হাজারেও নেই ঢাবি-বুয়েট

পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

স্পেনের মাদ্রিদভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েবমেট্রিক্সের করা বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষ ১০০০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও নেই। ৩১ হাজার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে করা এ র‍্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান যৌথভাবে ১০৫১তম। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ( বুয়েট) অবস্থান ১৪২১তম। ওয়েবমেট্রিক্স বিশ্বের দুই শতাধিকেরও বেশি দেশের ৩১ হাজার উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে ‘বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাংকিং-২০২৩’ প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশ করেছে। র‍্যাংকিং অনুযায়ী, প্রথম ১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান না পেলেও দেশসেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই। র‍্যাংকিংয়ে ১১৯২তম অবস্থানে জায়গা পেয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, যা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অবস্থানের দিক দিয়ে দ্বিতীয়। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বুয়েট। র‍্যাংকিংয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বিশ্ব র‍্যাংকিং ১৪৭৬), পঞ্চম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (বিশ্ব র‍্যাংকিং ১৬৯৬), ষষ্ঠ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (বিশ্ব র‍্যাংকিং ২০১৮), সপ্তম ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিশ্ব র‍্যাংকিং ২০১৮), অষ্টম ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যাল (বিশ্ব র‍্যাংকিং ২০৭৬), নবম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বিশ্ব র‍্যাংকিং ২৩১৮), দশম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (বিশ্ব র‍্যাংকিং ২৩৫৪)। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ১৬৯৬তম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ২০৭৯তম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ৩০০০তম ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ৩১৯৩তম, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ৩২৪৫তম, আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৩৩৬৫তম, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব চট্টগ্রাম ৩৫৪৫তম, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ৩৬১৪তম ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক ৩৬২৪তম। বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষ ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড ছাড়া সবগুলোই যুক্তরাষ্ট্রের। র‍্যাংকিং অনুযায়ী বিশ্বে প্রথম স্থান পেয়েছেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি। দ্বিতীয় স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, তৃতীয় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, চতুর্থ ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলে, পঞ্চম ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান, ষষ্ঠ কর্নেল ইউনিভার্সিটি, সপ্তম ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন, অষ্টম কলোম্বিায় ইউনিভার্সিটি নিউইয়র্ক ও নবম ইউনিভার্সিটি অব পেনিনসিলভিয়া। ওয়েবমেট্রিক্স তাদের প্রকাশিত র‍্যাংকিং সম্পর্কে জানিয়েছে, র‍্যাংকিং তৈরিতে তারা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিখন পদ্ধতি, বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রভাব, নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা, সাম্প্রদায়িক সন্নিবেশ অর্থাৎ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত ভূমিকা বিবেচনা করে। এছাড়া প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটের কনটেন্ট ছাড়াও তাদের গবেষক এবং প্রবন্ধ বিবেচনায় নিয়ে এটি তৈরি করে ওয়েবমেট্রিক্স। সে ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের কনটেন্ট ৫০ শতাংশ, টপ সাইটেড গবেষকদের ১০ শতাংশ এবং টপ সাইটেড প্রবন্ধ ৪০ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে র‍্যাংকিং তৈরি করা হয়। এ খবরটি উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও আত্মসম্মানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই র‍্যাংকিংটি দেখে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একটা বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নেই, কোথায় ঘাটতি রয়েছে, সেই ঘাটতি কিভাবে পূরণ করা যাবে তা খুঁজে বের করতে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে বাস্তব ভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে। চিকিৎসাশাস্ত্রে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়েও আমাদের দেশের নাগরিকদের বিদেশের মাটিতে চিকিৎসাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। কেন যেন আমাদের দেশের পেশাজীবিরা বিদেশে গিয়ে তেমন একটা গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারছেননা। দেশের সেরা মেধাবী ছাত্ররা বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। তারা যে লেখাপড়া শেখেন তার স্বীকৃতি যদি বিদেশের মাটিতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে তা কারো জন্য কাঙ্খিত নয়। সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের পেছনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন শিক্ষক শিক্ষকতার মতো মহান পেশার চেয়ে রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চান। জীবনকে সমৃদ্ধ করতে চান। ছাত্রদের শিক্ষাদান করে তাদেরকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার মতো মনমানসিকতা পোষণ করেন এমন শিক্ষকের আজ বড়ই অভাব। আবার ছাত্ররাও যে নিজেদের উদ্যোগে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবে সে চেষ্টাও করা হচ্ছেনা। জ্ঞান অর্জনের পথ অন্বেষণ না করে তারা ভিন্ন ধারার দিকে মনোযোগী হচ্ছে। যার ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। তাই বিষয়টি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়ার কোন বিকল্প নেই। অন্যথায় আমরা জাতি হিসেবে পিছিয়ে পড়ব।