ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সমুন্নত হোক পেশাদারিত্ব

সতর্কতামূলক নির্দেশনা জারি করা জরুরি
সমুন্নত হোক পেশাদারিত্ব

সম্প্রতি প্রজাতন্ত্রের চারজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডে তাদের মধ্যে অপেশাদারিত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে অত্যন্ত স্পর্শকাতর অবস্থান থেকে সরকারি দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ তারা তাদের আচরণগত বিষয়ে তেমন একটা অবগত ছিলেন বলে কার্যত মনে হয় না। তা না হলে তারা এমন কর্মকাণ্ড কেন ঘটাবেন, যাতে করে তাদের নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তাদের ঘটনার দায় যদিও তাদের নিজেদের, তবু তারা যে প্রতিষ্ঠানের হয়ে সরকারি দায়িত্ব পালন করছেন, সেই প্রতিষ্ঠান বিব্রত হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। সেই সঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার অবতারণা করে, তারা সরকারের জন্য একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। প্রতিটি দপ্তরের একটি নিজস্ব বিধিবিধান রয়েছে এবং সেই বিধিবিধানের আলোকে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেন। তবে তাদের পেশাগত ক্ষমতা পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিষয়েও ওপর প্রভাব ফেললে সেটা হবে অনাকাঙ্ক্ষিত। ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রথম তিনজন কর্মকর্তা একান্ত পারিবারিক বিষয়ে ঘটনার অবতারণা করতে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। আর চতুর্থ সরকারি কর্মকর্তা অবিবেচনাপ্রসূত বক্তব্য দিয়ে বিতর্কিত হয়েছেন।

তিনি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন না থাকায় তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সতর্কতামূলক নির্দেশনা জারি করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, রাজধানীর শাহবাগ থানায় দুই ছাত্রলীগ নেতাকে নির্যাতন এবং বারডেম হাসপাতালের ঘটনা অনুসন্ধানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেয়ার সময় বাড়ানো হয়েছে। অভিযুক্ত রমনা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিন ও রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার মাধ্যমে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত বারডেম হাসপাতালের ইটিটি বিভাগে। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ, ছাত্রলীগের দুই নেতাকে থানায় নিয়ে আসার পর পরিদর্শকের (তদন্ত) রুমে কারা ছিলেন এবং নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে কারা কারা জড়িত, সেসব বিষয়ক খতিয়ে দেখছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে সব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে গুরুত্ব সহকারে। প্রাথমিকভাবে অপেশাদার আচরণ ও সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে অপেশাদার আচরণের অভিযোগে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ এবং শাহবাগ থানার সাবেক অপারেশনস পরিদর্শক গোলাম মোস্তফাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নির্যাতনের ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. ইমরান আহমেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- জেলা প্রশাসকরা সাধারণত রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করে থাকেন এবং নির্বাচনের সময় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেন। এ অবস্থায় সরকার, গণতন্ত্র, নির্বাচনব্যবস্থা এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে ঘটনার সত্যতা-যাচাই সাপেক্ষে ডিসি মো. ইমরান আহমেদকে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনোভাবে নির্বাচনি দায়িত্ব দেওয়া থেকে বিরত রাখা সমীচীন হবে। একই সঙ্গে সব জেলা প্রশাসককে এ ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকতে সতর্কবার্তা দেওয়া প্রয়োজন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠিতে জানিয়েছে ইসি। চিঠিতে বলা হয়েছে- সংবিধান অনুযায়ী এ বিষয়টি সুস্পষ্ট। নির্বাচন বিষয়ে কমিশনের এখতিয়ার শুধু তফসিল ঘোষণার পর নয়, সব সময় এ দায়িত্ব বিদ্যমান থাকে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত