ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এডিসি হারুনের বরখাস্তাদেশ

পুলিশ প্রশাসনের প্রশংসনীয় উদ্যোগ
এডিসি হারুনের বরখাস্তাদেশ

রাজধানীর শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের তিন কেন্দ্রীয় নেতাকে মারধরের ঘটনায় পুলিশের রমনা বিভাগ থেকে বদলি হওয়া অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত সোমবার বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি পুলিশ অধিদফতরে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। এর আগের দিন দুপুরে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এডিসি হারুনকে রমনা বিভাগ থেকে সরিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের দাঙ্গা দমন বা পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। একই দিন সন্ধ্যায় পুনরায় জানানো হয়, এডিসি হারুনকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে বদলি করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকসহ ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিচার দাবি করেন। ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতাদের অভিযোগ, শাহবাগ থানার ইন্সপেক্টরের (তদন্ত) কক্ষে (৯ সেপ্টেম্বর রাতে) মারধরে নেতৃত্ব দেন পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এডিসি হারুন অর রশিদ। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের অন্য নেতাকর্মীরা গিয়ে থানা থেকে আক্রান্ত নেতাদের উদ্ধার করেন। পুলিশের মারধরের শিকার ছাত্রলীগের তিন নেতা হলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান। তাদের মধ্যে একজনের কয়েকটি দাঁত তুলে ফেলতে হয়েছে।

এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দুই দিনের মধ্যে কাজ শেষ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে একটি জাতীয় দৈনিকে এডিসি হারুন ও তার পরিবারের সদস্যদের জামায়াত-বিএনপির রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। সে ব্যাপারেও তদন্তে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার মধ্য দিয়ে প্রশংসা অর্জন করেছেন। কেননা শুরু থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলে আসছিলেন পুলিশের যে পর্যায়ের সদস্য হোক না কেন অন্যায় করলে তাকে কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। পুলিশ প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি গ্রহণ করেছে। অপরাধের ধরন দেখে অল্প সময়ের মধ্যে বার বার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে কেবল ছাত্রলীগ নয়, এ দেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করেছে পুলিশ প্রশাসন। সাধারণ মানুষ মনে করে সরকারি পদ-পদবি, পোশাক এবং অস্ত্র ব্যবহার করে এডিসি হারুন যেভাবে একটি ব্যক্তিগত বিষয়কে সামনে এনেছেন, তারপক্ষে আইনের শাসন প্রতিপালন করা সম্ভব নয়। যিনি আবেগ, রাগ, ক্ষোভ বিরাগ কিংবা পরশ্রীকাতরা সংযত করতে না পেরে কেবল ক্ষমতার জোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিন ছাত্রকে নিজ বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় পেটাবেন।

সভ্য দেশে এটা কি করে সম্ভব। এছাড়া এই তিন ছাত্র ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নির্বাচিত নেতা। তাদের যদি এভাবে শারীরিকভাবে প্রহার করা হয় তাহলে সাধারণ মানুষ থানা পুলিশের কাছে গিয়ে কি ধরনের আইনি সহায়তা পাবে তা নিয়ে যখন সারা দেশের মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হলেন তখন তিনি রেহাই পাওয়ার সুযোগ হারালেন। পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা সাফ জানিয়ে দেন, ব্যক্তির দায় বাহিনী নেবে না। এই ধরনের আপসহীন মনোভাব যদি পুলিশ প্রশাসন পোষণ করে তা হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা আরো বেড়ে যাবে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে এমন চরিত্রের কর্মকর্তা থাকলে তাদের খুঁজে বের করে সংশোধন করার কোনো বিকল্প নেই। অন্যথায় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আর তার দায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর বর্তাবে। আর সেইসঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি খর্ব হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত