানের কয়েলে উচ্চমাত্রার রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে মশা দূরে থাকে আবার দামেও সস্তা। ফলে নন-ব্র্যান্ডের কয়েলের দাপড় এখন বাজারজুড়ে। নিম্নমানের এসব কয়েল জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বাহারি নামের এসব মশার কয়েল বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদিত ব্র্যান্ড নয়। তবে কোনো কোনোটি অনুমোদিত ব্র্যান্ড হলেও বাজারে ওই নামে নকল কয়েল মিলছে। ক্রেতারা কোনটা আসল বা নকল কয়েল তা সহজে বুঝতে পারছে না। কোনো কোনো কয়েলের প্যাকেটে বিএসটিআইয়ের লোগো সাঁটা থাকলেও সেগুলো আসলে বিএসটিআই অনুমোদিত নয়। এসব কয়েলের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বা কোনো বিক্রয় প্রতিনিধির খোঁজ নেই বিক্রেতার কাছে। কয়েল কারখানার লোক সাইকেলে করে এসে কয়েল দিয়ে যান। আগে কয়েল কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতারা জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে গুরুত্ব দিতেন। তবে এখন ডেঙ্গু আতঙ্কে শুধু মশা তাড়ানোর বিষয় নিয়েই ভাবছেন। ফলে অনুমোদনহীন নন-ব্র্যান্ডের কয়েলে ঝুঁকছেন তারা। নিম্নমানের এসব কয়েলে অতিমাত্রায় রাসায়নিক ব্যবহার হওয়ায় বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় অন্য বছরের তুলনায় কয়েলের বেচাকেনা বেড়েছে। নিম্নমানের কয়েলে অতিমাত্রায় রাসায়নিক ব্যবহার হওয়ায় বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। তবে দেশের সুপরিচিত কয়েলের ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রিও বেড়েছে। দেশের কয়েলের বাজারের বড় অংশই এখন নন-ব্র্যান্ডের দখলে। জানা গেছে, দেশে এখন কয়েলের বাজার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার। বিশাল এই বাজারের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি দখল নিম্নমানের কয়েলে। নকল ও নিম্নমানের কয়েলের বাজার বাড়ায় ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। এতে জনগণের মতো প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ভালো ব্র্যান্ডগুলো বাজার হারাচ্ছে। আবার ব্র্যান্ডের নামের হুবহু নকল কয়েল ওই ব্র্যান্ডের সুনাম ক্ষুণ্ণ করছে। মরটিন, এসিআই, গুডনাইট, ঈগল ও গ্লোবসহ কয়েকটি পরিচিত ব্র্যান্ডের নকল কয়েলও এখন অহরহ মিলছে বাজারে। ফলে প্রকৃত ব্র্যান্ডগুলোর বাজারে দখল কমছে। তাদের জায়গা দখলে নিচ্ছে নকল ও নিম্নমানের কয়েল। মশার কয়েলে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিতে হয়। সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো হাজার হাজার কয়েল তৈরির কারখানা থাকলেও বিএসটিআইয়ের মান সার্টিফিকেট আছে মাত্র ১২৫টি প্রতিষ্ঠানের। বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা জানান ‘অবৈধ কয়েল উৎপাদন-বিক্রি বন্ধে প্রতি সপ্তাহে ভ্রাম্যমাণ আদালত করা হলেও ব্র্যান্ডের নাম পাল্টে অন্য এলাকায় গিয়ে আবারো তারা একই কাজ করেন। কয়েলের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশার কয়েলে পারমেথ্রিন, বায়ো-অ্যালোথ্রিন, টেট্রাথ্রিন, ইমিপোথ্রিনের মতো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। কোনো পণ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় এসব ব্যবহার হলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও ফুসফুসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি দীর্ঘমেয়াদে কিডনি রোগ এবং ক্যান্সারেরও ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ‘এছাড়া কয়েলের ধোঁয়া থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনোঅক্সাইড বের হয়, যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও শিশুর বেশি ক্ষতি করে। গর্ভপাতের মতো ঘটনাও ঘটে। শুধু তাই নয়, একটি মশার কয়েল থেকে যে পরিমাণ ধোঁয়া বের হয়, তা একশ’টিরও বেশি সিগারেটের ক্ষতির সমান।’ তাই মশার কয়েল উৎপাদন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সচেতনমহল। অন্যথায় মানহীন মশার কয়েলে বাজার সয়লাব হয়ে গেলে সাধারণ মানুষকে তার খেসারত দিতে হবে।