ভয়াবহ পর্যায়ে বায়ুদূষণ

নিতে হবে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি

প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দেশে বায়ুদূষণ এখন ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে। এর ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের বেশির ভাগ মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য দিন দিন ভেঙে পড়ছে। বায়ুদূষণের কারণে দেশের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই দূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন থাকলেও মাঠপর্যায়ে তার বাস্তবায়নে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর বায়ুদূষণ বিধিমালা প্রণয়নের কাজে নিয়োজিত ১৩টি মন্ত্রণালয় ও ৩৫টি সংস্থা থাকলেও তাদের নিষ্ক্রীয়তায় বায়ুদূষণ দিন দিন বাড়ছে। যেসব প্রতিষ্ঠান যথাসময়ে চাহিদা অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন না করায়, একতরফাভাবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ওপর চাপ পড়ছে। সে কারণে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সব সংস্থাকে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ‘জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ বারবার বলে আসছে শিল্পোন্নত দেশগুলো বায়ুদূষণের জন্য দায়ী হলেও বালাদেশ রয়েছে ভিকটিম তালিকার দেশে। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের মানুষ যদি নিজেরাই দূষণ নিয়ন্ত্রণে নিজেরা নিয়ম না মানে, তাহলে বাংলাদেশের বক্তব্য হবে পরস্পর বিরোধী।

বায়ুদূষণের বিষয়টি জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আমাদের এখন নির্ধারণ করা দরকার, আমাদের নগরে কতটুকু সবুজ রাখতে হবে, কতটুকু জলাভূমি রাখব। সবুজায়ন ও জলাভূমির প্রশ্নে কোনো ধরনের আপস করা যাবে না। বায়ুদূষণে আমাদের সবচেয়ে নিরাপদ শহরও বিশ্বমানের চেয়ে ৯ গুণ বেশি দূষিত। আমাদের এখন গবেষণা করা দরকার অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে মানুষের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি কত বাড়ছে। স্বাস্থ্যগত ক্ষতি আমাদের উন্নয়ন পক্রিয়াকে কতটুকু বাধাগ্রস্ত করছে। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের বর্তমান প্রজন্ম সার্বক্ষণিক একটা দূষিত পরিবেশে বড় হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিবেশ দূষণ রোধে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে কোনো উপায়ে আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হবে। বায়ুমান উন্নয়ন না করলে ভবিষ্যতে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। বায়ুমান উন্নয়নে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুৎ শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকারক গ্রিনহাউস গ্যাস ও বায়ুর দূষক নিঃসরণ ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ক্ষমতা। যার ফলশ্রুতিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবও তুলনামূলকভাবে কমে আসবে। ‘বাতাস ছাড়া আমরা এক সেকেন্ডও বাঁচব না। বেশি বেশি করে জলবায়ুর বিষয়ক আলোচনা ও সেমিনারের আয়োজন করে মানুষকে সচেতন করতে হবে। আমাদের দেশে এখনো যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেনি। এটা একটা মারাত্মক সমস্যা।

গণপরিবহনব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে না পারার কারণে প্রতি নিয়ত বায়ুদূষণ হচ্ছে। প্রতিদিন যানবাহন থেকে মাত্রা অতিরিক্ত কালো ধোঁয়া বের হওয়ার কারণে বাতাস দূষিত হয়ে পড়ছে। জাতীয় সংসদে অন্তত একদিন পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করা হলে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা নিজেরা সচেতন হবেন এবং তারা তাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে মানুষকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন করতে পারবেন। বায়ুদূষণ রোধে প্রকৃতপক্ষে আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তির বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। মানুষের প্রধান প্রধান রোগের কারণ হচ্ছে বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণের কারণে শিশু, নারী, গর্ভবতী এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য রোগীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বায়ুদূষণ একটি স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থায় পৌঁছেছে। তাই এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বায়ুদুষণ থেকে রক্ষা পেতে সব সময় মুখে মাস্ক পরে থাকা সম্ভব নয়। মাস্ক পড়ার কারণে অনায়াসে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া সব সময় মাস্ক পড়া বিড়ম্বনার এবং এখানে আর্থিক বিষয়টাও জড়িত। মানুষ ময়লা মাস্ক যেখানে-সেখানে ফেলে দেয়ায় তা পচে নতুন করে পরিবেশের ক্ষতি করে। সে কারণে বায়ুদূষণ ও পরিবেশ উন্নয়নে আমাদের অধিক বেশি সচেতন হতে হবে। শুধু বর্তমান প্রজন্মের জন্য নয়, আগামী প্রজন্মের বসবাসের উপযোগী একটি ভূ-মন্ডল গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।